গত ১৭ অক্টোবর সারাদেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে জেলা পরিষদ নির্বাচন। এ নির্বাচনে জনপ্রতিনিধিদের চরিত্রকে কলুষিত করতে কী পরিমাণ অর্থ ছড়াছড়ির অসুস্থ প্রতিযোগিতা হয়েছে সেই চিত্রও বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনে উঠে আসছে। সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকের প্রতিবেদনে দেখা গেছে শুধুমাত্র ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান ও সদস্য পদে ৫৮ প্রার্থী মিলে পৌরসভার মেয়র-কাউন্সিলর ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান-মেম্বারদের মাঝে ১০ কোটি টাকা বিতরণ করেছেন! একটি ভোট কেনার জন্য চেয়ারম্যান প্রার্থীরা ১০-২০ হাজার এবং সদস্য পদ প্রার্থীরা দুই লাখ টাকা পর্যন্ত বিতরণ করেছেন! সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হচ্ছে এই নির্বাচনে যারা ভোটার তারা প্রত্যেক প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কাছ থেকে টাকা গ্রহণ করছে!
টাঙ্গাইল জেলা পরিষদ নির্বাচনে বাসাইলের এক সদস্য প্রার্থী বিতরণকৃত টাকা ফেরত চেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাসও দিয়েছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘জেলা পরিষদ নির্বাচন (বাসাইল) সদস্য-১১। আমরা চারজন প্রার্থী ছিলাম। ভোটার ছিল ৯৪ জন। দিন শেষে জানা গেল, প্রত্যেক প্রার্থী ৫০ থেকে ৬০ জন ভোটারকে টাকা দিয়েছেন। তার মধ্যে আমাকে ৬০ জন ভোটার কথা দিলেও এর মধ্যে কম-বেশি ৫৫ জন ভোটার আমার কাছ থেকে টাকা গ্রহণ করল। ভোট দিল মাত্র ৭ জনে।’
অর্থ ছড়াছড়ির এধরনের অসুস্থ প্রতিযোগিতা যে শুধু ব্রাহ্মণবাড়িয়া কিংবা টাঙ্গাইলে হয়েছে এমন নয়, প্রত্যেক জেলার একই চিত্র। কাজেই আমরা মনে করি, এধরনের নির্বাচন আমাদের জাতির জন্য, দেশের জন্য কোনোভাবেই কাম্য নয়। কেননা এখানে সত্যিকারের কোনো নির্বাচন হয়নি। নির্বাচনের নামে এখানে ভোটাদের মাঝে (জনপ্রতিনিধি) ন্যাক্কারজনকভাবে অর্থের ছড়াছড়ি ঘটিয়ে তাদের চরিত্র হনন করা হয়েছে। কাজেই অর্থ বিতরণের মাধ্যমে নির্বাচিতরাও জনপ্রতিনিধি নয়,তারা টাকার প্রতিনিধি। এমনকি তারা যে জনকল্যাণে ভূমিকা রাখবেন সেটা আশা করাও বাস্তব সম্মত নয়।
সবশেষে, জেলা পরিষদ নির্বাচনে নিয়মভঙ্গ করে মন্ত্রী-এমপিরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বারদেরকে ভয়ভীতি দেখানোর মাধ্যমে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার বিষয়টিও নজিরবিহীন। নির্বাচন কমিশন ভোটগ্রহণটি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করলেও নির্বাচনী প্রচারে তারা যেহেতু কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করতে পারেননি, সেহেতু এটি তাদের একটি ব্যর্থতা হিসেবে চিহ্নিত হবে।