মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা জরুরি

মো. সাইফুল মিয়া

মূল্যস্ফীতি
ফাইল ছবি

এ সময়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ বহুল আলোচিত একটি বিষয়। কারণ বর্তমানে আমাদের দেশে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি দেখা দিয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। বলা বাহুল্য, উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা অর্থনীতির বড় চ্যালেঞ্জ। মূল্যস্ফীতির ফলে মুদ্রার মান কমে যায় এবং পণ্যদ্রব্যের মান বেড়ে যায়। এর ফলে জীবনযাত্রার ব্যয়বৃদ্ধি ও জনজীবনে অসহনীয় অস্বস্তি দেখা দেয়। বিশেষ করে, সীমিত আয়ের মানুষের অর্থাৎ মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত শ্রেণি মানুষের পক্ষে উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে টিকে থাকা কঠিন হয়ে যায়। অনেকে কর্মসংস্থানের জন্য এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করে। মূল্যস্ফীতিকে অর্থনীতির সবচেয়ে বড় শত্রু হিসেবে গণ্য করা হয়।

অর্থনীতির ভাষায়, মূল্যস্ফীতি ২ থেকে ৫ শতাংশের মধ্যে থাকা জনজীবনের জন্য স্বস্তিদায়ক। ৭ থেকে ১০ শতাংশের মধ্যে থাকা মানেই বিপদ এবং এর চেয়ে বেশি হলে মহাবিপদ। অর্থাৎ ইতিমধ্যে বর্তমান বাংলাদেশে বিপত্সীমার মধ্যে ঢুকে পড়েছে। তাই এখনই উপযুক্ত সময় উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা। অবশ্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বর্তমান সরকার কিছু যুগোপযোগী পদক্ষেপ নিয়েছে, যা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। বিশেষ করে, বর্তমান সরকার আমদানি নিয়ন্ত্রণ, সরকারি ঋণ হ্রাস, বাজার মনিটরিং ছাড়াও মূল্যস্ফীতি কমাতে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।

এ বছরের শুরুতেই রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর দাম বেড়ে চলেছে। জ্বালানি তেল, গ্যাসের দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। যোগাযোগের মাধ্যম প্লেন, ট্রেন, বাসসহ সব যানবাহনের ভাড়া বেড়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন দেশে দেখা দিয়েছে খাদ্যসংকট। বাংলাদেশও এর প্রভাব পড়েছে। তাই বাংলাদেশেও নিত্যপণ্যের দাম হুহু করে বেড়েই চলছে। মানুষের দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী যেমন :চাল, ডাল, তেল, নুন, পেঁয়াজ, শাকসবজি থেকে শুরু করে এমন কোনো নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য নেই, যার দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে না। কিছু কিছু দ্রব্যের দাম অর্ধেকেরও বেশি বেড়েছে।

বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতির প্রধান একটি কারণ হলো উৎপাদন হ্রাস। কৃষিক্ষেত্রে আগের তুলনায় উৎপাদন বাড়লেও জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে এখনো তা আশানুরূপ নয়। এখনো নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্য আমাদের আমদানি করতে হয়। চাল, ডাল, ভোজ্য তেল, চিনিসহ বিভিন্ন অপরিহার্য পণ্যে এখনো আমাদের আমদানিনির্ভরতা রয়েছে। দেশের মানুষের অপরিহার্য পণ্যসামগ্রী দেশে উৎপাদন করতে পারলে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা সহজতর হবে। বর্তমানে নিম্ন আয়ের মানুষগুলোর জীবনে একধরনের নীরব দুর্ভিক্ষ চলছে, বলা যায়। এই দুর্ভিক্ষ যাতে মহামারি আকার ধারণ না করে, সেদিক সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। সর্বোপরি, সরকারের পরিকল্পিত উদ্যোগই দেশের সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবে।

লেখক : শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

শেয়ার করুন