ইউক্রেনের যে চারটি অঞ্চল রাশিয়া সম্প্রতি নিজ ভূখণ্ডের সঙ্গে সংযুক্তির ঘোষণা দিয়েছিল, তার মধ্যে দক্ষিণাঞ্চলীয় খেরসন অন্যতম। তবে রাশিয়ার ফেডারেশনে সংযুক্তির পরও সেখানে পাল্টা হামলা অব্যাহত রেখেছে ইউক্রেন।
এই পরিস্থিতিতে ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় এই এলাকা থেকে সাধারণ মানুষকে সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে রাশিয়া। শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের দক্ষিণে অবস্থিত খেরসন অঞ্চলের রাশিয়ান-নিযুক্ত নেতা ভ্লাদিমির সালদো বেসামরিক নাগরিকদের ওই এলাকা থেকে সরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। মূলত প্রতিদিন ইউক্রেনীয় বাহিনীর রকেট হামলা ও অগ্রাভিযানের কথা উল্লেখ করে এই নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
রুশ নিযুক্ত এই নেতা খেরসনের সাধারণ মানুষকে ‘নিজেদের বাঁচাতে’ রাশিয়া গিয়ে তাদের ‘অবসর সময় কাটাতে এবং অধ্যয়নের’ আহ্বান জানান। একইসঙ্গে এই বিষয়ে মস্কোর সাহায্য চেয়েছেন তিনি। পরে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে এক দেওয়া এক বার্তায় রাশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী মারাত খুসনুলিন ভ্লাদিমির সালদোর এই আহ্বানকে সমর্থন করেন।
অবশ্য ইউক্রেন তার নিজস্ব বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্য করে রকেট হামলা চালানোর অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। ইউক্রেনীয় সৈন্যরা সম্প্রতি রাশিয়ার দখল থেকে উত্তর-পশ্চিম খেরসনের কিছু এলাকা পুনরুদ্ধার করেছে। এই এলাকাটি আঞ্চলিক রাজধানী খেরসন শহরের কাছেই অবস্থিত।
বিবিসি বলছে, দক্ষিণ রাশিয়া এবং ক্রিমিয়ার জন্য বিশেষ দায়িত্ব পালন করছেন রুশ উপ-প্রধানমন্ত্রী মারাত খুসনুলিন। খেরসন থেকে সাধারণ মানুষকে চলে যাওয়ার নির্দেশনা নিয়ে তিনি বলেন, ‘সরকার (খেরসন) অঞ্চলের বাসিন্দাদের দেশের অন্যান্য অঞ্চলে চলে যেতে সহায়তার ব্যবস্থা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা প্রত্যেককে বিনামূল্যে বাসস্থান এবং প্রয়োজনীয় সবকিছু প্রদান করব।’
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তাসংস্থা তাসকে রোস্তভ অঞ্চলের গভর্নর ভ্যাসিলি গোলুবেভ বলেছেন, খেরসন থেকে বেসামরিক মানুষের প্রথম দলটি শুক্রবার রাশিয়ার রোস্তভ অঞ্চলে পৌঁছাবে। খেরসন অঞ্চল থেকে যারা আমাদের কাছে আসতে চায় রোস্তভ অঞ্চল তাদের প্রত্যেককে গ্রহণ করবে এবং জায়গা দেবে।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর পর রুশ আগ্রাসন মোকাবিলায় পশ্চিমা দেশগুলো বিপুল পরিমাণ অস্ত্র সহায়তা দিয়েছে। তবে অন্যান্য অস্ত্রশস্ত্রের মধ্যে, যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহকৃত হিমারস রকেট সিস্টেমকে দারুণভাবে ব্যবহার করছে ইউক্রেন।
তারা রাশিয়ান-নিয়ন্ত্রিত প্রধান সামরিক লক্ষ্যবস্তুগুলোতে হামলা করেছে এবং ডিনিপার নদীর পশ্চিম তীরে (ইউক্রেনে ডিনিপ্রো নামে পরিচিত) রুশ বাহিনীর বেশিরভাগ অংশ পুনরুদ্ধারের হুমকি দিয়েছে।
মূলত গত ২৪ ফেব্রুয়ারি মস্কোর আক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে খেরসনই একমাত্র আঞ্চলিক রাজধানী যা রুশ বাহিনী দখলে নিয়েছে।
খেরসন অঞ্চলের রাশিয়ান-নিযুক্ত নেতা ভ্লাদিমির সালদো বৃহস্পতিবার বলেন, দুই প্রধান শহর খেরসন এবং নোভা কাখোভকাসহ এই অঞ্চলের অনেক শহর এখন প্রতিদিনই ইউক্রেনীয় সেনাদের রকেট হামলার শিকার হচ্ছে।
তিনি বলেন, এই ধরনের হামলা সমগ্র অঞ্চলের বাসিন্দাদের গুরুতর ক্ষতির কারণ হচ্ছে এবং বিশেষ করে ডিনিপার নদীর পশ্চিম তীরের বাসিন্দাদের বেশি ক্ষতি হচ্ছে। আর তাই এসব এলাকার মানুষকে রাশিয়া বা ক্রিমিয়াতে সরে যেতে আহ্বান জানান তিনি।