রাশিয়ায় সংযুক্ত করা ইউক্রেনের চারটি অঞ্চলের পরিস্থিতি স্থিতিশীল হবে বলে অঙ্গীকার করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। স্বঘোষিত গণভোটের পর গত সপ্তাহে রুশ প্রেসিডেন্ট লুহানস্ক, দোনেতস্ক, জাপোরিঝিয়া এবং খেরসনকে রাশিয়ান ফেডারেশনে সংযুক্ত করার ঘোষণা দেন।
যদিও সেই গণভোটকে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দখলকৃত ভূখণ্ডগুলোতে স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার বিষয়ে পুতিনের অঙ্গীকার এমন সময়ে আসলো যখন লুহানস্ক এবং খেরসনে রাশিয়ার কাছ থেকে গ্রাম পুনরুদ্ধার করার কথা জানিয়েছে ইউক্রেন। রুশ আগ্রাসন মোকাবিলা করা এই দেশটি অন্য দুটি অঞ্চলের উল্লেখযোগ্য অংশ নিয়ন্ত্রণ করছে এবং দোনেতস্কেও সাম্প্রতিক সময়ে অগ্রসর হয়েছে।
তবে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, ইউক্রেনের হামলায় হারানো যেকোনো ভূখণ্ড রাশিয়া আবারও নিজেদের দখলে নেবে। সাম্প্রতিক ব্যর্থতা ও ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হলে তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন: ‘এখানে কোনো দ্বন্দ্ব নেই। এসব ভূখণ্ড চিরকাল রাশিয়ার থাকবে, তাদের (রাশিয়ায়) ফিরিয়ে নেওয়া হবে।’
এদিকে রাশিয়ার শিক্ষক দিবসে শিক্ষকদের উদ্দেশে দেওয়া বক্তৃতায় প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে সংযুক্ত অঞ্চলগুলোতে তিনি ‘শান্তভাবে উন্নয়ন’ করবেন।
তবে রুশ পার্লামেন্ট স্টেট ডুমার প্রতিরক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান আন্দ্রে কার্টোপোলভ রাষ্ট্রীয় মিডিয়াকে বলেছেন, রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধক্ষেত্রে যা ঘটছে সে সম্পর্কে মিথ্যা বলা বন্ধ করা দরকার। কারণ রাশিয়ানরা বোকা নয়।
বিবিসি বলছে, ইউক্রেনীয় বাহিনী রাশিয়ার বিরুদ্ধে দক্ষিণ ও পূর্ব উভয় দিকেই সাফল্য অর্জন করছে। লুহানস্কের ইউক্রেনীয় গভর্নর সেরহি হাইদাই বুধবার বিবিসিকে বলেন, ওই অঞ্চলের ছয়টি গ্রাম রাশিয়ার কাছ থেকে পুনর্দখল করা হয়েছে।
পরে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও বলেন, খেরসনের দক্ষিণ অঞ্চলে আরও তিনটি গ্রাম মুক্ত করেছে ইউক্রেনীয় বাহিনী।
মূলত সাম্প্রতিক দিনগুলোতে খেরসনে বেশ কয়েকটি সাফল্য অর্জন করেছে ইউক্রেন। যার মধ্যে রাশিয়ার কবল থেকে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ গ্রাম ডেভিডিভ ব্রিড ইউক্রেনীয় নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেওয়ার বিষয়টিও রয়েছে।
এদিকে প্রেসিডেন্ট পুতিন দক্ষিণ ইউক্রেনের জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে রাশিয়ার দখলদারিত্ব চূড়ান্ত করতে আনুষ্ঠানিকতার জন্য একটি ডিক্রিতে স্বাক্ষর করেছেন। যুদ্ধের প্রথম দিনগুলোতেই রাশিয়ান সৈন্যরা এই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি দখল করে নেয়।
রাশিয়া বলেছে ইউরোপের বৃহত্তম এই পারমাণবিক স্থাপনাটি এখন থেকে একটি নতুন কোম্পানির মাধ্যমে পরিচালিত হবে। তবে ইউক্রেনের পারমাণবিক অপারেটর এই পদক্ষেপটিকে ‘অর্থহীন’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে।
জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষণ সংস্থা আইএইএ-এর প্রধান রাফায়েল গ্রোসি বলেছেন, রাশিয়ার এই পদক্ষেপের পর সংকট কাটাতে উভয় পক্ষের সাথে আলোচনা করবেন তিনি। মূলত পারমাণবিক এই প্ল্যান্টের চারপাশে একটি সুরক্ষা অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করতে ইচ্ছুক এই কর্মকর্তা প্রথমে কিয়েভ এবং সেখান থেকে মস্কো সফর করবেন।