মশালের আলোয় সাফজয়ী পাহাড়ের পাঁচ নারী ফুটবলারকে বরণ করে নিয়েছে এলাকাবাসী। বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাতে রাঙ্গামাটির কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের মগাছড়ি এলাকায় সাফ জয়ী খেলোয়াড় ঋতুপর্ণা চাকমার বাড়িতে যাওয়ার পথটিকে মশাল দিয়ে সাজিয়ে তাদের বরণ করে নেওয়া হয়।
রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে ঋতুপর্ণা চাকমার বাড়ির দূরত্ব প্রায় তিন কিলোমিটার। এই দীর্ঘ পথটিকে মশালের আলোয় রাঙিয়ে তাদের বরণ করা হয়।
রাত পৌনে ১০টার দিকে কাউখালীর ঘাগড়া ইউনিয়নের মগাছড়ি এলাকায় পৌছায় সাফজয়ী ফুটবলারদের বহনকারী মাইক্রোবাস। গাড়ি থেকে নামার পর ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত করা হয় তাদের। এলাকাবাসী ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে তারা ঋতুপর্ণা চাকমার বাড়ির দিকে রওনা হন।
ঋতুপর্ণার সঙ্গে ছিলেন পাহাড়ের আরও চার কৃতি ফুটবলার রুপনা চাকমা, মনিকা চাকমা, আনাই মগিনী ও আনুচিং মগিনী। তাদের শুভেচ্ছা জানান তাদের ছোটবেলার শিক্ষক বীরসেন তঞ্চঙ্গ্যা। শুভেচ্ছা জানাতে আরও প্রায় দুই শতাধিক গ্রামবাসী উপস্থিত ছিলেন।
ঋতুপর্ণা-রুপনাদের ছোটবেলার শিক্ষক বীরসেন তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, আজ অনেকদিন পর ওদের সঙ্গে আবার দেখা হলো। আমি খুবই আনন্দিত ও গর্বিত। ওদের সঙ্গে আমার পথচলার শুরুটা হয়েছিল বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ফুটবল টুর্নামেন্টে। তখন আমি ওদের প্রাইমারি স্কুলে ছিলাম। আজ আমার শিষ্যরা দেশের জন্য এতটা সুনাম বয়ে আনতে পেরেছে, আমার খুবই ভালো লাগছে। তাদের জন্য আমি গর্ববোধ করি।
ঋতুপর্ণার গ্রামের বাসিন্দা সজল চাকমা বলেন, ঋতুপর্ণা আমাদের পাহাড় তথা সারাদেশের গর্ব। তার এই অসামান্য অর্জনের জন্য আজ আমাদের গ্রামের নাম উজ্জ্বল হয়েছে। তাই আমরা তাকেসহ বাকি ফুটবলারদের ফুল দিয়ে ও মশাল জ্বালিয়ে বরণ করছি।
ঋতুপর্ণা চাকমা বলেন, আজ অনেকদিন পর বাড়ি আসলাম। আমার গ্রামের বাসিন্দারা আমাদের এভাবে বরণ করে নিবে আমরা কল্পনাও করতে পারিনি। অসম্ভব ভালোলাগা কাজ করছে। আমি আমার সকল টিমমেটদের পক্ষ থেকে তাদের কৃতজ্ঞতা জানাই।
পার্বত্য জেলার পাঁচ ফুটবলারদের মধ্যে রুপনা ও ঋতুপর্ণা চাকমার বাড়ি রাঙ্গামাটিতে হলেও মনিকা, আনাই ও আনুচিংয়ের বাড়ি খাগড়াছড়ি জেলায়। তবে তারা সবাই রাঙ্গামাটি ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন।
আনাই মগিনী বলেন, আমার বাড়ি খাগড়াছড়িতে। তবে আমার শৈশব কেটেছে ঘাগড়া স্কুলে। আমি ফুটবলও শিখেছি এখানকার স্যারের কাছে এই স্কুলের মাঠে। আমার যখনই সুযোগ হতো আমি এখানে চলে আসার চেষ্টা করতাম। স্যারদের সঙ্গে সময় কাটাতে আমার খুব ভালো লাগে। আজ আমরা যারা জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পেয়েছি, সবটাই আমাদের স্যারের জন্য। আমরা সারাজীবন স্যারের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকব।
ফুলেল শুভেচ্ছা গ্রহণ শেষে মশাল জ্বালানো পথ ধরে তারা ঋতুপর্ণা চাকমার বাড়ির দিকে রওনা হন। বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসন এবং রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ, রাঙ্গামাটি জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে রাঙ্গামাটি চিং হ্লা মারী স্টেডিয়ামে সংবর্ধনা দেওয়া হবে পাঁচ নারী ফুটবলারকে।