লড়াই করতেই হবে, মরবো না হয় জিতবো: মির্জা ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক

মির্জা ফখরুল
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ফাইল ছবি

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে গিয়েও আমরা স্বাধীন হতে পারিনি। মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলাম স্বাধীনতার জন্য। এবার গণতন্ত্রের জন্য যুদ্ধ করতে হবে। আবার সেই লড়াই করতে হবে। আমাদের লড়াই করতেই হবে, এ লড়াইয়ে জিততেই হবে। এ লড়াইয়ে মরবো না হয় জিতবো।

বুধবার (১২ অক্টোবর) বিকেলে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম বিভাগীয় গণসমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ও নেতাকর্মীদের হত্যার প্রতিবাদ এবং খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিভাগীয় গণসমাবেশের আয়োজন করে চট্টগ্রাম বিএনপি।

universel cardiac hospital

গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেন, গণতন্ত্র রক্ষার জন্য আমাদের অনেক ভাই শহীদ হয়েছেন। এ বছর শহীদ হন ছাত্রদলের নুর আলমসহ আরও অনেকে। তারা সবাই তরুণ। এরা সাধারণ মানুষ, এরা বিত্তের অধিকারী নয়, বড় ধন সম্পদের মালিক নয়। এ দেশকে মুক্ত করতে গিয়ে হানাদারের হাতে তাদের জীবন দিতে হয়েছে।

মুন্সিগঞ্জে নিহত যুবদলকর্মী সাওনের বাবার বক্তৃতার উদ্ধৃতি দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, সাওনের বাবা বলেছেন- ‘আমি আর কিছু চাই না। আমি এদেশের গণতন্ত্র ফিরে চাই’। মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলাম স্বাধীনতার জন্য। আবার সেই লড়াই করতে হবে। আমরা যদি জয়লাভ করতে পারি তবে দেশের স্বাধীনতা থাকবে, আর যদি না পারি তাহলে স্বাধীনতা থাকবে না। আমরা মাথা নিচু করে না, মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চাই। জাতিকে এখন অস্তিত্বের প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে!

আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্যে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ২০১৪ সালে বিনা ভোটে ১৫১ জনকে এমপি করেছিলেন। ২০১৮ সালে রাতের আঁধারে সব ভোটের বাক্স ভর্তি করেছেন।

২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনী এজেন্ডার কথা উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, কোথায় ১০ টাকার চাল? এখন তো ৭০ টাকা। সব নিত্যপণ্যের মূল্য এখন ৪-৫ গুণ বেড়ে গেছে। বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। আবার নাকি বিদুতের দাম বাড়ানো হবে। পানি-গ্যাস-বিদ্যুৎ সব কিছুর দাম বাড়ানো হয়েছে। এ দাম বাড়ানোর পেছনে কারণ কি? কারণ একটাই জনগণের পকেট থেকে তারা বিদেশে টাকা পাচার করে। তারা লন্ডনে বাড়ি করে, মালেশিয়ায় সেকেন্ড হোম তৈরি করেছে। আওয়ামী লীগ বড় গলায় বলে, উন্নয়ন, উন্নয়ন। আমাদের দেশের মা-মেয়েদের কোনো সম্ভ্রম রক্ষা করা যায় না। দিন-দুপুরে মানুষ হত্যা করে এরা (আওয়ামী লীগ)।

নির্বাচন কমিশনারের কথা ডিসি-এসপিরা শোনেন না উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, তিনি নাকি নির্বাচন কমিশনার!

দেশে বেকারত্ব দূর করার কথা জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা সব সমস্যার সমাধান করে দেশকে উন্নতির দিকে পৌঁছে দেবো। আমাদের পরিষ্কার দাবি। যত মিথ্যা মামলা আছে সব প্রত্যাহার করতে হবে। অবিলম্বে তাদের ক্ষমতা থেকে পদত্যাগ করতে হবে। চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ড ময়দান থেকে যে আন্দোলন শুরু হলো, এখান থেকে দেশব্যাপী তা ছড়িয়ে পড়বে।

সমাবেশ শুরুর আগেই পুরো মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। একই সঙ্গে অনেকেই আশপাশের সড়ক ও বাসাবাড়ির ছাদেও জমায়েত হয়েছেন।

রাজধানী ঢাকার ১৬টি জোনে সমাবেশের পর আজ থেকে চট্টগ্রামের মধ্যদিয়ে বিএনপির চলমান আন্দোলনের দ্বিতীয় ধাপের কর্মসূচি শুরু হলো। এরই ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রাম মহানগরের পলোগ্রাউন্ড মাঠে অনুষ্ঠিত বিভাগীয় সমাবেশে নেতাকর্মীদের ঢল নামে।

গত ২৭ সেপ্টেম্বর বিএনপি দেশের নয় এলাকায় গণসমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করে। যার প্রথমটি হলো আজ। আর শেষ সমাবেশটি হবে আগামী ১০ ডিসেম্বর। ঢাকার নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে এই সমাবেশ হওয়ার কথা রয়েছে। যেটিকে ‘মহাসমাবেশ’ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে দলটি।

ঘোষিত এই কর্মসূচির অন্য সমাবেশগুলোর মধ্যে আগামী ১৫ অক্টোবর ময়মনসিংহে, ২২ অক্টোবর খুলনায়, ২৯ অক্টোবর রংপুরে, ৫ নভেম্বর বরিশালে, ১২ নভেম্বর ফরিদপুরে, ১৯ নভেম্বর সিলেটে, ২৬ নভেম্বর কুমিল্লায়, ৩ ডিসেম্বর রাজশাহীতে ও ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশ।

শেয়ার করুন