নিয়োগ দুর্নীতি: যুগ্ম সচিবসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র

নিজস্ব প্রতিবেদক

দুদক
ফাইল ছবি

খাদ্য পরিদর্শক পদের লিখিত পরীক্ষা। অনুত্তীর্ণ প্রার্থী যিনি ১৯ পেয়েছেন তাকে ৯১ এবং ৪৮ পাওয়া প্রার্থীকে ৮৮ নাম্বার দিয়ে উত্তীর্ণ দেখানো হয়। এভাবে বেশি নম্বর দেখিয়ে অর্থের বিনিময়ে অন্যায়ভাবে ৪৪ প্রার্থীকে চাকরির সুযোগ করে দেওয়ায় বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিবসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

সোমবার (১০ অক্টোবর) বিশেষ জজ আদালতে তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক আলী আকবর অভিযোগপত্রটি জমা দেন। দুদক সচিব মাহবুব হোসেন এসব তথ্য জানিয়েছেন।

universel cardiac hospital

মাহবুব হোসেন বলেন, কম্পিউটার সফটওয়্যারে কারসাজি করে অনুত্তীর্ণ প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষার বেশি নম্বর দেখিয়ে অন্যায়ভাবে ৪৪ প্রার্থীকে চাকরি লাভের অবৈধ সুযোগ করে দিয়েছেন আসামিরা। অধিকতর তদন্ত শেষে মোট ৫০ জন আসামির বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়েছে।

দুদকের তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালের ১৬ সেপ্টেম্বরে খাদ্য অধিদপ্তরের ৩য় শ্রেণির ১০ ক্যাটাগরিতে (খাদ্য পরিদর্শক, উপ-খাদ্য পরিদর্শক, সহকারী উপ-খাদ্য পরিদর্শক, সুপার ভাইজার, অডিটর, উচ্চমান সহকারী, হিসাব রক্ষক কাম ক্যাশিয়ার, অফিস সহকারী কাম-মুদ্রাক্ষরিক, ডাটা এন্ট্রি/কন্ট্রোল অপারেটর, সহকারী অপারেটর) এক হাজার ৫৫২টি শূন্য পদ পূরণের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়।

দুদকের তদন্তে দেখা যায়, কর্মকর্তাদের যোগসাজশে লিখিত পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ হওয়া বা কম নম্বর পাওয়া ৪৪ পরীক্ষার্থীর লিখিত পরীক্ষার ওএমআর সিটে প্রাপ্ত নম্বরে জালিয়াতির মাধ্যমে বেশি বসিয়ে ৮০ ও তদূর্ধ্ব নম্বর দিয়ে ফল প্রকাশ করে। যেখানে আসামি ৪৩ জন পরীক্ষার্থীসহ মোট ৩২৮ জনকে খাদ্য অধিদপ্তরের খাদ্য পরিদর্শক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

সংস্থাটির তদন্তে প্রমাণিত হওয়ার পর বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিবসহ ৫৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল দুদক। ২০১৫ সালের ১০ অক্টোবর রাজধানীর শাহবাগ থানায় দুদকের তৎকালীন উপপরিচালক মো. মনিরুল হক বাদী হয়ে মামলাটি করেন।

মামলার এজাহারভুক্ত আসামিদের মধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব ও বাছাই কমিটির সদস্য রোকেয়া খাতুন, ঢাকা জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (উপ-সচিব) ও সরকারি কর্ম-কমিশন সচিবালয়ের সাবেক উপ-পরিচালক মো. মাহবুবুর রহমান ফারুকীকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

অভিযোগপত্রভুক্ত আসামিরা হলেন- বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ও খাদ্য বিভাগের সাবেক উপ-সচিব নাসিমা বেগম, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব ও সাবেক উপ-পরিচালক (সংস্থাপন) ইফতেখার আহমেদ, খাদ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (সংগ্রহ) ইলাহী দাদ খান, ডেভেলপমেন্ট প্ল্যানার্স অ্যান্ড কনসালটেন্টসের ম্যানেজার মো. আইউব আলী, সাবেক সিস্টেম অ্যানালিস্ট ও টেকনিক্যাল ম্যানেজার আসাদুর রহমান, সাবেক হার্ডওয়ার ইঞ্জিনিয়ার মো. আরিফ হোসেন এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট ডাটাবেজ অ্যাডমিন মো. আবুল কাসেম।

