আয়েশি-বিলাসী প্রকল্প না নিতে নির্দেশ দিলেন প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
ফাইল ছবি

বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটের প্রেক্ষাপটে ‘আয়েশি-বিলাসী’ প্রকল্প নেওয়া থেকে বিরত থাকতে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময় তিনি অপচয় কমানোর পাশাপাশি মিতব্যয়ী হওয়ারও পরামর্শ দেন।

মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ- একনেক’র বৈঠকে কথা বলেন এর চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে তার সভাপতিত্বে এ বৈঠক হয়।

বৈঠকে তিন হাজার ৯৮১ কোটি ৯০ লাখ টাকার সাতটি প্রকল্প অনুমোদন হয়।

সভায় সরকারপ্রধান বলেন, আয়েশি-বিলাসী প্রকল্প নেওয়া যাবে না। তবে ছোট গ্রামীণ প্রকল্প বা কল্যাণমুখী প্রকল্পের বিষয়ে আপস নয়। বড় বড় প্রকল্প নেওয়া যাবে না। বড় প্রকল্প গ্রহণে ফিসিজিবিলিটি স্টাডি গভীরভাবে দেখতে হবে। যে কৌশলে কমিশন এক বছর ধরে কাজ করছে এটা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বিশ্বে জ্বালানি ও অর্থনৈতিক সংকটের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, শুধু আমাদের দেশে নয়, দুনিয়াব্যাপী মন্দা চলছে। অপচয় কমানোর পাশাপাশি মিতব্যয়ী হতে হবে।

সভা শেষে সাংবাদিকদের কাছে এসব তথ্য তুলে ধরেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।

প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আমাদের উৎপাদন বাড়াতে হবে। সারা দেশে এক ইঞ্চি জমিও ফেলে রাখা যাবে না। জমিতে নানা ধরনের চাষাবাদ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী কেবিনেট সচিবকে নির্দেশ দিয়েছেন, ডিসিরা যেন অনাবাদী জমি খুঁজে বের করেন।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমিষ ও প্রয়োজনীয় পুষ্টির চাহিদা মেটাতে মুরগি, গবাদি পশু ও শাকসবজির উৎপাদন বাড়ানোর ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে বলেছেন। তিনি বলেছেন, কৃষি উৎপাদন বাড়াতে হবে, যাতে আমরা স্বনির্ভর হতে পারি। এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি রাখা যাবে না।

তিনি বলেন, আক্ষরিক অর্থে বাংলাদেশ কোভিড-১৯ থেকে বেরিয়ে এসেছে, কিন্তু আমরা এখন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। প্রধানমন্ত্রী তাই ডেঙ্গু জ্বরের প্রার্দুভাব কমাতে বাসা-বাড়ি ও অফিস-আঙিনা পরিষ্কার রাখতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও দেশবাসীকে আরও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

এক প্রশ্নের জবাবে মান্নান বলেন, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠকে সুনির্দিষ্ট কোনো আলোচনা হয়নি। পৃথিবীর সব দেশ মন্দার সম্মুখীন হচ্ছে এবং আরও একটি অর্থনৈতিক মন্দার দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ছোট দেশ হওয়ায় এর প্রভাব আমাদের ওপর বেশি পড়ছে।’

বাংলাদেশ বর্তমান বৈশ্বিক অবস্থার শিকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রতি মুহূর্তে প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হচ্ছে। এর সঙ্গে সমন্বয় করে আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, এখনও আমরা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় রয়েছি। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও অন্যান্য সংস্থা আমাদের ভাল অবস্থার পূর্বাভাস দিচ্ছে। দেশে মূল্যস্ফীতি এখন নিম্নমুখী রয়েছে, আমাদের এই অবস্থা দৃঢ়ভাবে ধরে রাখতে হবে এবং সামনের দিকে এগুতে হবে।’

বিদেশি বিনিয়োগ, রেমিট্যান্স প্রবাহ, রপ্তানি আয় এবং এলসি খোলার সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান তুলে ধরে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, দেশ অর্থনৈতিক দিক থেকে কিছুটা চাপের মধ্যে রয়েছে। তবে, এটি সত্য নয় যে, আমরা বড় কোন সংকট বা কোনো বিপর্যয়ের মধ্যে রয়েছি। তিনি বলেন,‘ বিদেশি বিনিয়োগ, রেমিটেন্স প্রবাহ ও রপ্তানি আয়ের ক্ষেত্রে আমরা সামনের দিকে এগুচ্ছি।’

সম্প্রতি আকু পেমেন্টের কারণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের নিচে নেমে গেছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, বর্তমান বৈদেশিক মুদ্রার যে রিজার্ভ রয়েছে-তা দিয়ে সাড়ে চার মাসের আমদানি বিল মেটানো যাবে।

সভায় যে সাত প্রকল্প অনুমোদন পেল

এর মধ্যে আছে— নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ‘চট্টগ্রামের মিরসরাই ও সন্দ্বীপ, কক্সবাজারের সোনাদিয়া দ্বীপ, টেকনাফ, সাবরাং ও জালিয়ার দ্বীপ অংশের জোটসহ আনুষঙ্গিক স্থাপনাদি নির্মাণ’ প্রকল্প; স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের ‘ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় অঞ্চল-২ ও অঞ্চল-৪ এর ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক অবকাঠামোসহ অঞ্চল-২ ও অঞ্চল-৪ এর সার্ভিস প্যাসেজসমূহের উন্নয়ন’ প্রকল্প; গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালের ‘বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ ভবন এলাকার বৈদ্যুতিক যন্ত্র ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ অন্যান্য উন্নয়ন কাজ’ প্রকল্প; সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের দুটি প্রকল্প—‘বারৈয়ারহাট-হেঁয়াকো রামগড় সড়ক প্রশস্তকরণ (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্প ও ‘নবীনগর-আশুগঞ্জ সড়ক উন্নয়ন (জেড-২০৩১) (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্প এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের ‘দিনাজপুর অঞ্চলে টেকসই কৃষি উন্নয়ন’ প্রকল্প। এছাড়া, ব্যয় ঠিক রেখে মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ‘খুলনা শিপইয়ার্ড সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্প; স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ‘বরিশাল মেট্রোপলিটন ও খুলনা জেলা পুলিশ লাইন নির্মাণ (আন্তঃখাত সমন্বয়কৃত)’ প্রকল্প; স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ‘শেখ সায়েরা খাতুন মেডিক্যাল কলেজ, মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং নার্সিং কলেজ স্থাপন (২য় সংশোধিত)’ প্রকল্প এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থার সম্প্রসারণ ও শক্তিশালীকরণ (১ম সংশোধিত) প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

সভায় পরিকল্পনা কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীরা বৈঠকে অংশ নেন।

শেয়ার করুন