বিচার পেতে গ্রাম থেকে আদালতে আসা লোকদের স্বল্প খরচে বিচার পাওয়ার ব্যবস্থা করতে আইনজীবীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
তিনি বলেন, দেশের অধিকাংশ মানুষ প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল থেকে উঠে এসেছেন। তারা যখন আদালতের বারান্দায় ঘোরেন, আমাদের উচিত তাদের যত কম খরচে বিচার দেওয়া। তাদেরকে যদি একদিন আগেও আদালতের বারান্দা থেকে বাড়ি ফেরাতে পারি তাহলে তারা একদিন ঘোরা থেকে বাঁচলেন।
বাগেরহাটের পি সি কলেজিয়ানস অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান। বৃহস্পতিবার (১৭ নভেম্বর) সন্ধ্যায় সুপ্রিম কোর্টের শহীদ সফিউর রহমান মিলনায়তনে প্রধান বিচারপতিকে সংবর্ধনা দিতে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি বলেন, আমাদের পরাজয় মেনে নেওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। কারণ পরাজয়ই একজনকে জয়ী করার পথ সুগম করে দেয়।
তিনি বলেন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে গেলে সবার আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থাকতে হবে। বিচার বিভাগকে গতিশীল করতে হবে। আমি বার বার বলি, যদি জুডিশিয়ারি ফেল করে তো গণতন্ত্র ফেল করবে। আর গণতন্ত্র ফেল করলে রাষ্ট্র অকার্যকর রাষ্ট্র হবে।
হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, এটা আমার একার দায়িত্ব না। আসুন আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করি বিচার বিভাগের চাকাটা একটু সচল করার। আমাদের যেটা ভাবতে হবে সেটা হলো আমরা যেখান থেকে আসছি, বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষের সেই গ্রাম থেকে উঠে আসা। তারা যখন আদালতের বারান্দায় ঘোরেন, আমাদের উচিত তাদের যত কম খরচে বিচার দেওয়া।
তিনি বলেন, আমি গতকালও বলেছি, এ বছরের জানুয়ারি থেকে যতগুলো মামলা ফাইল হয়েছে- তার থেকে অনেকগুণ মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে।
এ সময় প্রধান বিচারপতি আহ্বান জানান, সবাই এগিয়ে আসেন ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষার জন্য জুডিশিয়ারিকে শক্তিশালী করি। জুডিশিয়ারি যাতে ভালোভাবে চলতে পারে, স্বাধীনভাবে বিচারকাজ পরিচালনা করতে পারে, আপনারা বিচার বিভাগকে সহায়তা করবেন। এই বিচার বিভাগ এগিয়ে যাবে।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে যে উদ্দেশ্য নিয়ে ৩০ লাখ মানুষ রক্ত দিয়েছেন, আমরা তার সুবিধাভোগী। যারা বুকের রক্ত দিয়ে দেশকে স্বাধীন করে দিয়েছেন তাদেরকে বুকে ধারণ করতে হবে। এখন যদি আমরা কাজে গাফিলতি করি, কোনো প্রতিষ্ঠানকে ক্ষতিগ্রস্ত করি- তাহলে তাদের রক্তের সঙ্গে বিশ্বাস ঘাতকতা হবে। আসুন সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করি।
অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সংবর্ধনা কমিটির আহ্বায়ক ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শেখ আলী আহমেদ খোকন। পি সি কলেজিয়ানস অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাহতাব উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন- প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মো. রেজাউল হক, বিচারপতি শেখ আব্দুল আউয়াল, জাতীয় সংসদের সাবেক স্পিকার ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির, সম্পাদক আব্দুন নূর দুলাল, আয়োজক সংগঠনের উপদেষ্টা অধ্যাপক মাজাফফর হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মহিদুল ইসলাম প্রমুখ।