জলবায়ু পরিবর্তনে ‘অত্যন্ত উচ্চ ঝুঁকিতে’ শত কোটি শিশু

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

বিশ্বব্যাপী চরম আকার ধারণ করেছে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব। বিশ্বজুড়ে দেখা দিচ্ছে ভয়াবহ সব প্রাকৃতিক দুর্যোগের। বন্যা, খরা, দাবানল থেকে শুরু করে এর প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছে প্রাণিকুল এবং মানব সমাজেও। নষ্ট হচ্ছে ফসল অসুস্থ হচ্ছে জীব প্রজাতি। সম্প্রতি একটি সংগঠন জানিয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ঝুঁকিতে রয়েছে শত কোটি ‍শিশু।

ডাচ ভিত্তিক অধিকার গোষ্ঠী কিডসরাইটস বুধবারের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতির কারণে প্রায় শত কোটি শিশু ‘অত্যন্ত উচ্চ ঝুঁকিতে’ রয়েছে। এছাড়াও যুবকদের জীবনযাত্রার মান গত দশকে উন্নতি করতে ব্যর্থ হয়েছে।

ইউএন এজেন্সির মাধ্যমে সরবরাহ করা পরিসংখ্যানের ওপর ভিত্তি করে কিডসরাইটস সূচক আরও বলেছে, বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি শিশু যার সংখ্যা প্রায় ৮২ কোটি, বর্তমানে উচ্চ তাপমাত্রার সংস্পর্শে এসেছে।

ডাচ এনজিও কিডসরাইটস জানিয়েছে, বিশ্বব্যাপী পানির ঘাটতির সম্মুখিন হয়েছে ৯২ কোটি শিশু। যেখানে ম্যালেরিয়া এবং ডেঙ্গুর মতো রোগের সংস্পর্শে এসেছে প্রায় ৬০ কোটি শিশু বা প্রতি চার শিশুর একজনকে।

কিডসরাইটস ইন্ডেক্স মূলত প্রথম এবং একমাত্র র‌্যাঙ্কিং যা শিশুদের বার্ষিক অধিকারকে কীভাবে সম্মান করা সেটি পরিমাপ করে থাকে। সংস্থাটির র‌্যাংকিং অনুসারে শিশু অধিকারের দিক দিয়ে ১৮৫টি দেশের মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে আইসল্যান্ড, সুইডেন এবং ফিনল্যান্ড। আর এই তালিকার নিচের দিকে রয়েছে সিয়েরা লিওন, আফগানিস্তান এবং চাদকে। শীর্ষ তিনটি দেশের মধ্যে শুধু সুইডেনের র‌্যাঙ্কিং আগের বছরের থেকে পরিবর্তিত হয়েছে। দেশটি চতুর্থ স্থান থেকে দ্বিতীয় স্থানে চলে এসেছে।

কিডসরাইটসের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান মার্ক ডুলায়ার্ট এই বছরের প্রতিবেদনটিকে ‘আমাদের বর্তমান এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের শিশুদের জন্য উদ্বেগজনক’ বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি আরও বলেন, ‘একটি দ্রুত পরিবর্তনশীল জলবায়ু এখন তাদের ভবিষ্যত এবং তাদের মৌলিক অধিকারকে হুমকির মুখে ফেলছে। গত দশকে শিশুদের জীবনের মানদণ্ডে কোন উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি এবং কোভিড-১৯ মহামারি তাদের ওপর মারাত্মকভাবে প্রভাব ফেলেছে।’

কোভিড-১৯ মহামারি শিশুদের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলেছিল। লক ডাউনের ফলে অনেক ক্লিনিক বন্ধসহ নানা প্রতিবন্ধকতা ছিল। ফলে অনেক শিশুর জন্যই পর্যাপ্ত খাবার এবং ওষুধ সরবরাহ করা যায়নি। কিডসরাইটসের তথ্য মতে এর ফলে পাঁচ বছরের কম বয়সী প্রায় ২ লাখ ৮৬ হাজার শিশু মারা গেছে।

দুই দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো শিশু শ্রমিকের সংখ্যা ১৬ কোটিতে উন্নীত হয়েছে। যার মধ্যে শুধু গত চার বছরেই বেড়েছে ৮০ লাখ ৪০ হাজার। কিডসরাইটস অ্যাঙ্গোলা এবং বাংলাদেশকে হাইলাইট করে বলেছে, দেশ দুটি শিশুদের অধিকারের ক্ষেত্রে তাদের স্কোর উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত করেছে।

অ্যাঙ্গোলা তার পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর হার অর্ধেকেরও বেশি কমিয়েছে এবং যেখানে বাংলাদেশ কম ওজনের পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুর সংখ্যা প্রায় অর্ধেকে কমিয়েছে। উল্লেখ্য, কিডসরাইটস জাতিসংঘের তথ্য ব্যবহার করে কোন দেশ কিভাবে জাতিসংঘের শিশু অধিকার কনভেনশন মেনে চলছে সেটি পরিমাপ করে থাকে ।

শেয়ার করুন