খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার পাহাড়গুলোতে এ বছর জুমচাষের পরিমাণ কমেছে। বীজ বপন ও ফসল আসার আগে বৃষ্টি না হওয়ায় ফসলের উৎপাদনও কম হয়েছে। এর ফলে জুমচাষিদের মুখে এবার হাসি নেই।
কৃষি বিভাগ থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, চলতি বছর দীঘিনালায় ৩৫০ হেক্টর পাহাড়ে জুমচাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। কিন্তু এ বছর ৩০৫ হেক্টর পাহাড়ে জুমচাষ হয়েছে। গত বছর ৩৫০ হেক্টর পাহাড়ে জুমচাষে ৮৪০ মেট্রিক টন ধান উৎপাদিত হয়েছিল। এ বছর চাষ করা ৩০৫ হেক্টর পাহাড়ে ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮২৩ মেট্রিক টন। ফলন কম হওয়ায় ধান উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে ৬০০ মেট্রিক টন।
ঐতিহ্যবাহী জুমে পাহাড়িরা ফাল্গুন-চৈত্র মাসে আগুনে জুম পুড়িয়ে বীজ বপনের জন্য পাহাড় তৈরি করে রাখেন। বৈশাখ মাসে বৃষ্টি হলে জুমের বীজ বপন শুরু হয়। কিন্তু এ বছর বৃষ্টি না হওয়ায় জৈষ্ঠ মাসে বীজ বপন করতে হয়েছে। বীজ বপনের পর শ্রাবণ ও ভাদ্র মাসে ফসল তোলা শুরু করেন তারা। কিন্তু এক মাস পর বীজ বপন করেও বৃষ্টির দেখা পাননি চাষিরা। এর ফলে জুমের ফসল খুব কম উৎপাদিত হয়েছে।
সরেজমিনে উপজেলার মিলন কার্বারিপাড়ার বিভিন্ন পাহাড়ে গিয়ে দেখা যায়, ফসলের উৎপাদন কম হওয়ায় চাষিদের মুখে হাসি নেই। মলিন মুখে জুমচাষিরা পাকা ধান কাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। জুমচাষি নবীন ত্রিপুরা প্রথম আলোকে বলেন, গত বছর দেড় একর সমান পাহাড়ে জুমচাষ করে ৪৮ মণ ধান পেয়েছিলেন। আর এ বছর ১ একর সমান পাহাড়ে জুমচাষ করে ধান পেয়েছেন মাত্র ১৩ মণ। জুমে অন্যান্য ফলনও গত বছরের তুলনায় অনেক কম।
জুমচাষি মুলেন্দ্র লাল ত্রিপুরা বলেন, সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় এ বছর জুমের ফলন খুব কম পেয়েছেন তিনি। ধানসহ সবকিছুতে একেবারেই ফলন কম হয়েছে। অনেক শাকসবজির গাছও মরে গেছে।
জুমচাষি হিথিকা ও হতেন্দ্র লাল ত্রিপুরা বলেন, মিলন কার্বারিপাড়ার ৫০টি পরিবার জুমচাষের ওপর নির্ভরশীল। আগে জুমের ধানে তাদের সারা বছর চলে যেত। এ বছর যে ধান উৎপাদিত হয়েছে, তা দিয়ে ছয় মাসও চলবে না। গত বছরের তুলনায় এ বছর ফলন খুবই কম হয়েছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. নাঈম হোসেন বলেন, এ বছর জুমে বীজ বপন থেকে শুরু করে ফল ধরা পর্যন্ত বৃষ্টি খুবই কম হয়েছে। পাহাড়ে সেচ দেওয়া সম্ভব নয় বলে জুমে বৃষ্টিই একমাত্র ভরসা। এ বছর সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় জুমে ফসল উৎপাদন গত বছরের তুলনায় কম হয়েছে।