আশুগঞ্জ উপজেলা আ’লীগের সভাপতি হাজী সফিউল্লাহ, সম্পাদক আবু নাছের

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

হাজী মো: সফিউল্লাহ মিয়াকে সভাপতি ও আবু নাছের আহমেদকে সাধারণ সম্পাদক করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।

রোববার (২৩ অক্টোবর) বিকেলে উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন শেষে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি এ কমিটি ঘোষণা করেন। এর আগে সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে স্থানীয় সরকারি হাজী আব্দুল জলিল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

universel cardiac hospital

ঘোষিত আংশিক কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. হানিফ মুন্সী, সহ-সভাপতি মো. আনিসুর রহমান, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক রুবেল সিকদার, সাংগঠনিক সম্পাদক আতাউর রহমান কবির।

আগামী ৯ নভেম্বরের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করার নির্দেশ দেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী।

এর আগে সম্মেলনের প্রধান অতিথি আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ এমপিসহ কেন্দ্রীয় ও জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতৃবৃন্দ কাউন্সিলরদের সাথে পরামর্শ করে তাদের মতামত নেন।

আশুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তব্য প্রদান করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি।

সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তব্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী বলেন, আজকে আমরা এক কঠিন সময়ের সম্মুখীন। একদিকে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির অভিযাত্রা, আরেকদিকে এই অভিযাত্রাকে থমকে দিতে অন্ধকারের সরীসৃপদের সহিংসতা। এই অবস্থার মধ্য দিয়ে আজকের সম্মেলন হচ্ছে, আমরা আশা করি সম্মেলনকে সফল করতে যেভাবে আপনারা প্রত্যেকটা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে নিরলসভাবে কাজ করেছেন, আগামীতেও আপনারা জাতীয় সংসদের নির্বাচনে একইভাবে কাজ করে এই আসনে আমাদের প্রার্থীকে বলেন বিজয়ী করবেন।

বিএনপির শাসনামলে সবচেয়ে বড় মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে: হানিফ

সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, বিএনপি ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিল। সে সময়ে কী ইতিহাস তৈরি করেছিলেন আপনারা, মনে পড়ে? আওয়ামী লীগের মাঠ পর্যায়ের ২৬ হাজার নেতাকর্মী আপনাদের সন্ত্রাসীদের হাতে প্রাণ হারিয়েছিল। তখন কোথায় ছিল মানবাধিকার?

২০০৪ সালের ২১ আগস্টে শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে বিএনপি গ্রেনেড হামলা চালিয়েছিল দাবি করে হানিফ বলেন, ওই হামলায় আওয়ামী লীগের ২৪ জন নেতাকর্মী প্রাণ হারিয়েছিল। হামলায় আহত ৫০০ জন এখনো মানবেতর জীবনযাপন করছে। মানুষ কি এসব ভুলে গেছে? আজ আপনারা মানবতার কথা বলেন। লজ্জা হওয়া উচিত।

উদাহরণ টেনে হানিফ বলেন, ‘বোমা হামলায় আহত অর্থমন্ত্রী শাহ এম এস কিবরিয়া যখন মৃত্য পথযাত্রী তখন একটি হেলিকপ্টারের ব্যবস্থা করার জন্য বলা হয়েছিল, আপনারা দেননি। অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় আনার পথে তিনি মারা যান। আহসানউল্লাহ মাস্টারকে জনসভায় যাওয়ার পথে বিএনপির সন্ত্রাসীরা হত্যা করে। নাটোরের মমতাজ উদ্দিনকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। তখন কোথায় ছিল আপনাদের মানবাধিকার?’

