তাহলে কি এশিয়ার দলগুলো যম হয়ে দাঁড়াচ্ছে জার্মানির সামনে? গত রাশিয়া বিশ্বকাপে মেক্সিকোর কাছ হার দিয়ে শুরু করে শেষ ম্যাচে এশিয়ার দেশ দক্ষিণ কোরিয়ার কাছেও ২-০ গোলে হেরে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিয়েছিল চারবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন জার্মানি।
গত বিশ্বকাপটা ভুলে গিয়ে এবার নতুন করে শুরুর প্রত্যাশা ছিল জার্মানির; কিন্তু তাদের সেই প্রত্যাশার গুড়ে প্রথমেই বালি ঢেলে দিলো এশিয়ার আরেক দেশ জাপান। পরপর দু’দিন ভড় অঘটন দেখলো এবারের কাতার বিশ্বকাপ। এবার জার্মানি ২-১ গোলে হেরে গেলো জাপানের কাছে।
জাপানের প্রত্যাবর্তনের গল্পটা আর্জেন্টিনা-সৌদি আরবের ম্যাচের মতোই। পেনাল্টি গোলে এগিয়ে যাওয়া আর্জেন্টিনার বিপক্ষে যেভাবে দ্বিতীয়ার্ধে ২ গোল দিয়ে ম্যাচ জিতে নিয়েছিল সৌদি আরব, ঠিক একইভাবে জিতলো জাপানও। প্রথমার্ধে পেনাল্টি গোলে এগিয়ে যায় জার্মানি, দ্বিতীয়ার্ধ পাল্টা দুই গোল দেয় জাপান।
জার্মানি শুরু করেছিল জার্মানির মতোই। প্রথমার্ধে তারা এগিয়েছিল একচেটিয়া প্রাধান্য নিয়ে খেলার ফল হিসেবেই। তবে দ্বিতীয়ার্ধে ভোজবাজির মতো ম্যাচের চেহারা পাল্টে দেয় জাপানিরা। ৭৫ মিনিটে রিতসু দোয়ান বাঁ-পায়ের দুর্দান্ত শটে গোল করেছেন। বক্সের মাথা থেকে তাকুমি মিনামিনোর শট ঝাঁপিয়ে ঠেকিয়ে দিয়েছিলেন জার্মানির অধিনায়ক গোলরক্ষক ম্যানুয়েল ন্যুয়ার। ফিরতি বলে জাল কাঁপিয়েছেন বদলি খেলোয়াড় রিতসু দোয়ান।
সমতায় ফেরার পর জাপানকে পেয়ে বসে জয়ের নেশায়। নিজেদের রক্ষণ সামলে বারবার প্রতি আক্রমণে যায় তারা। ব্যবধান দ্বিগুণ করতে ১০ মিনিটও সময় নেয়নি নীল সামুরাইরা। ৮৩ মিনিটে আরেক বদলি তাকুমা আসানো মাঝ মাঠ থেকে আসা বল ধরে ডান দিক দিয়ে ঢুকে দুরহ কোন থেকে পরাস্ত করেন এ সময়ের বিশ্বের অন্যতম সেরা গোলরক্ষক ন্যুয়ারকে।
শেষ কয়েক মিনিট জার্মানি গোল শোধে মরিয়া হয়ে আক্রমণ করতে থাকে। ফ্রি-কিক ও কর্নার নেওয়ার সময় পোস্ট ছেড়ে জাপানের বক্সে চলে আসেন জার্মানির গোলরক্ষক ম্যানুয়েল ন্যুয়ারও। কিন্তু সব আক্রমণ ঠেকিয়ে ‘এশিয়ার ব্রাজিল’খ্যাত জাপান মাঠ ছাড়ে অবিশ্বাস্য এক জয় নিয়ে।
শুরুর এই হারটা এবারও জার্মানির ভাগ্যকে অনিশ্চিত করে তুললো। কারণ, গ্রুপের অন্য দুই দলের একটি স্পেন ও অন্যটি কোস্টারিকা। স্পেনের বিপক্ষে খারাপ ফল হলে পরপর দুই বিশ্বকাপের প্রথম পর্ব থেকে বিদায় নেওয়ার শঙ্কা তৈরি হবে সাবেক চ্যাম্পিয়নদের।
কাতারের খলিফা ইন্টারন্যশনাল স্টেডিয়ামে প্রথমার্ধে জাপানের বিপক্ষে ১-০ গোলে এগিয়ে ছিল মুলার-ন্যুয়াররা। ৩২ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোলটি করেছেন জার্মানির ইলকায় গুন্ডোগান। ডেভিড রাউমকে ফাউল করেছিলেন জাপানের গোল রক্ষক সুইচি গন্ধা। স্পট কিকে কোন ভুল করেননি গুন্ডোগান।
প্রথমার্ধের ইনজুরি সময়ে দ্বিতীয়বার জাপানের জালে বল পাঠিয়েছিলেন জার্মানির কাই হাভার্টজ; কিন্তু জাপানিরা অফসাইডের দাবি তুললে ভিএআরের মাধ্যমে তা পরীক্ষা করেন রেফারি। হার্ভার্টজ অফসাইডে থাকায় গোলটি বাতিল করা হয়।
কিক অফের পর থেকেই জাপানকে চেপে ধরেছিল চারবারের চ্যাম্পিয়ন জার্মানি। ৮০ ভাগের ওপরে বলের দখল রেখে আক্রমণ শানাচ্ছিল তারা। ১৭ মিনিটেই গোল পেয়ে যেতে পারতো ২০১৪ সালের চ্যাম্পিয়নরা; কিন্তু আন্তোনিও রুডিগার হেড বাইরে চলে যায় দ্বিতীয় পোস্ট ঘেঁষে।
পেনাল্টিতে গোল করার চার মিনিট আগে বক্সের মাথা থেকে জোরালো শট নিয়েছিলেন গুন্ডোগান; কিন্তু বল সোজা চলে যায় জাপানি গোলরক্ষক সুইচি গন্ধার হাতে।
ইনজুরি সময়ে ব্যবধান দ্বিগুণ করতে পারতো জার্মানি। বক্সের মাথা থেকে জামাল মুসিয়ালা যে শটটি নিয়েছিলেন তা চলে যায় ক্রসবারের উপর দিয়ে।