‘খাদ্য নিরাপত্তার ঝুঁকিতে দক্ষিণ এশিয়া, মূল্যস্ফীতি হবে ৯.২ শতাংশ’

মত ও পথ ডেস্ক

খাদ্যসংকট
ফাইল ছবি

চলতি বছরে দক্ষিণ এশিয়ায় রেকর্ড পরিমাণে হবে মূল্যস্ফীতি। বিশ্বব্যাপী খাদ্য ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি এবং বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা এই অঞ্চলের খাদ্য নিরাপত্তাকে আরও ঝুঁকিতে ফেলেছে। এ অবস্থায় চলতি বছরে দক্ষিণ এশিয়ায় মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ২ শতাংশ ছাড়াবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।

এই মূল্যস্ফীতি মানুষের প্রকৃত আয়ের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এতে এই অঞ্চলের দরিদ্র জনগোষ্ঠী আরও বিপাকে পড়বে। কারণ এই অঞ্চলের মানুষ তাদের আয়ের একটি বড় অংশ খাদ্যের জন্য ব্যয় করে।

universel cardiac hospital

‘দক্ষিণ এশিয়ায় অর্থনৈতিক নজিরবিহীন ধাক্কা, বাড়িয়ে দিচ্ছে চ্যালেঞ্জ এবং প্রবৃদ্ধি কমছে’ শীর্ষক এক প্রবন্ধে এই পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) সংস্থাটির ঢাকা অফিস থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

বিশ্বব্যাংক জানায়, শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সংকট, পাকিস্তানের বিপর্যয়মূলক বন্যা, বিশ্বব্যাপী স্থবিরতা এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবে দক্ষিণ এশিয়াকে কোভিড-১৯ মহামারির দীর্ঘস্থায়ী ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। ফলে এই অঞ্চলে প্রবৃদ্ধি কমছে। এজন্য টেকসই উন্নয়নের ওপর জোর দিতে বলেছে আন্তর্জাতিক এই সংস্থাটি।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে জানানো হয়, বছর শেষে দক্ষিণ এশিয়ার গড় প্রবৃদ্ধি হবে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। গত জুনে করা প্রাক্কলন থেকে ১ শতাংশ কম। অর্থনৈতিক মন্দা যখন সব দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে ভারসাম্যহীন করছে। ভারতের রপ্তানি এবং পরিষেবা খাত এই অঞ্চলের বৃহত্তম অর্থনেতিক খাত। ভারতের অর্থনীতিই দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতিকে শক্তিশালীভাবে পুনরুদ্ধার করছে। এছাড়া পর্যটনে মালদ্বীপে এবং নেপালে গতিশীল পরিষেবা খাত প্রবৃদ্ধিতে এই অঞ্চলে অবদান রাখছে।

প্রকাশিত প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক জানায়, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে কোভিড-১৯ এর সম্মিলিত প্রভাব এবং পণ্যের রেকর্ড-উচ্চমূল্য শ্রীলঙ্কার অনেক বেশি ক্ষতি করেছে। দেশটির ঋণের সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে, ফলে বৈদেশিক রিজার্ভ কমে গেছে। এ অবস্থায় সর্বকালের সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক সংকটে থাকা শ্রীলঙ্কার প্রকৃত জিডিপি এই বছর ৯ দশমিক ২ শতাংশ কমে যাবে। ২০২৩ সালে এটি আরও ৪ দশমিক ২ শতাংশ কমতে পারে বলে মনে করছে বিশ্বব্যাংক।

বৈশ্বিক এ সংস্থাটি আরও উল্লেখ করেছে, উচ্চ দ্রব্যমূল্য পাকিস্তানের বাহ্যিক ভারসাম্যহীনতাকে আরও খারাপ করেছে এবং রিজার্ভ কমিয়ে এনেছে। বিধ্বংসী জলবায়ু পরিবর্তন, জ্বালানি সংকট ও বন্যার ফলে পাকিস্তানের এক-তৃতীয়াংশ জলমগ্ন হওয়ার পর দেশটির অর্থনীতি অনিশ্চয়তায় পড়ে গেছে।

দক্ষিণ এশিয়ার অধিকাংশ দেশ অর্থনীতির বেহালদশা মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে উল্লেখ করে বিশ্বব্যাংক বলেছে, যদিও কয়েকটি দেশ তুলনামূলক ভালো করছে। দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ ভারতের সেবা খাত ও রপ্তানি আয় খুব শক্তিশালী রয়েছে। অথচ একই সময়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধরে রাখতে টানাপোড়েনে আছে অধিকাংশ দেশ। অন্যদিকে মালদ্বীপ ও নেপালে পর্যটন খাত আবার চাঙা হওয়ায় এই দুই দেশে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে।

এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রাইসার বলেন, মহামারি, বিশ্বব্যাপী তারল্য, পণ্যের দামের আকস্মিক পরিবর্তন এবং চরম আবহাওয়া বিপর্যয়ের ফলে এ অঞ্চল ঝুঁকিতে রয়েছে। এসব ধাক্কা সামলেই দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে শক্তিশালী অর্থনীতি এবং আর্থিক বাফারগুলো তৈরি করতে হবে। নিজ দেশের জনগণকে রক্ষা করতে হলে দেশগুলোকে টেকসই উন্নয়ন করতে হবে।

শেয়ার করুন