সম্প্রতি অল্প কয়েকদিনের ব্যবধানে সাতটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করেছে পূর্ব এশিয়ার পারমাণবিক ক্ষমতাধর দেশ উত্তর কোরিয়া। সাম্প্রতিক এসব সিরিজ ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের ফলে ওয়াশিংটন-টোকিওসহ পূর্ব এশিয়াজুড়ে ব্যাপক শঙ্কার সৃষ্টি হয়।
এ নিয়ে উত্তর কোরিয়া এতোদিন চুপ থাকলেও এবার মুখ খুলেছে দেশটি। পূর্ব এশিয়ার এই দেশটির দাবি, সাম্প্রতিক এই ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের সবগুলোই ছিল পারমাণবিক মহড়া। সোমবার (১০ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উত্তর কোরিয়ার সাম্প্রতিক সাতটি ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের সবগুলোই ‘কৌশলগত পারমাণবিক’ মহড়া ছিল বলে দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম সোমবার জানিয়েছে। এতে আরও বলা হয়েছে, উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন ব্যক্তিগতভাবে এসব ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের তত্ত্বাবধানে ছিলেন।
এএফপি বলছে, ২০২১ সালের জানুয়ারিতে উত্তর কোরিয়ার ক্ষমতাসীন দলের গুরুত্বপূর্ণ পার্টি কংগ্রেসে কিম জং উন একটি পাঁচ বছরের প্রতিরক্ষা উন্নয়ন পরিকল্পনার রূপরেখা প্রকাশ করেন। ওই রূপরেখাতে ‘আরও কৌশলগত ব্যবহারের জন্য’ ছোট এবং হালকা পারমাণবিক অস্ত্রের উন্নয়নের আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি।
অন্যদিকে সিউল, টোকিও এবং ওয়াশিংটন সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে সম্মিলিত নৌ মহড়া আরও বাড়িয়েছে। এই ঘটনা পিয়ংইয়ংকে ক্ষুব্ধ করেছে কারণ যুক্তরাষ্ট্র-জাপান-দক্ষিণ কোরিয়ার যৌথ এই মহড়াকে (নিজেদের ওপর) আক্রমণের প্রস্তুতি হিসাবে দেখে পিয়ংইয়ং। আর এসব কারণে প্রয়োজনীয় ‘পাল্টা ব্যবস্থা’ হিসাবে ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ ও বিস্ফোরণকে ন্যায়সঙ্গত বলে মনে করে উত্তর কোরিয়া।
উত্তর কোরিয়ার সরকারি সংবাদমাধ্যম দ্য কোরিয়ান সেন্ট্রাল নিউজ এজেন্সি (কেসিএনএ) বলেছে, এই দেশগুলোর যৌথ সামরিক মহড়ার প্রতিক্রিয়া হিসেবে সাম্প্রতিক সময়ে সিরিজ ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালানো হয়েছে। এমনকি এসব উৎক্ষেপণ ‘একটি প্রকৃত যুদ্ধের অনুকরণে’ করা হয়েছে বলেও এতে জানানো হয়েছে।
এছাড়া কেসিএনএ’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘কৌশলগত পরমাণু অস্ত্র পরিচালনার সাথে জড়িত উত্তর কোরিয়ার সেনাবাহিনীর বেশ কয়েকটি ইউনিট নিজেদের যুদ্ধ প্রতিরোধ এবং পাল্টা পারমাণবিক আক্রমণের ক্ষমতা পরীক্ষা ও মূল্যায়ন করার জন্য গত ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত সামরিক মহড়া চালিয়েছে। মূলত শত্রুদের জন্য কঠোর সতর্কবার্তা হিসাবে এসব মহড়া চালানো হয়েছে’।
ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ‘কোরিয়ার ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক এবং এর কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশনের চেয়ারম্যান কিম জং উন ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে সামরিক মহড়া পরিচালনা করেছেন।’
এএফপি বলছে, দীর্ঘদিন ধরে পরমাণু অস্ত্র সংক্রান্ত আলোচনা স্থগিত থাকায় পিয়ংইয়ং তার নিষিদ্ধ অস্ত্র কর্মসূচি দ্বিগুণ করেছে। এর আগে গত মঙ্গলবার পাঁচ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো জাপানের ওপর দিয়ে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে পারমাণবিক অস্ত্রধারী এই দেশটি।
পিয়ংইয়ংয়ের নিক্ষিপ্ত এই মিসাইলটি একটি মধ্যবর্তী-পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (আইআরবিএম) ছিল বলে জানিয়েছিল দক্ষিণ কোরিয়া। এছাড়া কর্মকর্তা ও বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন, উত্তর কোরিয়া আরেকটি পারমাণবিক পরীক্ষার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।
কেসিএনএ বলছে, কৌশলগত পারমাণবিক অপারেশন ইউনিটগুলোর মহড়ার সময় সাম্প্রতিক এসব ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক বাহিনীকে তাদের ‘সামরিক কার্যকারিতা এবং যুদ্ধের প্রকৃত ক্ষমতা প্রদর্শনের সুযোগ দিয়েছে।
এর আগে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে সাত দফায় ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছিল পিয়ংইয়ং। উত্তর কোরিয়ার মতো অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত দেশ কীভাবে একের পর এক এমন পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে, তা নিয়ে বহু প্রশ্ন রয়েছে।
যদিও একের পর এক পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষার জন্য উত্তর কোরিয়ার ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্রসহ একাধিক দেশ।