এটাই কি বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অঘটন!

ক্রীড়া ডেস্ক

লুসাইল স্টেডিয়ামে শেষ বাঁশি বাজার পর নিস্তব্ধ গোটা আর্জেন্টিনা, উৎসবে মেতেছে সৌদি আরব—কল্পনার মানসপটে এমন কিছু ভেবে নেওয়াই যায়। বাস্তবতা আরও মারাত্মক কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছে। প্রশ্ন উঠেছে, লুসাইলে সৌদি আরবের কাছে আজ আর্জেন্টিনার ২-১ গোলের হার বিশ্বকাপের ইতিহাসে সেরা অঘটন কি না?

আর্জেন্টিনার এমন শুরু কেউ ঘুণাক্ষরেও ভাবেননি। ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে তৃতীয় আর্জেন্টিনা হেরে গেল র‌্যাঙ্কিংয়ে ৫১তম সৌদি আরবের কাছে! আর্জেন্টিনা যেখানে বিশ্বকাপ মানেই ফেবারিট, আর স্কালোনির এ আর্জেন্টিনা অপরাজিত ছিল টানা ৩৬ ম্যাচ, অথচ এ দলই কি না, পঞ্চমবারের মতো বিশ্বকাপে খেলতে আসা সৌদির কাছে হারল!

universel cardiac hospital

বিশ্বকাপের ইতিহাসে অঘটন তো কম নেই। আর্জেন্টিনার এ হার অবশ্যই সেসব অঘটনের কাতারে পড়বে। তবে সেরা কি না, সেটি তর্কসাপেক্ষ হলেও এতটুকু বলা যায়, এ গ্রহের কেউ সম্ভবত কল্পনাও করেননি আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ শুরু হবে সৌদি আরবের কাছে হার দিয়ে!

১৯৫০ সালে বেলো হরিজেন্তোয় দুঃস্বপ্ন দেখেছিল ইংল্যান্ড। বলা হয়, এটি বিশ্বকাপের ইতিহাসে অন্যতম সেরা অঘটন। গ্রুপপর্বে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় ম্যাচের আগে হট ফেবারিট ছিল ইংল্যান্ড। ওই বছর যুুক্তরাষ্ট্রের কাছে ইংল্যান্ডের এ হার এতো আশ্চর্যের ছিল যে, ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম সংবাদ ছেপেছিল ইংল্যান্ড আসলে ১০-১ গোলে জিতেছে কিন্তু টেলিগ্রাফের ভুলে সেটিকে ০-১ মনে হচ্ছে।

এশিয়া মহাদেশ থেকে প্রথম দল হিসেবে ১৯৬৬ সালের ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে অংশ নেয় উত্তর কোরিয়া। ওই বিশ্বকাপে টপ ফেবারিট হিসেবে শিরোপা জয়ের লক্ষ্য নিয়ে ইংল্যান্ড এসেছিল ইতালি। চিলিকে প্রথম ম্যাচে ২-০ গোলে হারানোর পর উত্তর কোরিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটি ড্র হলেই পরের রাউন্ডে উত্তীর্ণ হবেন আজ্জুরিরা। এমন সমীকরণ সামনে রেখেই উত্তর কোরিয়ার মুখোমুখি হয় ইতালি।

ইউরোপ মাতানো ইতালির মহাতারকাদের সামনে উত্তর কোরিয়া শুধু অংশগ্রহণ বৈ আর কিছু ছিল না। অনেকেই মনে করেছিলেন, উত্তর কোরিয়া হয়তো উড়ে যাবে এ ম্যাচে; কিন্তু এমন ম্যাচেই কিনা বিশ্বকাপের ইতিহাসে অন্যতম সেরা অঘটনটির জন্ম দেয় কোরিয়ানরা। ৪২ মিনিটে প্যাক ডু ইকের একমাত্র গোলে ইতালি পিছিয়ে পড়ে। শেষ পর্যন্ত আর খেলায় ফিরতে পারেনি তারা।

১৯৯০ সালের বিশ্বকাপে আফ্রিকার দেশ ক্যামেরুনের কাছে শক্তিশালী আর্জেন্টিনার হারে চমকে গিয়েছিলেন নীল-সাদা ব্রিগেডের সমর্থকেরা। আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে আফ্রিকার প্রথম দেশ হিসেবে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে গিয়েছিল ক্যামেরুন। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন হিসেবে গ্রুপপর্বের প্রথম ম্যাচেই ডিয়েগো ম্যারাডোনার দলকে চমকে দিয়েছিল ক্যামেরুন।

আর্জেন্টাইন কিংবদন্তিকে ট্যাকলের পর ট্যাকল করে ক্যামেরুনের দুজন লাল কার্ডও দেখেন। ৬৭ মিনিটে ওমাম বিয়িক ক্যামেরুনের হয়ে যখন গোল করলেন তখন ১০ জন নিয়ে খেলছিল রজার মিলার দেশ। নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার ২ মিনিট আগে ক্যামেরুনের আরও এক খেলোয়াড় লাল কার্ড দেখেন। কিন্তু সেদিন অঘটন এড়াতে পারেনি আর্জেন্টিনা।

১৯৯৮ সালে বিশ্বকাপ জিতেছিল ফ্রান্স। ২০০২ সালের বিশ্বকাপে উদ্বোধনী ম্যাচে সেনেগালের মুখোমুখি হয়েছিল ফরাসি ব্রিগেড। কিন্তু সেই ম্যাচে ফ্রান্সকে হারিয়ে চমক দেয় সেনেগাল। সে বছরই প্রথমবার বিশ্বকাপের আসরে নেমেছিল সেনেগাল। প্রথমবারেই বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের হারানোকে অঘটন ছাড়া আর কী বলা যায়!

শেয়ার করুন