আজ ২৮ সেপ্টেম্বর, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার ৭৬তম জন্মদিন। সহজ-সারল্যে ভরা তাঁর ব্যক্তিগত জীবন। পোশাকে-আশাকে, জীবনযাত্রায় কোথাও কোনো ধরনের বিলাসিতা বা কৃত্রিমতার ছাপ নেই। এ যেন পিতার মতোই বাংলার মাঠঘাট থেকে উঠে আসা বাংলার মেয়ে, অন্যভাবে বললে ’৭৫-পরবর্তী বাংলাদেশে একক নেতা, যিনি সত্যিকার অর্থেই বাঙালির আমজনতার অতি আপনজন। তাঁর সংগ্রামমুখর জীবন বাংলাদেশেরও উত্থান-পতনের ধারাবাহিতার ইতিহাস। অথচ জননেত্রী শেখ হাসিনার এই কর্মময় জীবন কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না, ছিল কণ্টকাকীর্ণ। মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস তিনি গৃহবন্দী থেকেছেন। সামরিক স্বৈরশাসনামলেও বেশ কয়েকবার তাঁকে কারা নির্যাতন ভোগ ও গৃহবন্দী থাকতে হয়েছে। বারবার তাঁর জীবনের ঝুঁকি এসেছে। অন্তত ২০ বার তাঁকে হত্যার অপচেষ্টা করা হয়েছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়েও তিনি অসীম সাহসে তাঁর লক্ষ্য অর্জনে থেকেছেন অবিচল। মেধা-মনন, সততা, কঠোর পরিশ্রম, সাহস, ধৈর্য, দেশপ্রেম ও ত্যাগের আদর্শে গড়ে উঠেছে তাঁর আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব।
মানবতার মা শেখ হাসিনা এ বছর পা রাখবেন ৭৬-এ। দীর্ঘ ও বন্ধুর পথপরিক্রমায় তাঁর সফল ও গতিশীল নেতৃত্বে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ। স্বাধীনতার পর এই বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলে কটাক্ষ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। এখন মার্কিন মদদপুষ্ট বিশ্বব্যাংকসহ মোড়লদের চ্যালেঞ্জ করছে বাংলাদেশ। স্বাধীনতার মাত্র ৫১ বছরে এই পরিবর্তন বাংলাদেশের। আমরা মনে করি, এই বদলে যাওয়া বাংলাদেশের যে অগ্রগতি তা দেশরত্ন শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্বের জন্যই সম্ভব হয়েছে।
১৯৮১ সালে ভারতে নির্বাসিত থাকাকালে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা। দায়িত্ব পাওয়ার পর ১৭ মে এক বর্ষণমুখর দিনে স্বদেশের মাটিতে পা রাখেন বিচক্ষণ এই নেতা। কিন্তু দেশে ফিরেই এক অভিনব পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হলো তাঁকে। ৩০ মে ১৯৮১ সালে স্বৈরশাসক জিয়া নিহত হলেন সেনা বিদ্রোহীদের হাতে। দেশের মাটিতে ফিরে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার অবকাশ পাওয়ার আগেই এই অভিনব ঘটনা, যা তাঁর নেতৃত্বকে শুরুতেই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড় করায়। কিন্তু তিনি এই কঠিন পরিস্থিতি উতরে যান অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে।
বাংলাদেশে তিনি এসেছিলেন একজন নিঃস্ব ব্যক্তি হিসেবে, অভিভাবকহীন। আজ তিনিই লাখো-কোটি নিঃস্ব মানুষের ভরসাস্থল এবং কোটি অসহায় মানুষের অভিভাবক। আওয়ামী লীগ সভাপতি হওয়া সত্ত্বেও তিনি সেদিন ছিলেন একজন কর্মীমাত্র। আর আজ তিনি একজন নেতাই শুধু নন, একজন সফল রাষ্ট্রনায়কও বটে। কর্মী থেকে রাষ্ট্রনায়কে উত্তরণের এই পথপরিক্রমায় স্নেহময়ী এই জননী একজন দৃঢ়চেতা সাহসী সেনাপতি হিসেবে নেতৃত্ব দিয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে, বাংলাদেশকে।
জননেত্রী শেখ হাসিনার ৭৬তম জন্মদিন পদার্পণের বছর আমরা উদযাপন করেছি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের সুবর্ণজয়ন্তী। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি মৃত্যুঞ্জয়ী বঙ্গবন্ধু প্রত্যাবর্তন করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশে। পূর্ণতা পেয়েছিল আমাদের বিজয়। বাংলাদেশ এখন দারিদ্র্যসীমা অতিক্রম করে উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশ। বর্তমানে আমরা এমডিজি অর্জন করে এসডিজি বাস্তবায়নের পথে। ডিজিটালাইজেশনে বাংলাদেশের অগ্রগতি বিশ্বে উদাহরণ সৃষ্টি করছে। বাঙালির মুক্তির সনদ ৬ দফার পথ ধরে স্বাধীন বাংলাদেশ আজ অগ্রসরমান অর্থনীতির ক্ষেত্রে বিশ্বে অনুকরণীয়। শুধু তাই নয়, মানবাধিকার, আইনের শাসনসহ সব ক্ষেত্রেই ক্রমেই এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। জাতির পিতার নেতৃত্বে এক দিন বাঙালির মর্যাদা বিশ্বময় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, সময়ের পরিক্রমায় তাঁরই কন্যা পুরো বিশ্বে বাংলাদেশকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। তাঁর জয় হোক। জয় শেখ হাসিনা। জন্মদিনে নিরন্তর শুভেচ্ছা।