জলাতঙ্ক : টিকায় শতভাগ মৃত্যুরোধ সম্ভব

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রতীকী ছবি

জলাতঙ্ক মরণব্যাধি, যা প্রাণী থেকে মানুষে ও অন্য প্রাণীতে সংক্রমিত হতে পারে। কুকুর, বিড়াল, বানর, বেজি, শিয়ালের কামড় বা আঁচড়ে এ রোগ সংক্রমিত হয়। এই রোগে বিশ্বে বছরে ৫৯ হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটে।

এ বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং প্রতিরোধ ও নির্মূলের লক্ষ্যে ২০০৭ সাল থেকে বিশ্ব জলাতঙ্ক দিবস পালিত হয়ে আসছে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘জলাতঙ্ক : মৃত্যু আর নয়, সবার সঙ্গে সমন্বয়’। এ উপলক্ষে সরকার, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও দেশীয় সংগঠনের পক্ষ থেকে কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার (সিডিসি) জুনোটিক ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রাম জাতীয়, বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে র‌্যালি, সেমিনার, মুক্ত আলোচনা, জনসচেতনমূলক কার্যক্রমসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান করবে। জনসচেতনতা বাড়াতে লিফলেট ও ফেস্টুন বিতরণ, জনবার্তা প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

universel cardiac hospital

সিডিসি সূত্র জানিয়েছে, দেশে চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত ৯১ হাজার ৬১০টি কুকুরকে টিকা দেওয়া হয়েছে। একই সময়ে ২ লাখ ৯৯ হাজার ৯৮৯ জনকে জলাতঙ্ক প্রতিরোধে টিকা দেওয়া হয়েছে। এ সময় জলাতঙ্কে আক্রান্ত ২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। ২০২১ সালে ৪ লাখ ১৩ হাজার ৮২৭টি কুকুরকে টিকা দেওয়া হয়েছে। ২ লাখ ৭৮ হাজার ৬৬৩ জনকে টিকা দেওয়া হয়। ওই বছর ৪০ জনের মৃত্যু হয়।

মহাখালী সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মোহাম্মাদ মিজানুর রহমান বলেন, জলাতঙ্ক ভয়ংকর সংক্রামক রোগ; যার কোনো চিকিৎসা আবিস্কৃৃত হয়নি এবং মৃত্যুই আক্রান্ত রোগীর অনিবার্য পরিণতি। প্রধানত কুকুর থেকে (৯৫ শতাংশের বেশি) জলাতঙ্ক রোগের সংক্রমণ ঘটে। শিয়াল, বিড়াল, বেজি, বানর এমনকি আক্রান্ত গবাদি পশু থেকেও এ রোগ মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীতে সংক্রমিত হতে পারে। জলাতঙ্ক বিপজ্জনক হলেও এটি শতভাগ প্রতিরোধযোগ্য।

তিনি বলেন, কুকুর বা সন্দেহজনক জলাতঙ্কগ্রস্ত প্রাণী দ্বারা আক্রান্তের পর দেহে সৃষ্ট ক্ষতস্থান যথাশীঘ্র ক্ষারযুক্ত সাবান ও প্রবহমান পানি দিয়ে ১৫ মিনিট ধৌত করা হলে সেখানে নিপতিত লালা বা রেবিস ভাইরাস নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। সহজ এ প্রযুক্তি প্রয়োগ করে প্রায় ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে এ ভয়ংকর ব্যাধি প্রতিরোধ করা সম্ভব হতে পারে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিডিসির জুনোটিক ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রামের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. শ.ম. গোলাম কায়ছার বলেন, সরকার ২০১০ সাল থেকে জলাতঙ্ক নিয়ন্ত্রণকে গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি হিসেবে গ্রহণ করেছে। জলাতঙ্ক রোগ নিয়ন্ত্রণ জাতীয় কৌশলপত্র প্রস্তুত করে ২০২২ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে জলাতঙ্ক রোগমুক্ত করার অঙ্গীকার নিয়ে তা বাস্তবায়নে রোডম্যাপ তৈরি করা হয়েছে।

তিনি বলেন, সারাদেশে তিন শতাধিক হাসপাতালে জলাতঙ্ক নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র পরিচালিত হচ্ছে। এ ছাড়া রাজধানীর মহাখালীতে সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল, ৫টি সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং কামরাঙ্গীরচরে ৩১ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে জলাতঙ্কের আধুনিক চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এসব কেন্দ্রে কুকুর বা অন্যান্য প্রাণীর কামড় বা আঁচড়ের আধুনিক চিকিৎসার পাশাপাশি বিনামূল্যে জলাতঙ্ক প্রতিরোধী টিকা ও কামড়ের ধরন অনুযায়ী আরআইজি ভ্যাকসিন প্রদান করা হচ্ছে।

শেয়ার করুন