২০ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় খুলেছে দীর্ঘদিন বন্ধের পর। সরগরম মধুর ক্যান্টিন।বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এসে অবস্থান নিয়েছেন ক্যান্টিনের বিভিন্ন টেবিলে। আমরা জাতীয় ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দও কয়েকটি টেবিল একত্র করে বসে পড়লাম। চারদিকে গুঞ্জন উঠল। আমাদের দুঃসাহসে অনেকেই অবাক হয়ে গেল।(ইতিমধ্যে আমরা খবর পেয়েছি যে জাসদ নেতৃত্ব আমাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিবে না মর্মে সিদ্ধান্ত নিয়েছে)। টেবিল জুড়ে আমরা ক’জনা…মাহবুব জামান বক্তৃতা দিলেন এবং তারপরই জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু বলে শুরু হল আমাদের মিছিল। জাতীয় ছাত্রলীগের ব্যানারে প্রথম মিছিল বের করেছিলাম। মিছিলে আরও যাঁরা ছিলেন,তাঁরা হলেন ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক মাহবুব জামান, ছাত্র ইউনিয়নের নেতা কাজী আকরাম হোসেন ও অজয় দাশগুপ্ত, ছাত্রলীগের নেতা রবিউল আলম চৌধুরী, মমতাজ হোসেন, খালেদ খুররম এবং বিশ্ববিদ্যালয় ও নগর ছাত্রলীগের নেতা শহীদুল আলম বাদল, মৃণাল সরকার, কামরুল আহসান খান, খ ম জাহাঙ্গীর, বাহলুল মজনুন চুন্নু, হাবিবুর রহমান, মুকুল বোস, স ম সালামসহ ৪০ থেকে ৫০ জন ছাত্রকর্মী।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-শিক্ষক নির্বিশেষে সকলেই অবাক বিস্ময়ে দেখল আমাদের। অনেকেই আমাদেরকে স্বাগত জানাল। শিক্ষকদের কেউ কেউ আমাদের কাউকে কাউকে ডেকে নিয়ে পড়াশোনায় মনোযোগী হতে বললেন এবং সামরিক শাসনের ভয়াবহতা সম্পর্কে সাবধান করে দিলেন (হিতাকাঙ্ক্ষী হিসেবে)।আমাদের এই মিছিল প্রথম সংঘবদ্ধ মিছিল বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদে। এ মিছিল স্বৈরাতান্ত্রিক অবৈধ শাসক মোশতাকের বিরুদ্ধে তখতে তাউসকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল আর কাঁপিয়ে দিয়েছিল সমগ্র ঢাকা নগরীকে।
আমাদের এই মিছিল মুজিবাদর্শের সৈনিকদেরকে আশার আলো দেখিয়েছিল। তাঁদেরকে সংঘবদ্ধ হতে সাহস যুগিয়েছিল। তাই পঁচাত্তরের পনেরই আগষ্ট যেমন বাঙালির ইতিহাসের সবচেয়ে ঘৃণ্য হত্যাকাণ্ড তেমনই ২০ অক্টোবর পঁচাত্তর বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও সংগ্রামের ইতিহাসের এক মাইলফলক।
লেখক : সংসদ সদস্য,
যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা, পঁচাত্তর-পরবর্তী প্রতিরোধ যোদ্ধা,
সম্পাদক, মত ও পথ।