শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে হিন্দু ধর্মাবলম্বী বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। এ সময় পঞ্চগড়ের করতোয়া নদীতে নৌকাডুবিতে ৭০ জন পুণ্যার্থীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেন তিনি।
বুধবার (৫ অক্টোবর) বঙ্গভবনে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি শোক প্রকাশ করেন। এ সময় বাংলাদেশসহ বিশ্বের হিন্দু ধর্মাবলম্বী সবাইকে বিজয়ার শুভেচ্ছা জানান তিনি।
রাষ্ট্রপতি নৌকাডুবিতে মৃতদের প্রতি শোক প্রকাশের পাশাপাশি আহতদের আশু আরোগ্য কামনা করেন। তিনি শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, বিজয়া উৎসব আবহমান কাল থেকে সর্বজনীন উৎসব হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। পূজা অর্চনার পাশাপাশি সমাজের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতি ও মেলবন্ধন সৃষ্টিতেও এ উৎসব একটি প্রধান উপলক্ষ। এ বছর এমন একটি সময় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন সারাবিশ্ব করোনার ছোবলে বিপর্যস্ত। তার ওপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্বব্যাপী অস্থির ও সংঘাতময় পরিস্থিতির জন্ম দিয়েছে। বিশ্ববাসী চরম অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে দিনাতিপাত করছে। বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রতিনিয়তমন্দার ধাক্কা লাগছে।
এ অবস্থা থেকে উত্তরণে পরম সহিষ্ণুতা, পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাস আর সহযোগিতার কোনো বিকল্প নেই বলেই মনে করেন রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেন, দুর্গাপূজায় আমরা অবশ্যই আনন্দ উৎসব করব কিন্তু সাথে সাথে এটাও মনে রাখতে হবে যেন আমাদের প্রতিবেশী, বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজন তারাও যেন এই আনন্দ থেকে বঞ্চিত না হয়।
রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান নির্বিশেষে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। দেশ গঠন ও জাতীয় উন্নয়নেও আমরা ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। এখানে মেজরিটি বা মাইনরিটির কোনো স্থান নেই। বাংলাদেশের সংবিধানে বৈষম্যহীনভাবে সবার সমান অধিকারের নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে। তাই বাংলাদেশের সব ধর্মের মানুষ তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান যথাযথ মর্যাদা ও আনন্দঘন পরিবেশে উদযাপন করবে- এটাই সবার প্রত্যাশা।
তবে এর জন্য সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান আবদুল হামিদ। তিনি বলেন, কেউ যাতে ব্যক্তি বা গোষ্ঠী স্বার্থ উদ্ধারে ধর্মকে ব্যবহার করে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে না পারে সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বাঙালির চিরকালীন ঐতিহ্য। সম্মিলিতভাবে এ ঐতিহ্যকে এগিয়ে নিতে হবে আমাদের সামগ্রিক অগ্রযাত্রায়। শারদীয় দুর্গোৎসব সত্য-সুন্দরের আলোকে ভাস্বর হয়ে উঠুক; ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার মধ্যে সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের বন্ধন আরও সুসংহত হোক- এ কামনা করি।