‘ভিশন ২০৪১ অর্জনে পিপিপি ছাড়া বিকল্প নেই’

নিজস্ব প্রতিবেদক

বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট ও দেশের রিজার্ভ ও বাজেট সীমাবদ্ধতার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বে (পিপিপি) প্রকল্প গ্রহণ ছাড়া কোনও বিকল্প নেই। তাই পিপিপির উন্নয়নে প্রয়োজনে আইনে পরিবর্তন আনা হবে।

আজ এফবিসিসিসিআই আয়োজিত ‘ভিশন-২০৪১ অর্জনে পিপিপির ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে এমন মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সংসদ সদস্য সালমান এফ রহমান।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা বলেন, বর্তমান আইনে পিপিপির প্রক্রিয়া দ্রুত করা সম্ভব কিনা, তা যাচাই করে দেখতে হবে। যদি দরকার হয়, আইনে পরিবর্তন আনতে হবে। কিন্তু এই পথেই যেতে হবে।

বিদ্যুৎ খাতে পিপিপি সফল হয়েছে মন্তব্য করে সালমান এফ রহমান বলেন, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল মাত্র ৪ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট। কিন্তু আইন পরিবর্তন করে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বেসরকারি খাতকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। বর্তমানে বেসরকারি খাতের মোট ৫৪ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। বিদ্যুৎ খাতের সফল পিপিপির কারণেই বর্তমান অর্থনৈতিক অগ্রগতি এসেছে।

এ সময় পিপিপিকে (পাবলিক প্রাইভেট পাটর্নারশিপ) দ্রুত করতে এর আওতায় দেওয়া প্রকল্প প্রস্তাবে অর্থায়ন সক্ষমতার প্রমাণাদি দলিল সংযুক্ত থাকলে সেসব প্রকল্পকে ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্প হিসেবে চিহ্নিত করা যেতে পারে বলে পরামর্শ দেন উপদেষ্টা।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, পিপিপির উন্নয়ন ছাড়া এসডিজি বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না। কেননা এসডিজি অর্জনের জন্য পিপিপির মাধ্যমে প্রায় ৬ শতাংশ অর্থায়ন করতে হবে। এ ছাড়া অন্যান্য উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য সরকারের একার পক্ষে পর্যাপ্ত বিনিয়োগ সম্ভব নয়। দেশে শক্তিশালী বেসরকারি খাত গড়ে উঠেছে। তাদেরও পিপিপির মাধ্যমেই উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সংশ্লিষ্ট করতে হবে।

অন্যদিকে আস্থাহীনতাকে পিপিপির উন্নয়নের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা বলে মনে করেন বিশেষ অতিথি পিপিপি কর্তৃপক্ষের সিইও মোহাম্মদ ইব্রাহীম। সরকারের প্রতি বেসরকারি খাতকে অংশীদার হিসেবে দেখার মনোভাব তৈরি করার আহ্বান জানান তিনি।

এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ২০৩১ ও ২০৪১ সাল নাগাদ বাংলাদেশের উন্নয়ন লক্ষ্যগুলো অর্জন করতে হলে অবকাঠামো খাতে ব্যাপক পরিবর্তন করতে হবে। উৎপাদনের গতি আনতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের গতি দ্বিগুণ করা ও চট্টগ্রাম বন্দরের টেস্টিং সুবিধা বাড়াতে হবে। এসব ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে।

এ ছাড়া সরকারি শিল্পকারখানায় হাজার হাজার একর অব্যবহৃত জমি শিল্প স্থাপন ও সরকারি কারখানার আধুনিকায়নে পিপিপি মডেল ব্যবহারের পরামর্শ দেন সভাপতি। তিনি বলেন, দেশের অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠানের আর্থিক সক্ষমতা তৈরি হয়েছে। তাদের সরকারের প্রকল্পে অংশীদার করলে অর্থায়ন সহজ হবে; সরকারের চাপ কমবে।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ফরেইন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ফিকি) সভাপতি নাসের এজাজ বিজয়।

তিনি বলেন, ‘ভিশন ২০৪১ অর্জনে অবকাঠামো ও লজিস্টিকসের ব্যাপক উন্নয়ন করতে হবে। কিন্তু এ খাতে সরকারি বিনিয়োগ অপর্যাপ্ত।’ তিনি জানান, অবকাঠামো খাতে সরকারি অর্থায়নের বর্তমান প্রবণতা অনুযায়ী ২০৩৭ সাল নাগাদ এ খাতে ১৯২ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ ঘাটতি তৈরি হবে। পিপিপির মাধ্যমে অর্থায়নের এ ঘাটতি দূর করা সম্ভব বলে মনে করেন ফিকি সভাপতি। পিপিপির মাধ্যমে ২০০ বিলিয়ন ডলার অর্থায়নের সুযোগ রয়েছে বলে জানানো হয় মূল প্রবন্ধে।

প্যানেল আলোচনায় এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক প্রীতি চক্রবর্তী বলেন, ‘পিপিপি সফল হতে হলে প্রকল্পের সঙ্গে সম্পর্কিত মন্ত্রণালয়কে সক্রিয় হতে হবে।’

সরকারের অনেক নীতির কারণে পিপিপিতে আসতে বাইরের কোম্পানিগুলো নিরুৎসাহিত হচ্ছে বলে মনে করেন এফবিসিসিআইয়ের প্যানেল উপদেষ্টা ও বুয়েটের অধ্যাপক ড. শামসুল হক।

পিপিপির জন্য বাজেটের আলোকে একটি জাতীয় মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের পরামর্শ দেন গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. এম মাসরুর রিয়াজ। পাবলিক প্রাইভেট পাটর্নারশিপ উপদেষ্টা মোহাম্মদ হাসান হায়দার এফসিসিএ বলেন, ‘জাতীয় পর্যায়ের পাশাপাশি, মিউনিসিপ্যালিটি পর্যায়ের প্রকল্পগুলোতেও পিপিপি কার্যকর করা দরকার।’

এফবিসিসিআইয়ের মহাসচিব মোহাম্মদ মাহফুজুল হকের সঞ্চালনায় সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু ও অন্য পরিচালকরা।

শেয়ার করুন