চাকরি পাওয়া ৪৪ খাদ্য পরিদর্শক হলেন— শরীয়তপুর উপজেলার খাদ্য পরিদর্শক মুহাম্মদ তাজুল ইসলাম, সিলেট কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার খাদ্য পরিদর্শক মো. জহিরুল ইসলাম, সিলেট সদরের খাদ্য পরিদর্শক অপূর্ব কুমার রায়, সাভার উপজেলার খাদ্য পরিদর্শক আবু জাকির মোহাম্মদ রিজওয়ানুর রহমান, ফরিদপুর বোয়ালমারী উপজেলার খাদ্য পরিদর্শক আসমা রহমান, মানিকগঞ্জ হরিরামপুরের খাদ্য পরিদর্শক আসমা ইসলাম, সিলেট বিয়ানীবাজারের খাদ্য পরিদর্শক জাহানারা জলি, শেরপুর নয়াবিল টিপিসির খাদ্য পরিদর্শক অলিউর রহমান, জামালপুর সদর উপজেলার খাদ্য পরিদর্শক সানজিদা সুলতানা, কিশোরগঞ্জের কটিয়াদি উপজেলার উম্মে হানী, সিলেট বিশ্বনাথ উপজেলার খাদ্য পরিদর্শক মোহাম্মদ মোহাইমিনুল ইসলাম ভূঞা, হবিগঞ্জ আজমিরীগঞ্জের খাদ্য পরিদর্শক প্রতাপ কুমার সরকার, পাবনা চাটমোহর উপজেলার খাদ্য পরিদর্শক কোহিনুর আক্তার, সুনামগঞ্জ ধর্মপাশার খাদ্য পরিদর্শক মির আরিফুর রহমান, নেত্রকোণার কলমাকান্দা উপজেলার খাদ্য পরিদর্শক মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহাব, ময়মনসিংহ গয়েশপুর উপজেলার খাদ্য পরিদর্শক মো. সাজ্জাদ হোসেন খান পাঠান, নেত্রকোণা সদর উপজেলার খাদ্য পরিদর্শক হিমেল চন্দ্র সরকার, ঢাকা সিএসডির খাদ্য পরিদর্শক মোহাম্মদ রইছ উদ্দিন, শেরপুর সদর উপজেলার খাদ্য পরিদর্শক সালমা আক্তার, জামালপুর এলএসডির খাদ্য পরিদর্শক শামছুন নাহার, টাঙ্গাইল ঘাটাইলের খাদ্য পরিদর্শক ইয়াসির আরাফাত, টাঙ্গাইল নাগরপুর উপজেলার খাদ্য পরিদর্শক মো. এদিব মাহমুদ, পটুয়াখালী গলাচিপা উপজেলার খাদ্য পরিদর্শক হালিমা আহমেদ, ঝালকাঠি সদর উপজেলার খাদ্য পরিদর্শক রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস, কুমিল্লা বরুড়া উপজেলার খাদ্য পরিদর্শক মোহাম্মদ তৈয়ব উল্যাহ খান, নওগাঁ ধামুইরহাট উপজেলার শেখ মো. জাকারিয়া হাসান, নওগাঁ বদলগাছীর মোহাম্মদন নুরুজ্জামান, নওগাঁ পোরশা উপজেলার খাদ্য পরিদর্শক মো. আতিকুর রহমান, বগুড়া শিবগঞ্জ উপজেলার খাদ্য পরিদর্শক মোছা. মমতাজ বেগম, জামালগঞ্জ এলএসডির খাদ্য পরিদর্শক কানিজ শারমিন, পাবনা আটঘরিয়া উপজেলার খাদ্য পরিদর্শক মো. জুনায়েদ কবীর, মানিকগঞ্জ সিংগাইর উপজেলার খাদ্য পরিদর্শক সেলিনা আক্তার, সিরাজগঞ্জ কাজীপুর উপজেলার খাদ্য পরিদর্শক মোহাম্মদ আলী মিঞা, রংপুর মিঠাপুকুরের খাদ্য পরিদর্শক মোছা. জাকিয়া সুলতানা, কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার খাদ্য পরিদর্শক অনিমেষ কুমার সরকার, নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার মোছা. জেসমিন আক্তার, নীলফামারী সৈয়দপুর উপজেলার খাদ্য পরিদর্শক মো. রায়হান কবির, রংপুর পীরগঞ্জ মিঠাপুকুর টিপিসির খাদ্য পরিদর্শক মো. শরিফুল ইসলাম, সাতক্ষীরা দেবহাটার খাদ্য পরিদর্শক বিল্লাল হোসেন, বাগেরহাট মংলা উপজেলার খাদ্য পরিদর্শক মো. আবুল হাশেম, পটুয়াখালী কাঠালতলি উপজেলার খাদ্য পরিদর্শক ইসরাত জাহান মনা, বরগুনা সদর উপজেলার খাদ্য পরিদর্শক আরিফা সুলতানা এবং সুনামগঞ্জ দিরাই উপজেলার খাদ্য পরিদর্শক আশীষ কুমার রায়।

শেয়ার করুন