ব্ল্যাকআউটের শঙ্কায় দেশজুড়ে বিদ্যুৎ ব্যবহার সীমিত করল ইউক্রেন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

দেশজুড়ে বিদ্যুৎ ব্যবহার সীমিত করল ইউক্রেন। ছবি : ইন্টারনেট

রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলায় ধ্বংস হচ্ছে ইউক্রেনের একের পর এক বিদ্যুৎ অবকাঠামো। এতে করে চরম সংকটে পড়েছে ইউক্রেন। এর ফলে রুশ আগ্রাসন শুরুর পর বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) থেকে প্রথমবারের মতো দেশব্যাপী বিদ্যুৎ ব্যবহার সীমিত করার ঘোষণা দিয়েছে দেশটি।

এছাড়া বিদ্যুৎ সংকটের মধ্যে মোবাইল ফোন, পাওয়ার ব্যাংক এবং টার্চ-সহ প্রয়োজনীয় সবকিছুতে চার্জ দিয়ে রাখতে ইউক্রেনীয়দের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স এবং সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

universel cardiac hospital

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দফায় দফায় রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার কারণে শীত শুরু হওয়ার ঠিক আগে কিছু বিদ্যুৎ কেন্দ্র ধ্বংস হয়ে গেছে। এতে করে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইউক্রেন বৃহস্পতিবার প্রথমবারের মতো দেশব্যাপী বিদ্যুৎ ব্যবহার সীমিত করার ঘোষণা দিয়েছে।

ইউক্রেনের সরকারি কর্মকর্তা এবং গ্রিড অপারেটর ইউক্রেনারগো জানিয়েছে, সকাল ৭ টা থেকে রাত ১১ টার মধ্যে দেশব্যাপী বিদ্যুৎ সরবরাহ সীমিত করার পাশাপাশি বিধিনিষেধ জারি থাকবে। এছাড়া লোকেরা তাদের বিদ্যুতের ব্যবহার না কমালে অস্থায়ী ব্ল্যাকআউট হতে পারে বলে জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির একজন সহকারি।

এদিকে বিবিসি জানিয়েছে, রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কারণে দেশের বহু এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার কারণে ইউক্রেনের জাতীয় জ্বালানি কোম্পানি বৃহস্পতিবার সকাল ৭টার মধ্যে নাগরিকদের ‘সবকিছু চার্জ’ করার আহ্বান জানিয়েছে।

ইউক্রেনের এসব পদক্ষেপের মধ্যেই বুধবার আবারও রাশিয়ান ক্ষেপণাস্ত্রগুলো দেশটির জ্বালানি কেন্দ্রগুলোতে আঘাত হানে। এসব হামলা মূলত গত ১০ অক্টোবর থেকে হয়ে আসা এই ধরনের হামলারই অংশ।

গ্রিড অপারেটর ইউক্রেনারগো জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার এক সময়ে চার ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিভ্রাট সারা দেশে প্রভাব ফেলবে। আর তাই ফোন, পাওয়ার ব্যাংক, টর্চ এবং ব্যাটারি চার্জ করা দরকার বলে নাগরিকদের তাগিদ দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া বর্তমান পরিস্থিতিতে পানি মজুদ করার পাশাপাশি ‘পরিবার ও বন্ধুদের জন্য শরীর উষ্ণ রাখতে সহায়তাকারী মোজা এবং কম্বল’ রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য ইউক্রেনীয়দের কাছে আবেদন করেছে সংস্থাটি।

এর আগে প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছিলেন, রাশিয়ার বিমান হামলায় ইউক্রেনের ৩০ শতাংশ পাওয়ার স্টেশন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ইউক্রেনের বিদ্যুৎ ও পানির অবকাঠামোতে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা জোরদার করেছে রাশিয়া।

ইউক্রেনারগো বলেছে, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার আগ্রাসনের পর থেকে গত আট মাসের তুলনায় গত ১০ দিনে বিদ্যুৎ অবকাঠামোগুলোতে বেশি হামলা হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, ‘ঠান্ডা আবহাওয়া শুরু হওয়ার সাথে সাথে আমরা আরও ঘন ঘন আপনাদের সাহায্য চাইব।’

এদিকে বুধবার রাতের ভিডিও ভাষণে প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, ‘রাশিয়ার হামলায় গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো নতুন করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শত্রুরা আজ তিনটি বিদ্যুৎ অবকাঠামো ধ্বংস করেছে।’

তিনি বলছেন, ‘আমরা শীতের কথা মাথায় রেখে সব ধরনের পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমরা ধরে নিচ্ছি, মিত্রদের সহায়তায় আমরা শত্রুদের শতভাগ মিসাইল এবং ড্রোন গুলি করে নামানোর সক্ষমতা অর্জন না করা পর্যন্ত বিদ্যুৎ অবকাঠামোগুলোতে রাশিয়ার সন্ত্রাস চলতেই থাকবে।’

ইউক্রেনের পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর লভিভের মেয়র বলেছেন, রুশ হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত পাওয়ার সাবস্টেশন মেরামত করতে কয়েক মাস সময় লাগতে পারে।

শেয়ার করুন