সব এনজিওর চেক ডিজঅনার মামলা স্থগিত : হাইকোর্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক

হাইকোর্ট
ফাইল ছবি

ক্ষুদ্রঋণ আদায়ে দেশের যেসব এনজিওর পক্ষ থেকে চেক ডিজঅনার মামলা করা হয়েছিল সেগুলোর কার্যক্রম স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট।

একই সঙ্গে আদালত বলেছেন, এনজিওগুলো দাদন ব্যবসায়ীর মতো আচরণ করছে। তারা গরিবের উন্নয়নের নামে জীবন বিধ্বংসী কার্যক্রম করছে। গরিব-দুঃখি মানুষকে জেলে ভরছে। এটা হতে পারে না।

universel cardiac hospital

আদালত তার আদেশে বলেছেন, এখন থেকে কোনো এনজিও চেক ডিজঅনার মামলা করতে পারবে না।

এছাড়া ভবিষ্যতে ক্ষুদ্রঋণ দিয়ে কোনো এনজিও যদি তা আদায়ে চেক ডিজঅনার মামলা করে তাহলে তা সরাসরি খারিজ করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

একই সঙ্গে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম মনিটরিং করতে মাইক্রো ক্রেডিট অথরিটিকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

ইলিয়াস আলী নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের দায়ের করা চেক ডিজঅনারের মামলার কার্যক্রম বাতিল করে রোববার (২৭ নভেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের একক বেঞ্চ এ রায় দেন।

আদালত তার পর্যবেক্ষণে বলেন, এনজিওগুলো বেআইনিভাবে ঋণ আদায়ের জন্য চেক ডিজঅনার মামলা করে আসছে। ক্ষুদ্রঋণ আদায়ের জন্য তাদের কোনো আইনও নেই। তারা একমাত্র দেওয়ানি আদালতে অর্থ আদায়ের জন্য মোকদ্দমা দায়ের করতে পারে।

এদিন আদালতে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আশেক মোমেন। আর ইলিয়াস আলীর পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট রাশেদুজ্জামান বাসুনিয়া। ব্র্যাক ব্যাংকের পক্ষে অ্যাডভোকেট জিসান মাহমুদ ও অ্যাডভোকেট এএম জামিউল হক ফয়সাল উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে ২৩ নভেম্বর হাইকোর্ট এক রায়ে বলেছিলেন, কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে চেক ডিজঅনার মামলা করতে পারবে না। ঋণ আদায়ের জন্য শুধুমাত্র ২০০৩ সালের অর্থঋণ আইনের বর্ণিত উপায়ে অর্থঋণ আদালতে মামলা করতে পারবে।

রায়ের পর ব্র্যাক ব্যাংকের আইনজীবী সাইফুজ্জামান তুহিন বলেন, চেক ডিজঅনারের সব মামলার কার্যক্রম স্থগিত করেছেন আদালত। হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে।

রায়ে আদালত বলেছেন, ব্যাংক ঋণের বিপরীতে যে চেক নিচ্ছে সেটা জামানত। বিনিময়যোগ্য দলিল নয়। জামানত হিসেবে রাখা সেই চেক দিয়ে চেক ডিজঅনার মামলা করা যাবে না।

আদালত বলেন, ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ একটি চুক্তির মাধ্যমে নেওয়া হয়ে থাকে। ব্যাংকের কিছু দুর্নীতিবাজ, অসাধু কর্মকর্তা নিজেদের স্বার্থে, তাদের গোপন এজেন্ডা বাস্তবায়নে চেকের অপব্যবহার করে মামলা করে। তাদের ব্যবহার দাদন ব্যবসায়ীদের মতো।

আদালত বলেন, ঋণের বিপরীতে ব্ল্যাংক চেক নেওয়াটাই বেআইনি। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো দীর্ঘদিন ধরে এই বেআইনি কাজ করে আসছে।

রায়ে হাইকোর্ট নিম্ন আদালতের প্রতি নির্দেশনা দিয়ে বলেন, আজ থেকে কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান যদি চেক ডিজঅনার মামলা করে, তাহলে তা সরাসরি খারিজ করে দেবেন। একই সঙ্গে তাদের ঋণ আদায়ের জন্য অর্থঋণ আদালতে পাঠিয়ে দেবেন।

আদালত বলেন, ব্যাংক হওয়ার কথা ছিল গরিবের বন্ধু, কিন্তু তা না হয়ে ব্যাংক ও বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান গরিবের রক্ত চুষছে। এটা হতে পারে না। যারা হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে খেলাপি হচ্ছে ব্যাংকে তাদের ঋণ মওকুফ করার কথা শুনি। কিন্তু কোনো গরিবের ঋণ মওফুফ করার কথা কোনোদিন শুনিনি। নীলকর চাষিদের মতো, দাদন ব্যবসায়ীদের মতো যেনতেন ঋণ আদায় করাই তাদের লক্ষ্য। লোন আদায়ের জন্য অর্থঋণ আইনে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান মামলা না করে চেক ডিজঅনার মামলা করছে। এ কারণে আমাদের ক্রিমিনাল সিস্টেম প্রায় অকার্যকর হয়ে গেছে। তাই এখন থেকে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান শুধুমাত্র অর্থঋণ আদালতে মামলা করতে পারবে। অন্য কোনো আইনে নয়।

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি হাইকোর্টের রায়ের আলোকে নির্দেশনা জারি করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সব ধরনের ঋণের বিপরীতে ইনস্যুরেন্স কাভারেজ দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

শেয়ার করুন