বিএনপি-জামায়াত নতুন করে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে অভিযোগ হানিফ বলেন, বিএনপির দেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল। দুর্নীতিতে পরপর পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। সেই দেশ বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। নিজস্ব অর্থে পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী টানেল, ঢাকায় মেট্রোরেল, পায়রা বন্দরসহ অজস্র উন্নয়ন হয়েছে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের বুকে উন্নয়নের রোল মডেল।

যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক জেফরি শ্যাস শেখ হাসিনাকে মুকুটের মধ্যে মণি বলেছেন দাবি করে হানিফ বলেন, গোটা বিশ্ব যখন বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রশংসা করছে, তখন আমাদের দেশে স্বাধীনতাবিরোধী বিএনপি-জামায়াত নতুন করে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। তারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়।

আওয়ামী লীগ কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিতে বাধা দেয় না দাবি করে হানিফ বলেন, মির্জা ফখরুল সাহেব বলেছেন- এই সরকার নাকি সংবিধান লঙ্ঘন করছে। আমি জানতে চাই, আওয়ামী লীগ কোন ধারায়, কোথায় সংবিধান লঙ্ঘন করেছে। আপনি সংবিধান লঙ্ঘনের কথা বলেন অথচ আপনার দলের জন্মই অসাংবিধানিক পন্থায়। বন্দুকের নলে ক্ষমতা দখল করে অবৈধ পথে জন্ম হয়েছে। আগে নিজের দলের জন্মকে সাংবিধানিক পন্থায় ঠিক করুন, তারপর কথা বলুন।

আওয়ামী লীগের এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, দেশ স্বাধীনের পর আওয়ামী লীগ সংবিধান প্রতিষ্ঠা করেছে। আওয়ামী লীগ সংবিধান অনুযায়ী চলে। সংবিধানের প্রতি যদি এতই দরদ থাকে তাহলে অসাংবিধানিক পন্থা বাদ দিয়ে সংবিধান অনুযায়ী আগামী সংসদ নির্বাচনে আসুন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার, অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার সংবিধানের কোথায় আছে?

বিএনপির জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলনে ভয় পেয়ে বাস মালিক-শ্রমিকরা খুলনায় ধর্মঘট দিয়েছে মন্তব্য করে হানিফ বলেন, বিএনপির আন্দোলন শুনলে সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত হয়। কারণ বিএনপি সন্ত্রাস, হত্যা ও খুনির দল। ২০১৩-২০১৪ সালে বিএনপি আন্দোলনের নামে শত শত বাস, ট্রাক পুড়িয়ে দিয়েছে। মানুষ হত্যা করেছে। অতীতে দেশের মানুষ আন্দোলনের নামে তাদের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড দেখেছে। এসব কারণে মালিক-শ্রমিকরা বিএনপিকে ভয় পায়। তাই তারা ধর্মঘট দিয়েছে।

আওয়ামী লীগ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ১০টি সিটও পাবে না- বিএনপি নেতাদের এমন বক্তব্যের প্রেক্ষিতে হানিফ বলেন, আপনার নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া নবম সংসদ নির্বাচনের আগে ব্যঙ্গ করে অনেকবার বলেছিলেন আওয়ামী লীগ ২০টা সিটও পাবে না। ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস, সেই নির্বাচনে আপনারা ৩০ সিটের কম আসন নিয়ে সংসদে এসেছিলেন। দেশের মানুষ আপনাদের শিক্ষা দিয়েছিল। আর এখন ১০ সিটেরও কম ৭ সিট নিয়ে সংসদে আছেন।

আওয়ামী লীগের এই সিনিয়র নেতা বলেন, মির্জা ফখরুল কালকেও বলেছেন ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’। আপনারা বাংলাদেশকে কোথায় নিয়ে যেতে চান? আপনারা ক্ষমতায় থাকতে বাংলাদেশ অন্ধকারে তলিয়ে গিয়েছিল। দেশকে দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছিলেন। জঙ্গিবাদের চারণভূমি বানিয়েছিলেন। জঙ্গিরা পুলিশি পাহারায় মিছিল করেছিল। জঙ্গিদের অস্ত্র দিয়ে সহযোগিতা করেছিলেন। বিশ্ব নেতারা বলেছিল, বাংলাদেশ ব্যর্থ রাষ্ট্র। দেয়ার ইজ নো হোপ। আপনারা আবার সেই বাংলাদেশে নিয়ে যেতে চান?

