নতুন প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী পেল ইরাক। ফলে গত বছরের অক্টোবরে হওয়া জাতীয় নির্বাচনের পর থেকে এক বছর ধরে চলা রাজনৈতিক অচলাবস্থার অবসান হলো। বৃহস্পতিবার ভোটের মাধ্যমে ইরাকের সংসদ সদস্যরা কুর্দি রাজনীতিক আব্দুল লতিফ রাশিদকে দেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করেছে। নির্বাচিত হয়েই তিনি মোহাম্মদ শিয়া আল সুদানিকে প্রধানমন্ত্রী মনোনীত করেছেন।
ইরাকের প্রেসিডেন্ট মূলত একটি আনুষ্ঠানিক পদ। ঐতিহ্যগতভাবে একজন কুর্দি এ পদ পেয়ে থাকেন। কিন্তু একটি নতুন সরকার গঠনের পথে পার্লামেন্টের এ ভোট খুব গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, নির্বাচনের পর থেকে দেশটির রাজনীতিকরা এটিই করতে ব্যর্থ হচ্ছিলেন।
সাম্প্রদায়িক সংঘাত এড়াতে একটি ক্ষমতা ভাগাভাগি পদ্ধতি অনুযায়ী ইরাকের প্রেসিডেন্ট হন একজন কুর্দি, প্রধানমন্ত্রী শিয়া ও পার্লামেন্টের স্পিকার হন একজন সুন্নি।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, ব্রিটেনে পড়াশোনা করা প্রকৌশলী রাশিদ (৭৮) ২০০৩ থেকে ২০১০ পর্যন্ত ইরাকের পানিসম্পদ মন্ত্রী ছিলেন। তিনি দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য প্রেসিডেন্ট প্রার্থী বারহাম সালিহর বিরুদ্ধে জয় পান।
রাশিদ পার্লামেন্টের সবচেয়ে বড় জোট কোঅর্ডিনেশন ফ্রেমওয়ার্কের মনোনীত প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী সুদানিকে সরকার গঠনের আমন্ত্রণ জানান। কোঅর্ডিনেশন ফ্রেমওয়ার্ক ইরানের মিত্র দলগুলোর একটি জোট। সুদানি (৫২) এর আগে ইরাকের মানবাধিকার মন্ত্রীর পাশাপাশি শ্রম ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ছিলেন। পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে সুদানিকে মন্ত্রীসভা গঠন করে অনুমোদনের জন্য পার্লামেন্টের কাছে পেশ করতে হবে।
চলতি বছর ইরাকি পার্লামেন্টে আরও তিনবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের উদ্যোগ নিয়েছিল, কিন্তু ব্যর্থ হয়। বৃহস্পতিবার চতুর্থ উদ্যোগে সফলতা আসে। কিন্তু এর আগে বাগদাদের গ্রিন জোনের চারদিকে নয়টি রকেট এসে পড়ে বলে সামরিক বাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে।
নিরাপত্তা ও মেডিকেল সূত্রগুলো রয়টার্সকে জানিয়েছে, এসব হামলায় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে। গত মাসে পার্লামেন্টের স্পিকার নির্বাচনের সময়ও একই ধরনের হামলা হয়েছিল।
এক বছর আগে ইরাকের জাতীয় নির্বাচনে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র বিরোধী জনপ্রিয় শিয়া নেতা মোকতাদা আল সদর সবচেয়ে বড় জয় পেয়েছিলেন, কিন্তু সরকার গঠনের মতো প্রয়োজনীয় সমর্থন জড়ো করতে ব্যর্থ হন তিনি। সদর আগস্টে পার্লামেন্ট থেকে তার দলের ৭৩ আইনপ্রণেতাকে প্রত্যাহার করে নেন এবং তিনি রাজনীতি ছেড়ে দেবেন বলে ঘোষণা দেন। এতে বাগদাদজুড়ে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে এবং তার সমর্থকরা রাজধানীর সুরক্ষিত গ্রিন জোনে প্রবেশ করে একটি সরকারি প্রাসাদে হামলা চালায় এবং ইরান সমর্থিত প্রতিদ্বন্দ্বী শিয়া গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সংঘর্ষে জাড়িয়ে পড়ে।
ওই ঘটনার পর থেকে সদর নতুন আর কোনো ঘোষণা দেননি। চরম পদক্ষেপ নেওয়ার বহু নজির আছে তার, মার্কিন বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন, মন্ত্রিসভা থেকে বের হয়ে গেছেন এবং বিভিন্ন সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন। এবারও তার সমর্থকরা ইরান সমর্থিত দলগুলোর আধিপত্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে নামতে পারে বলে অনেকে আশঙ্কা করছেন।
বৃহস্পতিবার বাগদাদের প্রতিটি চেকপয়েন্টে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে, বিভিন্ন সেতু ও স্কয়ার বন্ধ রাখা হয়েছে এবং গ্রিন জোনের দিকে যাওয়া বেশ কয়েকটি সেতুতে দেয়াল তুলে সেগুলো আটকে দেওয়া হয়েছে।