দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও বিরোধীদলের নেতা বেগম রওশন এরশাদকে দল থেকে বহিষ্কারের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় পার্টি। আজ শনিবার জাপার বনানী কার্যালয়ে পাঁচ ঘণ্টাব্যাপী পার্টির সর্বোচ্চ ফোরাম প্রেসিডিয়ামের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বৈঠকে উপস্থিত একাধিক প্রেসিডিয়াম সদস্য।
বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শেষবারের মতো রওশন এরশাদ ঘোষিত আগামী ২৬ নভেম্বর পার্টি কাউন্সিল বাতিল করার জন্য তাকে অনুরোধ করা হবে। তিনি (রওশন এরশাদ) যদি কাউন্সিলে অনড় থাকেন তাহলে তাকে পার্টি থেকে বহিষ্কার করা হবে। আর রওশন এরশাদের সঙ্গে কথা বলার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে জাতীয় পার্টির প্রয়াত চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের ভাগিনা পার্টির যুগ্ম মহাসচিব আদেলুর রহমান আদেল এমপিকে। রওশন এরশাদ যদি ফোন না ধরেন সেক্ষেত্রে তার সন্তান সাদ এরশাদের সঙ্গে কথা বলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে বৈঠক সূত্র থেকে জানা গেছে।
বৈঠক সূত্রে আরও জানা গেছে, কিছুদিন আগে অব্যাহতি পাওয়া বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ ও জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙাকে সাধারণ সদস্য পদ থেকেও স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সূত্র জানায়, বৈঠকে জাপার সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, আমি ম্যাডাম (রওশন এরশাদ)কে কিছুদিন আগে মোবাইলে বলেছিলাম, আপনি আমাদের মাতৃ সমতূল্য। আমি সবসময় আপনার সঙ্গে ছিলাম। আপনি কাউন্সিল প্রত্যাহার করুন। তিনি আমাকে ভালো-মন্দ কিছু বলেননি। এরপর একাধিকবার ফোন করলেও ফোন ধরেননি।
তিনি আরও বলেন, সিস্টেমের বাইরে যেই কাজ করবে, পার্টির বিরুদ্ধে বিভেদ সৃষ্টি করবে সে আমার আপন ভাই হলেও তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সভায় উপস্থিত থাকা উত্তরবঙ্গের এক প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, যদি গ্যাংরিন বা হাত-পায়ে পচন সৃষ্টি হয় সেক্ষেত্রে আঙ্গুল কেটে ফেলতে হয়, নতুবা পুরো হাত বা পা কেটে ফেলতে হয়। তাই সময় থাকতে ষড়যন্ত্রকারীদের ওপরে ফেলতে হবে।
বৃহত্তর ঢাকার এক প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, দলের ভেতরে থেকে দলকে ক্ষতিগ্রস্ত করা সহজ। আর যদি আগে থেকে চিহ্নিত ষড়যন্ত্রকারীদের দল থেকে বের করে দেয়া হয়, তাহলে তারা পার্টির তেমন ক্ষতি করতে পারবে না।
অপর এক প্রেসিডিয়াম ও দলীয় সংসদ সদস্য বলেন, আমার কাছে ম্যাসেজ আছে সাদ এরশাদ ম্যাডামকে জিম্মি করে রেখেছেন। ঢাকায় অবস্থানরত পার্টি থেকে বহিষ্কৃত কয়েকজনের সমম্বয়ে সাদ ম্যাডামের মোবাইল সিজ করে রেখেছেন। তাদের আস্থাভাজন ছাড়া কাউকে রওশন এরশাদের সঙ্গে কথা বলতে দেয়া হচ্ছে না।
সভাসূত্র জানায়, সিলেট বিভাগের কয়েকটি জেলাকে কেন্দ্র করে পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এটিইউ তাজ রহমান এবং আতিকুর রহমান আতিকের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর মধ্যস্থতায় পরে পরিবেশ স্বাভাবিক হয়।
বৈঠকে জাপার চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের তার বক্তব্যে বলেন, পার্টির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না, সে যত বড় বা শক্তিশালী হোক না কেনো। দলের মাঝে শৃঙ্খলা রক্ষার্থে আমি যেকোনো কঠোর সিদ্ধান্ত নেব।
পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের সভাপতিত্বে বেলা ১১টায় শুরু হয়ে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে প্রেসিডিয়ামের ৪১ সদস্যের মধ্যে ৩৮ জন এবং ২৬ এমপির মধ্যে ২০ জন উপস্থিত ছিলেন।