বাংলাদেশ কোন পথে চলবে তার ফয়সালা অনেক আগেই হয়ে গেছে উল্লেখ করে হানিফ বলেন, মির্জা ফখরুল বলেছেন ওনারা নাকি যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছেন। আপনি কার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন? আপনারা মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে, পাকিস্তানের পক্ষে যুদ্ধ করেছিলেন। আপনার বাবা ছিলেন রাজাকার। আপনি ছিলেন আপনার বাবার সহকর্মী। আপনারা মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন, আমরা আপনাদের পরাস্ত করেছিলাম। রাজাকারদের হুঙ্কার শোনার জন্য বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়নি। বাংলাদেশ কোন পথে চলবে তার ফয়সালা একাত্তরে হয়ে গেছে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই দেশ চলবে। এই দেশে রাজাকারদের কোনো স্থান নেই।

আওয়ামী লীগ সরকার দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে নষ্ট করেছে- বিএনপি মহাসচিবের এমন অভিযোগের জবাবে হানিফ বলেন, এর জবাব সামনা-সামনি দিতে পারলে ভালো হতো। আপনার লজ্জা হওয়া উচিত। ১৯৯৬ সালে অসহায় মানুষের স্বাস্থ্যসেবার জন্য ১৫ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করেছিলেন শেখ হাসিনা। ক্ষমতায় এসে আপনারা সেসব বন্ধ করে দিয়েছেন। ক্ষমতায় এসে সেই কমিউনিটি ক্লিনিক আবার চালু করে মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিয়েছেন। সারা বিশ্ব যখন করোনায় বিপর্যস্ত, তখন আমরা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সফলভাবে তা মোকাবেলা করতে পেরেছি। জাতিসংঘ বলেছে, বিশ্বে করোনা সফল এবং দক্ষভাবে মোকাবেলায় প্রথম পাঁচটি দেশের একটি বাংলাদেশ। এসব শুনে জ্বালা হয়।

বিএনপি নেতারাই খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিষেদাগার করেন- এমন মন্তব্য করে হানিফ বলেন, জোটের শরিক কর্নেল অলি ২০০৫ সালে বলেছিলেন, খালেদা জিয়া ও তারেক- মা বেটা দুইটা শয়তান। দেশকে ধ্বংস করেদিল। বিএনপির নেতা মেজর আখতারুজ্জামান বলেছিলেন, বিশ্বে শ্রেষ্ঠ বেয়াদব যদি কেউ থাকে সেই বেয়াদব তারেক রহমান। ওনাদের নেত্রী পাপিয়া কিছুদিন আগে বলেছেন, বিএনপি এখন চোর-বাটপারের দল। আপনাদের দলের নেতারাই বলছেন, খালেদা-তারেক শয়তান। দেশ ধ্বংস করে দিয়েছে। এরপরও এদেশের মানুষ কি আপনাদের ভোট দিবে। আমি ২০১২ সালে বলেছিলাম, ২০২৯ সালের আগে ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখে লাভ নেই। ২০২৯ সালের পর ভাববেন ক্ষমতায় আসার কথা। আজ আবারও বলছি, বিএনপির নেতৃত্বে যতদিন খালেদা-তারেক থাকবে, দেশের মানুষ ততদিন বিএনপিকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আনবে না। বিএনপি রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসতে পারবে না।

দেশের তিন কোটি বেকার সমস্যা সমাধানের জন্য পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে উল্লেখ করে হানিফ বলেন, মিরসরাইয়ে ৩০ হাজার হেক্টর জায়গা নিয়ে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ১০০টি বিদেশি প্রতিষ্ঠান জমি নিয়েছে। এটি চালু হলে এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হবে। ১০০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় বাড়বে। দেশের ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে। এসব চালু হলে প্রতিটিতে এক লাখ করে আরও এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হবে। সেখান থেকে ৫০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় বাড়বে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সংকট ২০২৩ সালে কেটে যাবে। ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক, অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ শুরু হলে ২০৩১ সালের আগেই আমরা মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হব।

দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে হানিফ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ গণমানুষের দল। ঐক্যবদ্ধ থাকলে এমন কোনো শক্তি নেই আওয়ামী লীগকে পরাস্ত করতে পারে।’

এদিন ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধন করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মো. আব্দুস সবুর।

শেয়ার করুন