গতকাল ১২ অক্টোবর অনুষ্ঠিত গাইবান্ধা-৫ (সাঘাটা-ফুলছড়ি) সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনের একপর্যায়ে ভোট গ্রহণ বন্ধ করে দিয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) দেশের নির্বাচনী ইতিহাসে নতুন নজির স্থাপন করেছে। উপনির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে অনিয়মের অভিযোগ ও দায়ে নির্বাচন বন্ধ করার ঘটনা এর আগে দেশে ঘটেনি। এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনগুলোর মধ্যে বিএনপির আমলে ১৯৯৪ সালের ২০ মার্চ অনুষ্ঠিত মাগুরা-২ আসনের নির্বাচন সবচেয়ে বেশি বিতর্কিত, নিন্দিত।
ওই নির্বাচনে তখন ক্ষমতাসীন বিএনপির সন্ত্রাসী ও মাস্তানদের ভোটকেন্দ্র দখল নির্বাচনব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছিল। ওই সময়ে জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধীদল আওয়ামী লীগসহ দেশের প্রায় সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনটি বাতিলের দাবি জানালেও ইসি তা করেনি। বর্তমান ইসি সাংবিধানিক কর্তব্য হিসেবে গাইবান্ধায় ভোট বন্ধ করার যে সাহসী সিদ্ধান্ত নেয়, তা অবশ্যই সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য।
নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন ও পরিচালনার দায়িত্ব ইসির। কোনো নির্বাচনে ভোট স্থগিত বা বাতিল করা অথবা ভোটের পর ফল বাতিল করার বিষয়ে ইসির সর্বোচ্চ ক্ষমতা আছে। ইসিকে সংবিধানে এ বিষয়ে সর্বোচ্চ ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। নির্বাচন অনুষ্ঠানকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করা ইসির সাংবিধানিক কর্তব্য। গাইবান্ধা–৫ আসনের উপনির্বাচনে তা পালন করে ইসি তাদের দায়িত্বশীলতার প্রতি মানুষের আস্থা অর্জন করেছে।
ঢাকায় বসে সিসিটিভি দেখে ভোট বন্ধ করে দেওয়া কতোটা যৌক্তিক- এ ধরনের প্রশ্ন তুলে বিতর্ক তৈরির সুযোগ তেমন নেই। প্রযুক্তি বিকশিত এ সময়ে ভোটকেন্দ্রে সিসিটিভি বসিয়ে আর এতে সংযোগ দিয়ে দূরে বসেও কেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব। আর সব কেন্দ্রে ভোট বন্ধের ঘোষণা ইসি হুট করেই দেয়নি।
গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে মোট ১৪৫টি ভোটকেন্দ্র ছিল। সব কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়। ভোট নেওয়া হচ্ছিল ইভিএমে। ঢাকার ইসি ভবনে স্থাপিত পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র থেকে সরাসরি পর্যবেক্ষণ করা হয় কেন্দ্রগুলোর পরিস্থিতি। ইসির কাছে ভোট কারচুপি বা নির্বাচনে ‘একজন প্রার্থীর প্রভাব বিস্তারের’ বিষয়টি ধরা পড়ার পর কয়েক ধাপে অর্ধশত কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত করে। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) ভাষায় ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায়’ পুরো আসনে ভোট স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয় ইসি।
আমরা দাবি জানাবো, ভোট কারচুপির সঙ্গে কারা জড়িত ও সেই ‘প্রভাবশালী প্রার্থী কে’, তা চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনার উদ্যোগ নেবে ইসি। এ ক্ষমতাও সাংবিধানিক সংস্থাটির আছে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) স্পষ্ট বলা আছে, ভোটকেন্দ্র প্রভাবিত করার অপরাধে কোনো ব্যক্তির দুই থেকে সাত বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।
আগামী ১৭ অক্টোবর দেশের ৬১টি জেলা পরিষদের নির্বাচন। ফরিদপুর-২ আসনের উপনির্বাচনে ভোট গ্রহণ হবে আগামী ৫ নভেম্বর। সামনের নির্বাচনগুলোতেও ইসি সাহসের সঙ্গে কঠোরভাবে সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করবে বলে আমাদের প্রত্যাশা। ইসি চাইলে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান আয়োজন সম্ভব- বিষয়টি আবারো সাংবিধানিক সংস্থাটিকে মনে করিয়ে দেওয়া যায়।