কাতার স্বাগতিক দেশ না হলে হয়তো বিশ্বকাপ ফুটবলের উদ্বোধনী ম্যাচের টিকিট বিক্রি করতে গিয়ে গলদঘর্ম হতে হতো ফিফাকে। এশিয়ান কাপ চ্যাম্পিয়ন কাতার এর আগে কখনো বিশ্বকাপ খেলেনি। ইকুয়েডরও বিশ্বকাপের খুব একটা আকর্ষণীয় দল নয়। তবু আজকের ম্যাচের দিকে দৃষ্টি সারা দুনিয়ার। বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচের যে অন্য রকম একটা জাদু আছে!
সেই জাদু আজ কাতার-ইকুয়েডর ম্যাচে পাওয়া যাবে কি না, সেই অপেক্ষাতে ফুটবলপ্রেমীরা। ২০১৮ বিশ্বকাপে রাশিয়া-সৌদি আরব ম্যাচটিতে স্বাগতিকরা গোলবন্যায় ভাসিয়েছিল সৌদি আরবকে। ৫-০ গোলে জয়ের সেই ম্যাচ একপেশে হলেও সাধারণ দর্শকদের আনন্দ দিতে পেরেছিল রাশিয়া। এক ম্যাচে পাঁচ গোল তো বিশ্বকাপে আর খুব বেশি দেখা যায় না। কাতার-ইকুয়েডর ম্যাচ একপেশের বদলে দুই দল গোল-উৎসবে পরিণত করতে পারলে হবে সোনায় সোহাগা।
২০০৬ সালে জার্মানি বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে জার্মানি ও কোস্টারিকার সেই ম্যাচটি তো ভুলে যাওয়ার কথা নয় কারোরই। জার্মানি ৪-২ গোলে জিতলেও ছয় গোলের ম্যাচটি রোমাঞ্চিত করেছিল ফুটবলপ্রেমীদের। ১৯৯০ সালের ইতালি বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচের মতো রোমাঞ্চ খুব বেশি আসেনি বিশ্বকাপের ইতিহাসে। আর্জেন্টিনা মিলানের সান সিরো স্টেডিয়ামে ক্যামেরুনের সঙ্গে খেলেছিল।
ম্যাচ শুরু হতেই দৃশ্যপট পুরোপুরি ভিন্ন। আর্জেন্টিনাকে মরণ কামড় দিয়ে ধরা আফ্রিকার অদম্য সিংহরা সেদিন শেষ পর্যন্ত জয় নিয়েই মাঠ ছেড়েছিল। দুই লাল কার্ডে ৯ জনের দলে পরিণত হয়েও ক্যামেরুন ওমাম বিইকের গোলে ১-০ গোলে হারিয়েছিল ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনাকে। বিশ্বকাপের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর উদ্বোধনী ম্যাচ ’৯০ বিশ্বকাপ উপহার দিয়েছিল কি না, সে বিতর্ক হতেই পারে।
মিলানের সেই উদ্বোধনী ম্যাচের সঙ্গে প্রবল বিক্রমে লড়তে নামবে ২০০২ সালে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার যৌথ আয়োজনের উদ্বোধনী ম্যাচটি। জিনেদিন জিদানের ফ্রান্স সেদিন সিউলে ১-০ গোলে ধরাশায়ী হয়েছিল আফ্রিকার আরেক দল সেনেগালের বিপক্ষে। পাপা বোউবা দিউপ ছিলেন সেই রোমাঞ্চের নায়ক।
বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচের ইতিহাসে এ দুটি ম্যাচ নিঃসন্দেহে আলাদা জায়গা নিয়ে থাকবে। তথাকথিত দুর্বল, নবাগত দলের বিপক্ষে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের হার, তা–ও উদ্বোধনী ম্যাচেই, বিশ্বকাপের এমন নাটকীয় শুরু তো খুব বেশি হয়নি। ১৯৮২ বিশ্বকাপেও ’৭৮ বিশ্বকাপের শিরোপাজয়ী আর্জেন্টিনা হেরে গিয়েছিল শুরুর দিনই।