বিশ্বকাপ ফুটবল : বিশ্ব ভ্রাতৃত্বকে আরো সুদৃঢ় করুক

রতন কুমার তুরী

বিশ্বকাপ ফুটবল ২০২২

পৃথিবীর ৩২ দেশের খেলোয়াড়, কর্মকতা, কর্মচারীদের নিয়ে ৩২টি দেশের মানুষের উপস্থিতিতে ৩২টি দেশের সমাজ-সংস্কৃতির ঐতিহ্য ফুটে উঠেছে এবার কাতার বিশ্বকাপ ফুটবলে। যা মধ্যপ্রাচ্যের ফুটবল ইতিহাসে একটি অনন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে। সত্যিই বিশ্বভ্রাতৃত্বের এমন অমলিন যোগসূত্র আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না।

কাতার বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে উত্তেজনার যেন শেষ নেই। বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে ছেয়ে গেছে ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনার পতাকায়। দুই দেশের সমর্থকদের মধ্যে নিত্য চলছে বাকবিতণ্ডা। কে কত বড় পতাকা বানিয়ে তা প্রদর্শন করতে পারে তা নিয়ে চলছে প্রতিযোগিতা। অনেকেই আবার যার যার দলের জার্সি গায়ে বের করছে বড় বড় মিছিল। শহর থেকে গ্রামে সবখানে দালান, রাস্তা, বাজার, এমনকি বসতবাড়িতে পর্যন্ত শোভা পাচ্ছে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন রঙের বাহারি পতাকা। এসব পতাকার মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে আর্জেন্টিনা এবং ব্রাজিলের পতাকা। এই দুদেশের সমর্থকদের মধ্যে চলছে নানা বাহাস। প্রতিদিনই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আর্জেন্টিনা এবং ব্রাজিল সমর্থকদের বিভিন্ন পোস্ট দেখা যাচ্ছে।

অনেকেই আবার নিয়ম করে প্রতিদিন পাড়ায় কিংবা মহল্লায় তাদের নিজস্ব পছন্দের ফুটবল টিমের ছবি নিয়ে মিছিল করে যাচ্ছে। আমাদের সবার খেয়াল রাখতে হবে যে এই ফুটবল উত্তেজনার বিষয়টি যেন বাড়াবাড়ির পর্যায়ে চলে না যায়। প্রকৃতপক্ষে ফুটবল হচ্ছে একটি নান্দনিক খেলা, এখানে হারজিত থাকবেই। সবাই হারজিতটা মেনে নেয়াই হচ্ছে খেলার সৌন্দর্যময়রূপ পরিগ্রহ করা। প্রকৃতপক্ষে ১৯৩০ সালের পর থেকে প্রতি চার বছর পরপর বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা অনুষ্ঠিত হয়। অবশ্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে মাঝখানে দুটি বিশ্বকাপ ফুটবলের আসর আয়োজন করা সম্ভব হয়নি।

২০২২ সালের বিশ্বকাপ ফুটবল হলো ২২তম আসর, যা কাতারে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বলাবাহুল্য কাতারের মোট জনসংখ্যা হচ্ছে ৩০ লাখ আর এই আসরে তাদের দেশে ১২ লাখ বিদেশি মানুষ খেলা দেখার জন্য দেশটির বিভিন্ন হোটেলে উঠেছে। এটি মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশে প্রথম বিশ্বকাপ ফুটবল অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কাতারের রাস্তায় রাস্তায় এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় ডিজিটাল ব্যানারে ইংরেজি এবং আরবিতে লেখা হজরত মুহাম্মদ (স.)-এর বাণী শোভা পাচ্ছে। ইসলামী সভ্যতা ও সংস্কৃতিকে বিদেশিদের কাছে তুলে ধরার জন্য দেশটির ধর্ম মন্ত্রণালয় এই বিষয়গুলো গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। দেশটিতে অতিথিদের আবাসনের জন্য বিশাল বিশাল হোটেলগুলো রাত-দিন কাজ করে যাচ্ছে।

এবারের কাতার বিশ্বকাপের অফিসিয়াল ফুটবলের নাম হচ্ছে ‘আল রিহলা’। এটি একটি আরবি শব্দ, যার অর্থ ভ্রমণ। মূলত বিশ্বখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতার ভ্রমণের জীবন কাহিনী নিয়ে রচিত বই আল রিহলার নামানুসারেই এই ফুটবলটির নাম রাখা হয়েছে। এটি তৈরি করেছে বরাবরের মতো বিশ্বখ্যাত স্পোর্টস কোম্পানি এডিডাস। এডিডাস দাবি করছে আল রিহলা এই পর্যন্ত তৈরিকৃত সবচেয়ে উন্নতমানের বল, এটি বাতাসে চমৎকারভাবে গতিপথ সামলাতে পারে। এই বলটিতে কাতারে বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী নকশা যেমন নৌকা, কাতারের জাতীয় পতাকাসহ আরো বেশকিছু জিনিস। এবার কাতার বিশ্বকাপ ফুটবলের মাসকটের নাম রাখা হয়েছে “লা’ইব”।

লা’ইব আরবি শব্দ। এর অর্থ অতি দক্ষ খেলোয়াড়। মাসকটটি সাদা রঙের কাতারি পোশাকে এক কিশোরকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে যো কিশোর প্রতিটি বিশ্বকাপ দেখেছে। ফিফার মতে- লা’ইব হচ্ছে একটি প্রাণচাঞ্চল্য এবং সাহসী এক চরিত্রের প্রতিচ্ছবি। একটি নির্ভীক এবং সাহসী এই তরুণ আগে সব বিশ্বকাপ ফুটবল দেখেছে এবং গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে এই লা’ইবকে। আমরা প্রত্যাশা করব কাতার বিশ্বকাপ ফুটবলে পৃথিবীর নানান মানুষের উপস্থিতির কারণে বিশ্বসংস্কৃতির বৈচিত্র্যময়তা ফুটে উঠেছে, যা বিশ্বভ্রাতৃত্বকে আরো সুদৃঢ় করবে।

রতন কুমার তুরী : লেখক ও শিক্ষক, ঢাকা।

শেয়ার করুন