‘ডিজিটাল অজ্ঞতায়’ স্মার্টফোন ও মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারে পিছিয়ে বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

মোবাইল ফোন থেকে করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা

দেশের যেসব মানুষ মুঠোফোন ব্যবহার করেন, তাদের অর্ধেকের বেশির স্মার্টফোন নেই। তাদের মধ্যে অনেকে মুঠোফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন না। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) গত জুলাই মাস পর্যন্ত হিসাবে, দেশে মুঠোফোনের সিম ব্যবহার হচ্ছে ১৮ কোটি ৪০ লাখ ৪০ হাজার। এর মধ্যে মুঠোফোন ইন্টারনেট ব্যবহার হচ্ছে ১১ কোটি ৬৪ লাখ সংযোগে। কেউ ৯০ দিনে একবার ইন্টারনেট ব্যবহার করলে তাকে ইন্টারনেট গ্রাহক হিসেবে বিবেচনা করে বিটিআরসি।

মুঠোফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর বৈশ্বিক সংগঠন জিএসএমএ–এর ২০২১ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে যারা মুঠোফোন ব্যবহার করেন, তাদের মধ্যে স্মার্টফোন ব্যবহারকারী ৪১ শতাংশ। এ ছাড়া সংগঠনটির ২০২২ সালের মোবাইল জেন্ডার গ্যাপ প্রতিবেদনে দেশের নারী ও পুরুষ গ্রাহকদের মধ্যে স্মার্টফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে বড় ব্যবধানের বিষয়টি উঠে আসে। সেই প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, বাংলাদেশে যারা স্মার্টফোন ব্যবহার করেন, তাদের মধ্যে ৩৯ শতাংশ পুরুষ এবং ২১ শতাংশ নারী।

universel cardiac hospital

স্মার্টফোন ব্যবহারে ভারত, পাকিস্তান, নেপাল ও শ্রীলঙ্কার চেয়ে বাংলাদেশে এগিয়ে আছে। তবে প্রতিবেশী এসব দেশের তুলনায় বাংলাদেশে একটি মুঠোফোন কিনতে বেশি কর দিতে হয়। এতে সাধারণ মানুষের স্মার্টফোন কেনার হারও কমছে। ২০২২–২৩ অর্থবছরে ব্যবসায়িক পর্যায়ে মুঠোফোনের ওপর ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করে সরকার। সেই ভ্যাট ক্রেতাদের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে। এই ভ্যাট আরোপের পর দেশে স্মার্টফোন বিক্রি ১০ থেকে ১৫ শতাংশ হারে কমেছে।

২০৩০ সালের মধ্যে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব ও কার্যকর নীতি প্রণয়নে পরামর্শ দেওয়ার মাধ্যমে ডিজিটাল বিভাজন (ডিজিটাল ডিভাইড) কমিয়ে আনার লক্ষ্যে কাজ করছে ব্রডব্যান্ড কমিশন নামের একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সংগঠনটি স্মার্টফোনের সর্বজনীন ব্যবহার নিয়ে ২৭ সেপ্টেম্বর ‘স্ট্র্যাটেজিস টুয়ার্ডস ইউনিভার্সাল স্মার্টফোন অ্যাকসেস’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

মুঠোফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন না ১৫টি দেশের এমন মানুষদের নিয়ে ২০১৯–২০ সালে একটি গবেষণা করে জিএসএমএ। ব্রন্ডব্যান্ড কমিশন ওই গবেষণার বরাত দিয়ে তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, মুঠোফোন থাকা সত্ত্বেও ডিজিটাল জ্ঞান ও দক্ষতার অভাবে বাংলাদেশের ৪০ শতাংশ মানুষ মুঠোফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন না। এ ছাড়া ২৬ শতাংশ মানুষ মুঠোফোনে ইন্টারনেট ব্যবহারের প্রয়োজনই মনে করেন না, সামর্থ্য না থাকায় ব্যবহার করেন না ১১ শতাংশ, সুযোগ না থাকায় ইন্টারনেট ব্যবহার করেন না এমন মানুষের সংখ্যা ১৭ শতাংশ এবং ৬ শতাংশ মানুষ নিরাপত্তাজনিত কারণে মুঠোফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন না।

ব্রডব্যান্ড কমিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৯৫ শতাংশ ৩–জি নেটওয়ার্ক সুবিধার আওতায় এসেছেন। উন্নত দেশগুলোতে এটা ৯৯ শতাংশ হলেও নিম্ন আয়ের দেশে এই হার ৮৬ শতাংশ। তবে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও বিশ্বের এক–তৃতীয়াংশ মানুষ (২৭০ কোটি) এখনো ইন্টারনেটে যুক্ত নন। এর মধ্যে বেশিরভাগ মানুষ ভালো ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক সুবিধার আওতায় বাস করেন। সব মানুষকে ইন্টারনেটে যুক্ত করার ক্ষেত্রে একে বড় একটি বাধা বলছে ব্রন্ডব্যান্ড কমিশন।

ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে যেসব মানুষের উচ্চগতির ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ আছে, তারা এখনো ২–জি ও ৩–জি ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। এতে তারা উচ্চগতির ইন্টারনেট–সংযোগ ব্যবহারের সামাজিক ও আর্থিক সুবিধার বিষয়টি বুঝতে পারছেন না।

উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষেরই ইন্টারনেট সুবিধা নেওয়ার সুযোগ থাকলেও তারা তা নিচ্ছেন না, যা ডিজিটাল বিভাজনকে গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়ে জোর দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরছে। মুঠোফোনে ইন্টারনেট ব্যবহারের বাধা কোথায়, সে বিষয়টি ভালোভাবে অনুধাবন করার পাশাপাশি সেটা কীভাবে কমানো যায়, তা ভাবতে হবে নীতিনির্ধারকদের।

শেয়ার করুন