স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) একটি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ও অত্যাধুনিক সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমান সরকারের সাহসী পদক্ষেপে ‘বর্ডার রিং রোড প্রকল্পে’র কাজ অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে এগিয়ে চলছে।
বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার বায়তুল ইজ্জতে বিজিবির ঐতিহ্যবাহী প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড কলেজের (বিজিটিসিএন্ডসি) প্যারেড গ্রাউন্ডে ৯৮তম রিক্রুট ব্যাচ নবীন সৈনিকদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সাংগঠনিক কাঠামোয় ব্যাপক পরিবর্তন এনে বিজিবি আজ একটি ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে জল, স্থল ও আকাশপথে দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনে সক্ষম হয়েছে। এছাড়াও স্মার্ট বর্ডার ম্যানেজমেন্টের অংশ হিসেবে সীমান্তে নতুন বিওপি, বিএসপি নির্মাণসহ অত্যাধুনিক সার্ভেইলেন্স ইকুইপমেন্ট স্থাপন, আধুনিক অ্যান্টি ট্যাংক গাইডেড উইপন, এটিভি ও অত্যাধুনিক এপিসি, ভেহিক্যাল স্ক্যানার ও দ্রুতগামী জলযান সংযোজন করা হয়েছে। বিজিবির এ অগ্রযাত্রায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সবসময় আপনাদের পাশে আছে এবং থাকবে।
নবীন সৈনিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, শৃঙ্খলা হচ্ছে সৈনিকের মূল পরিচিতি। আদেশ ও কর্তব্য পালনে যে কখনো পিছপা হয় না সে-ই প্রকৃত সৈনিক। সততা, বুদ্ধিমত্তা, নির্ভরযোগ্যতা, আনুগত্য, তেজ ও উদ্দীপনা একটি বাহিনীর শৃঙ্খলা ও পেশাগত দক্ষতার মাপকাঠি। নবীন সৈনিকরা এসব গুণাবলির প্রতিফলন ঘটিয়ে বাহিনীর ঐতিহ্যকে সমুন্নত রাখবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
একই সঙ্গে তিনি বিজিবির চারটি মূলনীতি-মনোবল, ভ্রাতৃত্ববোধ, শৃঙ্খলা ও দক্ষতায় উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত হয়ে ওপর অর্পিত যে কোনো দায়িত্ব সুশৃঙ্খল ও সুচারুরূপে পালন করে দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা রক্ষার সুমহান দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ১৯৭৪ সালের ৫ ডিসেম্বর তৎকালীন বিডিআরের তৃতীয় ব্যাচের সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান কর্তৃক প্রদত্ত চোরাচালান বিরোধী ও প্রেষণামূলক বক্তব্যের কথা স্মরণ করে চোরাচালান রোধে নবীন সৈনিকদের পেশাগত দক্ষতা অর্জনসহ ব্যক্তিগতভাবে সুদৃঢ়, সুশৃঙ্খল, নির্ভীক ও নির্লোভ চরিত্রের অধিকারী হয়ে নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে সবর্দা সচেষ্ট থাকার আহ্বান জানান- উল্লেখ করেন মন্ত্রী।
তিনি বিজিবির নবীন সৈনিকদের প্রদর্শিত তেজোদীপ্ত কুচকাওয়াজের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন এবং নবীন সৈনিকদের নতুন জীবনে পদার্পণের শুভলগ্নে তাদের স্বাগত জানান।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, কিংবদন্তি মহানায়ক বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া এ বাহিনী তারই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী দিকনির্দেশনায় আজ একটি সুসংগঠিত, চৌকস, সুশৃঙ্খল ও পেশাদার বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিজিবিকে একটি অত্যাধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘মাদক পাচারকারীদের কোনো জাত নেই, ধর্ম নেই। তারা মানুষ নামের নরপশু। তারা এদেশের সম্পদকে বিদেশে চালান দেয় সামান্য অর্থের লোভে’- বঙ্গবন্ধুর এ বক্তব্যের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে সীমান্তে চোরাচালান রোধে আপনাদের অর্জন করতে হবে পেশাগত দক্ষতা এবং ব্যক্তিগতভাবে হতে হবে সুশৃঙ্খল। বিভিন্ন প্রতিকূলতার মাঝেও থাকতে হবে সুদৃঢ়, নির্লোভ ও নির্ভীক। লোভ লালসার ঊর্ধ্বে থেকে নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে সর্বদা সচেষ্ট থাকতে হবে।
আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, প্রিয় নারী সৈনিকরা, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার মহান দায়িত্ব পালনে পুরুষের পাশাপাশি নারীদেরও সমান ভূমিকা রাখতে হবে। মনে রাখবেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে মহিয়সী নারীদের অংশগ্রহণ, অবদান ও আত্মত্যাগ অবিস্মরণীয়। আজ নারীরা বিভিন্ন অঙ্গনে যথাযথ যোগ্যতা ও কর্মদক্ষতার স্বাক্ষর রাখছেন। আজ আপনারা দেশমাতৃকার স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় দৃপ্ত শপথ নিয়ে সৈনিক জীবনে প্রবেশ করতে যাচ্ছেন। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আপনারা বিজিবির সার্বিক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় আরও গতিশীল ভূমিকা রাখাসহ বাহিনীর সুনাম-সুখ্যাতি বৃদ্ধিতে সততা, নিষ্ঠা ও দক্ষতার সঙ্গে নিরলসভাবে কাজ করবেন।
তিনি বলেন, ৯৮তম রিক্রুট ব্যাচের সদস্যদের সফলভাবে তাদের প্রশিক্ষণ শেষ করার জন্য অভিনন্দন জানাচ্ছি। বিশেষ করে সব বিষয়ে সেরা নবীন সৈনিক হিসেবে রিক্রুট বক্ষ নম্বর ৩২০ মো. আনোয়ার হোসেন প্রথম স্থান অর্জন করায় তাকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। এছাড়াও চুয়াডাঙ্গা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে পরিচালিত রিক্রুট প্রশিক্ষণে সব বিষয়ে সেরা নবীন সৈনিক রিক্রুট বক্ষ নম্বর ৮৫৫ মো. মাসুদ রানা প্রথম স্থান অর্জন করায় তাকেও আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।
৯৮তম রিক্রুট ব্যাচের মৌলিক প্রশিক্ষণ গত ১৭ এপ্রিল ২০২২ তারিখে বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার আ্যন্ড কলেজ (বিজিটিসিএন্ডসি) ও চুয়াডাঙ্গা ব্যাটালিয়নে (৬ বিজিবি) শুরু হয়। উভয় প্রশিক্ষণ ভেন্যুতে মোট ৮৪৯ জন রিক্রুটের মধ্যে ৮০৩ জন পুরুষ এবং ৪৬ জন নারী রিক্রুট মৌলিক প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেছেন। দীর্ঘ ২৪ সপ্তাহের অত্যন্ত কঠোর ও কষ্টসাধ্য এ প্রশিক্ষণ সফলভাবে শেষ করে আজ আনুষ্ঠানিক শপথগ্রহণ ও সমাপনী কুচকাওয়াজের মধ্য দিয়ে তাদের সৈনিক জীবনের শুভ সূচনা হলো।