কে হবেন পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী, নির্ধারণে ভোট শুরু মালয়েশিয়ায়

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

মালয়েশিয়ায় কে হবেন পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী। ছবি : ইন্টারনেট

মালয়েশিয়ার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ দেওয়ান রাকিয়াত নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। শনিবার সকাল থেকে দেশজুড়ে এই ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে রয়টার্স।

তবে দেশটির এখন যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি, তাতে নির্বাচনের ফলাফল কী হবে কিংবা কে দেশটির পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন— সে সম্পর্কে কোনো অনুমেয় ধারণা নেওয়া খুবই কঠিন।

কারণ, ২২২ আসনবিশিষ্টি আইনসভা দেওয়ান রাকিয়াতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে সরকার গঠন করতে হলে বিজয়ী দল বা জোটকে ন্যূনতম ১১২টি আসনে জয়ী হতে হবে; কিন্তু এই মুহূর্তে মালয়েশিয়ায় সক্রিয় কোনো রাজনৈতিক দল বা জোট এককভাবে প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার মতো অবস্থায় নেই বলেই মনে করছেন দেশটির রাজনীতি বিশ্লেষকরা।  

এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী অন্যান্য রাজনীতিকদের খানিকটা  এগিয়ে আছেন মালয়েশিয়ার দীর্ঘদিনের বিরোধীদলীয় নেতা আনোয়ার ইব্রাহিম। তবে রাজনীতি বিশ্লেষকদের বিশ্বাস, সরকারগঠন করতে হলে পার্লামেন্টে নূন্যতম যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে হয়, তা অর্জনে আনোয়ারের নেতৃত্বাধীন জোটের ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

তাদের মতে, আনোয়ার ইব্রাহিম যদি পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পান, সেক্ষেত্রে সরকার গঠন করতে হলে তাকে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ইসমাইল সাবরি ইয়াকব এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী মুহিদ্দিন ইয়াসিনের নেতৃত্বাধীন দলের সঙ্গে জোট করতে হবে।

মালয়েশিয়ায় রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার শুরু ২০২০ সাল থেকে। সেই থেকে এ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর পদে বসেছেন তিন জন; কিন্তু রাজনীতিতে কাঙ্ক্ষিত স্থিতাবস্থা এখনও দেখতে পায়নি মালয়েশিয়া।

দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘদিন গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত হয়ে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার রেকর্ড যার রয়েছে, সেই মাহাথির মোহাম্মদও চলতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। টানা দুই দশকেরও বেশি সময় দেশটির প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তিনি।

কিন্তু ৯৭ বছর বয়সী এই অতিপ্রবীন নেতাকে দেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বিবেচনা করছেন না অনেকেই। মাহাথির নিজেও বলেছেন— এটি তার শেষ নির্বাচন।

এর আগে আনোয়ার ইব্রাহিম ১৯৯৩ সাল থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত মালয়েশিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী ছিলেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথিরের উত্তরসূরী হওয়ার কথা ছিল তারই।

কিন্তু ১৯৯৮ সালে দুর্নীতি ও সমকামিতার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় উপপ্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে আনোয়ারকে বরখাস্ত করেন মাহাথির। তাকে রাজনীতিতেও নিষিদ্ধ করেন আদালত।

পরে উচ্চ আদালতে আপিল করে ২০০৮ সালে নির্দোষ হিসেবে মুক্তিলাভ করেন আনোয়ার; রাজনীতি করার অধিকারও ফিরে পান তিনি। আপিলে প্রমাণিত হয়— তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল।

কারাগার থেকে মুক্তিলাভের পর এতদিন পর্যন্ত মালয়েশিয়ার প্রধান বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন আনোয়ার ইব্রাহিম।

যদিও অনিশ্চিত, কিন্তু তারপরও যদি এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে দেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ লাভ করতে পারেন মাহাথির মোহাম্মদের সাবেক এই আস্থাভাজন নেতা, সেক্ষেত্রে কারামুক্তির তার বিগত ২৫ বছরের রাজনীতির একটি  অসাধারণ পর্বে প্রবেশ করতে সক্ষম হবেন তিনি।

শনিবার মালয়েশিয়ার পেনাং প্রদেশে ভোট দিয়েছেন আনোয়ার ইব্রাহিম। সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রশ্নের ইত্তরে তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত সবকিছু ভালোভাবেই চলছে। আমরা আতবিশ্বাসী, সেই সঙ্গে সতর্কও।’

তিনি আরও বলেন, তার নেতৃত্বাধীন জোট পার্লামেন্টে সংখ্যারিষ্ঠতা অর্জন ও তার ভিত্তিতে সরকার গঠনের লক্ষ্যেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। তবে কোনো কারণে যদি তা সম্ভব না হয়, সেক্ষেত্রে অন্যান্যদের সঙ্গে মিলেমিশে সরকরা গঠনে তার আপত্তি নেই।

মালয়েশিয়ার স্বাধীন নির্বাচন পর্যবেক্ষণ ও রাজনীতি বিশ্লেষক সংস্থা মার্দেকা সেন্টারের বিশ্লেষকরা রয়টার্সকে জানান, এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বনিদ্বিতা হচ্ছে মূলত তিন রাজনীতিকের মধ্যে— আনোয়ার ইব্রাহিম, সাবেক প্রধানমন্ত্রী মুহিদ্দিন ইয়াসিন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ইসমাইল সাবরি ইয়াকব।

তার মধ্যে আনোয়ার ইব্রাহিমের নেতৃত্বাধীন জোট সংস্কারপন্থী পাকাতান হারাপান কোয়ালিশনের ৮২টি আসন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, মহিদ্দিনের নেতৃত্বাধীন জোট পেরিকাতান ন্যাশনাল অ্যালান্সের পাওয়ার  সম্ভবাবনা রয়েছে ৪৩টি আসন, আর ইসমাঈল সাবরি ইয়াকবের নেতৃত্বাধীন জোট ৪৫টি ভোট পেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মার্দেকা সেন্টারের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আনোয়ার ইব্রাহিমের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ৩৩ শতাংশ, এবং তার দুই প্রতিদ্বন্দ্বী মুহিদ্দিন ও ইসমাইলের এই পদে আসীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে যথাক্রমে ২৬ শতাংশ ও ১৭ শতাংশ।

শেয়ার করুন