করোনা সংকট, জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে দেশে দেশে দুর্ভোগ হতে পারে বলে আভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। বিশ্বে নতুন করে দারিদ্র্যতার কাতারে শামিল হবে সাত কোটির বেশি মানুষ। অনেক উন্নয়ন দেশও নানা ধরনের সংকটে পড়বে। এজন্য খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিসহ বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলায় এক যোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক।
গত জুন মাস থেকেই জাতিসংঘ বলে আসছে চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকেই বিশ্বে খাদ্যসংকট বাড়তে থাকবে। আর ২০২৩ সালে এ সংকট অনেক দেশে ছড়িয়ে পড়বে। এবার সেই সংকটকে আরও সুনির্দিষ্ট করে দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংক। বৈশ্বিক এ মন্দার কবলে পড়লে বিশ্বের ৩৫ কোটি মানুষ খাদ্যসংকটে পড়বে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করছে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ।
বিশ্বে ৪৮টি দেশের প্রায় চার কোটি মানুষ এখন চরম খাদ্যসংকটে আছে। আইএমএফ বলছে, এর মধ্যে কোস্টারিকা, বসনিয়া ও রুয়ান্ডার অবস্থা সবচেয়ে বেশি খারাপ।
সংস্থাটি জানায়, করোনা মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ আর মোড়ল দেশগুলোর আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা বিশ্বকে ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে। এরই মধ্যে এ সংকটের আঁচ লেগেছে ছোট-বড় সব অর্থনীতির দেশে। এতে জ্বালানি তেলের চড়া দাম ও লাগামহীন মূল্যস্ফীতিতে খাদ্য ঘাটতি সৃষ্টি হবে। এ সংকট থেকে মানুষকে বাঁচাতে সরকার প্রধানদের সতর্ক হওয়ার তাগিদ দিয়েছে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ।
গত ১০ অক্টোবর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে শুরু হওয়া বিশ্বব্যাংক গ্রুপ ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বার্ষিক সাধারণ সভায় এ খাদ্যসংকটের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। সাতদিনের এ বার্ষিক সভায় বিশ্ব মন্দা এবং খাদ্যসংকট আলোচনার মূল কেন্দ্রবিন্দু। বিশ্বের ১৯৩টি দেশের অর্থমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নররা এতে অংশ নিচ্ছেন। এছাড়া যোগ দিয়েছেন বিভিন্ন দেশের নীতিনির্ধারক, বেসরকারি খাত ও সিভিল সোসাইটির প্রতিনিধি ও বিশেষজ্ঞরা।
প্লেনারি সেশনের আগের দিন স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর) বিশ্বব্যাংক গ্রুপের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস ও আইএমএফ ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা পৃথক সংবাদ সম্মেলনে বিশ্বে খাদ্যসংকটের বিষয়ে কথা বলেন।
বিশ্ব ব্যাংক ও আইএমএফ বলছে, বিশ্ব চরম খাদ্যসংকটের দিকে যাচ্ছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বাড়তে থাকা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে এ সংকট কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা বলা কঠিন। কোটি কোটি মানুষকে চরম খাদ্যসংকটের মধ্যে যেতে হবে। তবে এর থেকে উত্তরণের পথ রয়েছে।
সংস্থা দুটি বলছে, এক্ষেত্রে বিশ্বের প্রতিটি দেশকে রাজনৈতিকভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, কীভাবে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানো যায় ও মূল্যস্ফীতি কমানো যায়, তার দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। এক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ অতিরিক্ত ঋণ দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছে। কোনো দেশের প্রয়োজন হলে কোনো ধরনের ইতস্ততা না করে ঋণ প্রস্তাব পাঠানোর কথা বলা হয়েছে।
আইএমএফ ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বলেন, কোভিডকালীন বিশ্বের যে ক্ষতি হয়েছে, তা কেটে না উঠতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ অনেক দেশেই এখন মন্দাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। অনেক দেশ এখনই সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। করোনার শুরু থেকে এ পর্যন্ত ৯৩টি দেশকে ২৬০ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছে আইএমএফ। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত সম্পর্কিত আরেকটি তহবিল থেকে বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর জন্য ৪০ বিলিয়ন ডলারের যোগাড় হয়েছে বলে জানান আইএমএফের এমডি ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা।
তিনি বলেন, ঋণ দেওয়ার মতো আরও ৭০০ বিলিয়ন ডলার আছে আইএমএফের হাতে। কোনো দেশের সংকট সময়ে ঋণের প্রয়োজন হলে আইএমএফকে জানালে আমরা সেভাবে ব্যবস্থা নেবো।
আইএমএফ প্রধান ডেভিড ম্যালপাস বলেন, জ্বালানি সংকট আগামী দিনের অর্থনীতির গতি প্রকৃতি ঠিক করবে। সংকট সামাল দিতে তাই মুদ্রা নীতি ও রাজস্ব নীতির সতর্ক সমন্বয়ের তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট বলেন, আগামী বছরের বিশ্বে মহামন্দা দেখা দিতে পারে। মহামন্দার ফলে জ্বালানির চড়া দাম ও লাগামহীন মূল্যস্ফীতিতে খাদ্য ঘাটতি সৃষ্টি হবে। এবারের মন্দা উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য ভয়াবহ হবে। এজন্য সংকট এড়াতে মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে হবে। বিশেষ করে মহামন্দায় গরিব মানুষকে নিয়ে শঙ্কার কথা বলেছেন বিশ্বব্যাংক প্রধান।