জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলায় ২০২২ অর্থবছরে রেকর্ড পরিমাণ অর্থায়নের ঘোষণা দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। এ খাতে এ অর্থবছরে ৩২ দশমিক ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থায়ন করেছে সংস্থাটি। জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলায় এর আগে কখনো এ পরিমাণে অর্থায়ন করেনি সংস্থাটি। এ খাতে বাংলাদেশেও নানা উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থায়ন করেছে বিশ্বব্যাংক। জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলা ও ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারে এ অর্থ ব্যবহার করা হবে। তবে গত ২০২১ অর্থবছরে এ খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৩১ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
শুক্রবার (১৪ অক্টোবর) ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত বিশ্বব্যাংকের প্রধান কার্যালয় থেকে এ তথ্য জানা গেছে। সংস্থাটির ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি) এ ঘোষণা দিয়েছে।
আইএফসি উন্নয়নশীল দেশগুলোকে বেসরকারি পর্যায়ে উন্নয়ন ও সম্পদ ব্যবস্থাপনায় বিনিয়োগ এবং পরামর্শ দিয়ে থাকে। আইএফসি হলো বিশ্বব্যাংক গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান এবং এর সদরদপ্তর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে শুধু ব্যক্তিখাতের উন্নয়ন ও লাভজনক প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিনিয়োগ ও উন্নয়নের জন্য ১৯৫৬ সালে বিশ্বব্যাংকের একটি শাখা হিসেবে এটিকে প্রতিষ্ঠিত করা হয়। দারিদ্র্য বিমোচন, অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের সরকারের অর্থনীতির ওপর থেকে চাপ কমিয়ে ব্যক্তিখাতে জনসাধারণের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দেশের বিদ্যমান সম্পদকে কাজে লাগিয়ে প্রাইভেট এন্টারপ্রাইজকে শক্তিশালী করা এবং ব্যক্তিপর্যায়ে ব্যবসার সম্প্রসারণই হলো আইএফসির অন্যতম লক্ষ্য।
বিশ্বব্যাংক জানায়— রেকর্ড ৩২ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে ৪ দশমিক ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলায় ব্যবহার করা হবে। এছাড়া ৯ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ব্যবহার করা হবে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারে। বাকি অর্থ বিশ্বব্যাংকের ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (আইডিএ) সদস্যভুক্ত দেশগুলো ব্যবহার করবে। আইডিএ একটি আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থা যা উন্নয়নশীল দেশগুলোর উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের জন্য ঋণ ও অনুদান দিয়ে থাকে। বিশ্বব্যাংকের আনুষ্ঠানিক লক্ষ্য হলো বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য বিমোচন। বিশ্বের ১৮৯টি সদস্য দেশ নিয়ে গঠিত এ আন্তর্জাতিক সংস্থাটি। সব দেশ তাদের চাহিদা অনুযায়ী এ অর্থ ব্যবহার করতে পারবে।
বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস বলেন, জলবায়ু মোকাবিলায় ২০২২ সালকে আমরা বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। উন্নয়ন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে জলবায়ু সম্পর্কিত প্রকল্পগুলো চিহ্নিত করেছি। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন ও ব্যবসা সম্প্রসারণে এ অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলো। কার্বন নিঃসরণ কমানোই আমাদের লক্ষ্য। এটা কমিয়ে কীভাবে টেকসই উন্নয়ন করা যায় তা বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলা সংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলোর জন্য বিশ্ব সম্প্রদায় থেকে বিপুল পরিমাণ তহবিল সংগ্রহ করে তা সরবরাহ করবো। বর্তমান বৈশ্বিক সংকটে জলবায়ু মোকাবিলা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু।’
বিশ্বব্যাংক জানায়— জলবায় পরিবর্তন, ইউক্রেন যুদ্ধ এবং কোভিড-১৯ মহামারির জন্য খাবারের দাম বেড়েছে এবং কমেছে আয়। ২০২২ সালে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার সংখ্যা কমপক্ষে ৩০ শতাংশ বেড়ে ১২৩ মিলিয়ন হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে খরা, বন্যার ক্রমবর্ধমান ধাবা এবং তীব্রতা ঘূর্ণিঝড়ের পাশাপাশি উচ্চ তাপমাত্রা এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতায় বিপাকে পড়েছে বিশ্ব। খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার সামষ্টিক অর্থনৈতিক ফলাফল দীর্ঘস্থায়ী বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং দারিদ্র্যের ওপর। জলবায়ু পরিবর্তনের টেকসই অভাব মোকাবিলায় যথেষ্ট অর্থায়ন এবং সক্ষমতার সীমাবদ্ধতার পটভূমিতে সতর্ক নীতি অগ্রাধিকার প্রয়োজন।
মূল ক্ষেত্রগুলোর মধ্যে যা সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলতে পারে এর মধ্যে রয়েছে— সামাজিক সহায়তা এবং দক্ষ পাবলিক অবকাঠামো বিনিয়োগের ওপর দৃষ্টি আকর্ষণ করা। দরিদ্র পরিবারের সাশ্রয়ী মূল্যের খাদ্যের অ্যাক্সেসকে উন্নত করতে সহায়তা করবে বিশ্বব্যাংক। জলবায়ু-স্থিতিস্থাপক কৃষি উৎপাদনের সম্প্রসারণকে সহজতর করতে পারে এবং প্রতিকূল জলবায়ু থেকে দ্রুত পুনরুদ্ধারে সহায়তা করতে পাশে থাকবে বিশ্বব্যাংক।
ডিজিটালাইজেশন এবং টেলিযোগাযোগের উন্নতি করা অর্থের অ্যাক্সেসকে সমর্থন করার জন্য কৃষির টেকসই এবং উত্পাদনশীলতায় বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ানোর মূল চাবিকাঠি বলে মনে করে সংস্থাটি। দরিদ্র গ্রামীণ এবং শহুরে পরিবারের উপার্জন ক্ষমতা বাড়ানো হবে। বৃহত্তর আঞ্চলিক বাণিজ্য একীকরণ, টেকসই পরিবহন পরিকাঠামোর সঙ্গে পরিপূরক, একটি দেশের বাম্পার ফসল বিক্রি করতে সক্ষম করে তার প্রতিবেশীদের কাছে যোগাযোগ উন্নত করা হবে। খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা দূর কর করতে নানা উদ্যোগ নেবে বিশ্বব্যাংক। খাদ্য মূল্যের স্থিতিশীলতার প্রচারের মাধ্যমে পরিবারের কল্যাণের যথেষ্ট উন্নতি করা হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আর্থিক সহায়তায় সাহায্য করতে পারে বিশেষ করে সামাজিক সহায়তা এবং মূল অবকাঠামোর সক্ষমতা উন্নয়ন করা হবে। কৃষির প্রযুক্তির হস্তান্তর এবং জ্ঞানের প্রসারে সহায়তা দেবে বিশ্বব্যাংক।