প্রসঙ্গ : বৈশ্বিক মন্দা ও বাংলাদেশের অর্থনীতি

সম্পাদকীয়

রেমিট্যান্স
ফাইল ছবি

পৃথিবীর এক-তৃতীয়াংশ রাষ্ট্র এখন বৈশ্বিক মন্দার দ্বারপ্রান্তে। গত বছর আইএমএফ ধারণা করেছিল, বিশ্ব অর্থনীতিতে এ বছর প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৬ দশমিক ১ শতাং। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে-প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ২ শতাংশে নেমে আসবে, যা আগামী বছর নেমে যেতে পারে ২ দশমিক ৯ শতাংশে। করোনার ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে শুরু করলেও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবে তৈরি হয়েছে নতুন নতুন সংকট। শুধু নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নয়, বর্তমানে ডলারের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় উন্নয়নশীল বিশ্ব থেকে অর্থ উন্নত দেশে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল হয়ে উঠেছে। দেশের অর্থনীতিবিদদের মতে, ডলারের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর আমদানি খরচ বহুলাংশে বাড়িয়ে দিয়েছে এবং উদ্ভূত সমস্যা বিশ্ব অর্থনীতিকেও একধরনের ঝুঁকির মধ্যে নিপতিত করেছে।

ব্লুমবার্গের তথ্যের ভিত্তিতে ভিজুয়াল ক্যাপিটালিস্ট প্রকাশিত সম্প্রতি ঋণ ঝুঁকিতে থাকা ২৫টি দেশের তালিকায় রাশিয়া, জাম্বিয়া, সুরিনাম, লেবাননসহ কয়েকটি দেশ ইতোমধ্যে ঋণ পরিশোধে পিছিয়ে আছে। অপর দেশগুলোর মধ্যে আর্জেন্টিনা, ইউক্রেন, তিউনিসিয়া, ঘানা, মিসর, কেনিয়া, ইথিওপিয়া, এল সালভাদর, পাকিস্তান, বেলারুশ ও ইকুয়েডর রয়েছে মূল্যস্ফীতি-ঋণ-উচ্চঋণের ব্যয়ের তালিকায়। দেউলিয়া হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে বেলারুশ। তবে আশার বাণী হলো- এ তালিকায় নেই বাংলাদেশ। কারণ, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী ও গতিশীল নেতৃত্বে অর্থনীতিকে সমান গতিতে রাখার প্রায়োগিক পদক্ষেপ সর্বত্রই প্রশংসা কুড়াচ্ছে। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর সীমিত করা, মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্য কমানো, বিদেশ থেকে আসা রেমিট্যান্সে নগদ প্রণোদনা দেওয়া, বিলাসবহুল পণ্যে করারোপ করার মতো কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যাতে আমদানির চাহিদা সহজে মেটানো যায়। এরই মধ্যে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে রপ্তানি বৃদ্ধি এবং আমদানি কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

universel cardiac hospital

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমস পত্রিকায় প্রকাশিত ডিপ্লোমেটিক এডিটর দীপরঞ্জন রায় চৌধুরীর লেখা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক মন্দায়ও বাংলাদেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল। করোনা মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে অর্থনৈতিক মন্দায় ভুগছে সারা বিশ্ব, যার প্রভাব পড়েছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোয়। এরই মধ্যে শ্রীলংকা নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করেছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ উদ্বেগজনকভাবে কমেছে পাকিস্তানেও। এমন আঞ্চলিক ভূ-অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতেও নিজেদের অর্থনীতি স্থিতিশীল রেখেছে বাংলাদেশ। স্বাধীনতার দীর্ঘ ৫০ বছর সময়ে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে সফল ও সার্থক হয়েছে এ রাষ্ট্র। বিস্তৃত উৎপাদন খাত এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন; সব মিলে বাংলাদেশের অর্থনীতি এশিয়ার মধ্যে অনুসরণীয়।

মহান মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশ সম্পর্কে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জারের ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’র মতো নিন্দনীয় উক্তির বিষয় তুলে ধরে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সেই জায়গা থেকে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়ে গেছে। তার প্রমাণ হিসাবে সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে সম্প্রতি উদ্বোধন হওয়া পদ্মা সেতু। যেসব আন্তর্জাতিক সংস্থা এ সেতুর অর্থায়নে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল; তারাই এখন বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানাচ্ছে। এ সেতুর কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতির ভিত্তি অনেক শক্ত হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। বাংলাদেশ নিজেই উন্নয়নের একটি রোডম্যাপ দিয়েছে। ভিশন-২০৪১ নামের এ রোডম্যাপের লক্ষ্য ২০৩১ সালের মধ্যে প্রকট দারিদ্র্যের অবসান এবং উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদায় উন্নীত হওয়ার মাধ্যমে ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশে পরিণত হওয়া। এমতাবস্থায় সার্বিক দিক বিবেচনায় আমরা মনে করি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে আত্মপ্রত্যয়ী বাংলাদেশ সরকার এবং জনগণ মহান মুক্তিযুদ্ধের অবিনাশী আদর্শিক চেতনায় ঋদ্ধ হয়ে সব ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে অপ্রতিরোধ্য ও অগ্রগামী রাখবেই।

শেয়ার করুন