আর মাত্র দুই মাস পরই প্রাথমিকে নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হতে যাচ্ছে। অথচ এখন পর্যন্ত প্রাথমিক স্তরের বই মুদ্রণের কাজ শুরুই হয়নি বলে জানা গেছে। অন্যদিকে মাধ্যমিক স্তরের বই মুদ্রণের কাজটি চলমান থাকলেও এর অগ্রগতি আশাব্যঞ্জক নয়! এছাড়া এবার ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রমে বই দেওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত ওই দুই শ্রেণির বই প্রস্তুতই হয়নি। এ অবস্থায় ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্যবই পৌঁছাবে তো? অতীতে আমরা দেখেছি, বই বিপণন নিয়ে নানা ঘটনা। বিনামূল্যে বিতরণের বই কালোবাজারে বিক্রি, বইয়ের সঙ্গে নোট বই কিনতে অভিভাবকদের বাধ্য করার মতো ঘটনাও ঘটেছে। অথচ শিক্ষার্থীদের হাতে নির্দিষ্ট সময়ে নতুন বই তুলে দেয়া সরকারের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। বলা যায়, নববর্ষে শিক্ষার্থীদের জন্য এটি একটি বাড়তি আনন্দের দিন।
একই অবস্থা আমরা গত বছরও দেখেছি। এবার কাগজের দাম বৃদ্ধির কারণে যথাসময়ে বই সরবরাহ করা কঠিন বলে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির নেতারা মন্তব্য করেছেন। তাদের মতে, আগামী বছরের জন্য বিনামূল্যে বই ছাপাতে যে পরিমাণ কাগজ প্রয়োজন; তার ৫০ শতাংশ কাগজ শুল্কমুক্ত আমদানি না করলে ১ জানুয়ারি বই উৎসবে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়া সম্ভব নয়। আর শিক্ষা মন্ত্রণালয় এগুলো জেনেও সময়োচিত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। যে কারণে সময়মতো পাঠ্যবই পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। সেইসঙ্গে বই ছাপানোর কার্যাদেশ দিতে দেরি করাও আরেকটি কারণ।
করোনার দুই বছর বই উৎসব হয়নি। চলতি শিক্ষাবর্ষে বছরের শুরুতে সব শিক্ষার্থীর হাতে সব পাঠ্যবই তুলে দিতে পারেনি এনসিটিবি। ফেব্রুয়ারি-মার্চেও কোনো কোনো মুদ্রণকারী বই দিয়েছিল। বইয়ের কাগজের মান নিয়েও অভিযোগ উঠেছিল। শিক্ষার অপরিহার্য উপকরণ বই আর তা শিক্ষার্থীদের হাতে সময়মতো তুলে দেওয়ার দায়িত্ব যেহেতু এনসিটিবির হাতে ন্যস্ত, সেহেতু এক্ষেত্রে তাদের দায়িত্বশীল ভূমিকাই কাম্য। প্রায় প্রতিবছরই নতুন বই নিয়ে এক ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে। বিষয়টি অনভিপ্রেত। এ অনিশ্চয়তা ও জটিলতা থেকে উত্তরণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। সবশেষে নতুন শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই প্রতিটি শিক্ষার্থীর হাতে নতুন বই পৌঁছানো নিশ্চিত হবে, বইয়ের মান ঠিক থাকবে- এমনটিই আমাদের প্রত্যাশা।