ঢাকার সঙ্গে ইইউর প্রথম রাজনৈতিক সংলাপ আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ-ইইউ

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে আজ বৃহস্পতিবার প্রথম রাজনৈতিক সংলাপে বসছে বাংলাদেশ। এ সংলাপে অংশ নিতে গতকাল বুধবার রাতে ঢাকা এসেছেন ইইউর ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল (রাজনৈতিক) এনরিক মোরার নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ঢাকার ইইউ ডেলিগেশন কার্যালয় সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় আজ বিকাল ৫টায় অনুষ্ঠেয় এ সংলাপে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম। সংলাপে অংশ নিতে এনরিক মোরার নেতৃত্বে আসা প্রতিনিধিদলের অন্য সদস্যরা হলেন ইইউর এশিয়া প্যাসিফিকের (দক্ষিণ এশিয়া) প্রধান ও বাংলাদেশে নিযুক্ত ইইউর সাবেক রাষ্ট্রদূত রেনসজে তিয়ারিং এবং ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেলের রাজনৈতিক সচিব ইসাবেল পপ্পেলবাউম। ঢাকা থেকে যোগ দেবেন বর্তমান ইইউ ডেলিগেশন প্রধান রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি ও উপপ্রধান বার্নড স্পেনিয়ের।

universel cardiac hospital

প্রসঙ্গত, গত বছরের অক্টোবরে ব্রাসেলসে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে এনরিক মোরার বৈঠকে চলতি বছরে এই রাজনৈতিক সংলাপ আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়। গত ২৮ জুন ঢাকায় সংলাপের তারিখ চূড়ান্ত হলেও শেষ মুহূর্তে সংলাপটি হয়নি। বাংলাদেশের আগামী সাধারণ নির্বাচনের আগে ইইউর সঙ্গে রাজনৈতিক এই সংলাপকে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, রাজনৈতিক সংলাপে মানবাধিকার, সুশাসন, নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলা, বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক পরিস্থিতির নানা বিষয়ে আলোচনা হবে। তবে ইইউর সঙ্গে অংশীদারত্ব কৌশলগত পর্যায়ে উন্নীত করতে আরো কিছুটা সময় লাগবে। কারণ, রাজনৈতিক সংলাপ এবার প্রথমবারের মতো শুরু হচ্ছে। এই সংলাপের মধ্য দিয়ে দুই পক্ষের চাওয়া-পাওয়ার সমন্বয়ের মাধ্যমে কৌশলগত অংশীদারত্বের বিষয়টি চূড়ান্ত রূপ নেবে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে এখন ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে ইইউর কৌশলগত সম্পর্ক রয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বাংলাদেশ ও ইইউ আগামী বছর কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্ণ করবে। তাই উভয়পক্ষ চাইছে, সম্পর্ককে দুই দশক আগে করা সহযোগিতা চুক্তির মধ্যে আটকে না রেখে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্কের পাশাপাশি বহুমাত্রিক, বিশেষ করে কৌশলগত সম্পর্কে বিস্তৃত করতে। এরই ধারাবাহিকতায় এই রাজনৈতিক সংলাপের আয়োজন।

জানা গেছে, ২০০১ সালে ইইউর সঙ্গে সহযোগিতা চুক্তি করে বাংলাদেশ। তবে ইইউর সঙ্গে শুধুই উন্নয়ন ও বাণিজ্যিক সম্পর্কে আটকে থাকতে চায় না বাংলাদেশ, বরং কৌশলগত পর্যায়ে উন্নীত করতে চায়। যদিও ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তবে বহুমাত্রিক সম্পর্ক বাড়ানোর ব্যাপারে ইইউ যথেষ্ট আগ্রহী। ভূ-রাজনীতি, নিরাপত্তা ও ইন্দো-প্যাসিফিকের মতো বিষয়ে বাংলাদেশকে যুক্ত করতে চায় ইইউ। তাই ঢাকা-ব্রাসেলস সম্পর্ক নতুন ধাপে উন্নীত করার লক্ষ্যে আয়োজিত এ সংলাপের আলোচনায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রাধান্য দেয়া হবে ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে খাদ্য ও জ্বালানি সংকট, নিরাপত্তা, রোহিঙ্গা ইস্যু, অভিবাসন, জলবায়ু পরিবর্তন, উন্নয়ন, সমুদ্র অর্থনীতি ও আঞ্চলিক সহযোগিতাসহ বিভিন্ন বিষয়।

জানা গেছে, রাজনৈতিক সংলাপে ইইউ প্রতিনিধি দলের নেতা এনরিক মোরা ইউরোপীয় ইউনিয়নের উচ্চ প্রতিনিধি জোসেপ বোরেলের চিফ অব স্টাফ এবং ইউরোপীয় এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল। স্প্যানিশ এই কূটনীতিক ইরানের সঙ্গে আলোচনায় ইইউর প্রধান আলোচক ছিলেন। বাংলাদেশে সংলাপের নেতৃত্বে তার মতো দক্ষ ও গুরুত্বপূর্ণ কূটনীতিকের অংশগ্রহণকে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে বাংলাদেশ ও ইইউ। ঢাকা সফরকালে এনরিক মোরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলেও জানা যায়।

ইইউর ঢাকা কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, ইউরোপীয় জোটটি বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরো এক ধাপ উন্নীত করতে চায়। ব্রাসেলসের পক্ষ থেকে পার্টনারশিপ এন্ড কো-অপারেশন অ্যাগ্রিমেন্ট (পিসিএ) বা অংশীদার ও সহযোগিতা চুক্তি করার প্রস্তাব দেয়া হবে সংলাপে। এছাড়া রাশিয়া-ইউক্রেন ইস্যুতে বাংলাদেশের পূর্ণ সমর্থন চাইবে ইইউ। আরো আলোচনা হবে সামরিক ও প্রতিরক্ষা খাতে সম্পর্ক বৃদ্ধি, ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল, মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি ও রোহিঙ্গা সংকট, ইরানের পরমাণু কার্যক্রমসহ নানা আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক ইস্যু।

রাজনৈতিক সংলাপ প্রসঙ্গে ঢাকায় নিযুক্ত ইইউ ডেলিগেশন প্রধান রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি বলেন, বাংলাদেশ ও ইইউর মধ্যে প্রথমবারের মতো রাজনৈতিক সংলাপ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এটি অবশ্যই অন্য যে কোনো আলোচনার চেয়ে ভিন্ন। সাধারণত আলোচনা হয় বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আসন্ন নির্বাচন, মানবাধিকার ও সুশাসন নিয়ে। কিন্তু এ সংলাপের মূল লক্ষ্য আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সংকটগুলো মোকাবিলায় একসঙ্গে কাজ করা। তিনি আরো জানান, এ সংলাপে আলোচনা হবে শান্তিরক্ষা, নিরাপত্তা, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমন, ইন্দো-প্যাসিফিক, কানেক্টিভিটি, অবৈধ অভিবাসন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা, ইউক্রেন সংকটসহ বিভিন্ন ইস্যুতে।

শেয়ার করুন