ফরাসি সাহিত্যিক আনি এখঁনু চলতি বছরে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। বৈশ্বিক গণমাধ্যমকে সুইডিশ একাডেমি জানায়, এখঁনু নিজের লেখায় সাহস ও তীক্ষ্ণতার এমনভাবে সমন্বয় ঘটিয়েছেন, যার সাহায্যে তিনি ব্যক্তিগত স্মৃতির শিকড় থেকে জীবনবোধের বিচ্ছিন্নতা, সংযম এবং অন্যান্য বিষয় উন্মোচন করেছেন। সাহিত্যকর্মে তাঁর সাহসের সঙ্গে অনন্য ধৈর্যের সমাবেশ ঘটিয়েছেন শিকড়ের সন্ধানে। এসব বিবেচনায় তিনি ২০২২ সালের সাহিত্য পুরস্কারের জন্য নোবেল কমিটির কাছে নির্বাচিত হন। ৮২ বছর বয়সী এখঁনু গত ৪০ বছর ধরে আপসহীন লেখালেখি করছেন।
পুরস্কার প্রবর্তিত হওয়ার পর থেকে এখনো পর্যন্ত মিলিয়ে সাহিত্যে নারী নোবেল বিজয়ীর সংখ্যা বেশ কম। সর্বশেষ লুইস গ্লুক সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন ২০২০ সালে। দুইবছর পর এবার এই পুরস্কার জেতেন ফরাসি নারী কথাসাহিত্যিক আনি এখঁনু। বিশ্ব সাহিত্যবিশারদরা বলছেন, এখঁনুর নোবেল জয় আসলে এক নারীর ব্যক্তিগত যাপনের ও আনন্দ-বেদনা-নির্লিপ্তির স্বীকৃতি। সেই সঙ্গে এ-ও বলা যায়, নির্জন এক নারীসত্তার বিশ্বজনীন হয়ে ওঠার এক বিশেষ ঘটনা হয়ে রইল এই পুরস্কার। তাঁকে উষ্ণ অভিবাদন ও অভিনন্দন।
আর্ন্তজাতিক সংবাদমাধ্যম বলছে, আনি এখঁনু লেখেন মূলত আত্মজৈবনিক বা স্মৃতিকথন। প্রথম জীবনে কিছু আখ্যানধর্মী লেখা লিখলেও পরে তিনি সরে আসেন স্মৃতিকথায়। এক নারীর বড় হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে বদলে যাওয়া পৃথিবী আর পরিপার্শ্ব তাঁর লেখায় বারবার ছায়া ফেলে। ব্যক্তিগত সময়ের সঙ্গে বাঁধা পড়ে নৈর্ব্যক্তিক সমাজ ও মানুষের কাহিনিও। কখনও তাঁর লেখায় উঠে আসে নিজের গর্ভপাতের প্রসঙ্গ, কখনো আসে মাতৃবিয়োগ, অ্যালঝাইমার্স বা ক্যানসারের কথাও।
তাঁর বই ‘আ উওম্যানস স্টোরি’, ‘আ ম্যানস প্লেস’, ‘সিম্পল প্লেস’ বা ‘আই রিমেন ইন ডার্কনেস’ ইতিমধ্যেই বিশ্ব পাঠকের নজর কেড়েছে, আদায় করেছে আলোচকদের শ্রদ্ধা। ‘প্যাসন সিম্পল’ গ্রন্থে এক পূর্ব ইউরোপীয় পুরুষের সঙ্গে তাঁর প্রেমের সম্পর্ক বহুমাত্রিক বর্ণালির ভালবাসাকে উপস্থাপন করে। অবশ্য আমাদের দেশের সাধারণ পাঠকদের আনি এখঁনুর লেখার সঙ্গে তেমন পরিচিতি নেই। আমরা আশাবাদী, নোবেলসহ মর্যাদাপূর্ণ বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক অন্যান্য পুরস্কারপ্রাপ্তির পর কোনো কবি, লেখকের বই যেভাবে বাংলা ভাষায় অনুবাদ হয়, এখঁনুর বইয়েরও তেমনই মানসম্পন্ন অনুবাদের বই বাজারে আসবে।