সাম্প্রতিক সময়ে ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামোতে হামলা জোরদার করেছে রাশিয়া। এর মাধ্যমে রাশিয়া আসন্ন শীত মৌসুমে সাধারণ ইউক্রেনীয়দের জীবনকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দিতে চাইছে বলে অভিযোগ করেছে কিয়েভ।
এই পরিস্থিতিতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে অনেকটা একই অভিযোগ এনেছে সামরিক জোট ন্যাটো। জোটটির অভিযোগ, ইউক্রেন যুদ্ধে শীতকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে রাশিয়া। সোমবার (২৮ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স এবং সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়া সম্ভবত ইউক্রেনের পাওয়ার গ্রিড, গ্যাস অবকাঠামো এবং জনগণের জন্য মৌলিক পরিষেবাগুলোতে আক্রমণ চালিয়ে যাবে বলে সোমবার বলেছেন ন্যাটো মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ।
ন্যাটো সদস্য দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের দুই দিনের সম্মেলনের আগে বুখারেস্টে এক সংবাদ সম্মেলনে স্টলটেনবার্গ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা যখন শীত মৌসুমে প্রবেশ করছি, তখন ইউক্রেনের বিদ্যুৎ, গ্যাসসহ অন্যান্য অবকাঠামোতে রাশিয়ার এই হামলা এটাই প্রমাণ করে যে, প্রেসিডেন্ট (ভ্লাদিমির) পুতিন এখন ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অস্ত্র হিসাবে শীতকে ব্যবহার করার চেষ্টা করছেন।’
ন্যাটোর সেক্রেটারি জেনারেল জেনস স্টলটেনবার্গ জোর দিয়ে বলেন, রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট পুতিন তার সুবিধার জন্য শীত মৌসুম, তুষার এবং বরফকে ব্যবহার করার চেষ্টা করছেন এবং এটা শুধু যুদ্ধক্ষেত্রেই নয় বরং ইউক্রেনের বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধেও।
বুখারেস্টে ন্যাটো পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের দুই দিনের বৈঠকের প্রাক্কালে তিনি আরও বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট পুতিন এখন শীতকে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা করছেন, এবং এটি ভয়াবহ। আর তাই আমাদের আরও হামলার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। এ কারণেই ন্যাটোর মিত্ররা ইউক্রেনের প্রতি তাদের সহায়তা বাড়িয়েছে।’
এর আগে ইউক্রেনীয় জ্বালানি অবকাঠামোতে রাশিয়ার হামলা গণহত্যার সমান বলে দাবি করেছিল ইউক্রেন। দেশটির দাবি, প্রধান প্রধান স্থাপনায় রাশিয়ার এই হামলা ‘সমগ্র ইউক্রেনীয় জাতিকে’ লক্ষ্য করে চালানো হয়েছে এবং এটি কিয়েভকে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করার একটি প্রচেষ্টা।
সংবাদমাধ্যম বলছে, রাশিয়া সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ইউক্রেনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বাড়িয়েছে। মূলত, ক্রিমিয়া উপদ্বীপের সাথে রাশিয়াকে সংযুক্তকারী ইউরোপের বৃহত্তম রেল ও সড়ক সেতুতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার প্রতিশোধ হিসেবে গত ৮ অক্টোবর থেকে ইউক্রেনের জ্বালানি নেটওয়ার্ক ও অবকাঠামোগুলোতে আক্রমণ শুরু করে রাশিয়া।
এর মধ্যে গত মাসে অধিকৃত ক্রিমিয়া উপদ্বীপের বৃহত্তম বন্দরনগরী সেভাস্তোপলের কাছে কৃষ্ণ সাগরে রুশ নৌবহরে ড্রোন হামলার ঘটনা ঘটে। এরপর বেশ কয়েক দফায় ইউক্রেনের জ্বালানি স্থাপনা লক্ষ্য করে রাশিয়া কার্যত ক্ষেপণাস্ত্র বৃষ্টি চালায়।
বিবিসি বলছে, যুদ্ধ শুরুর পর সম্প্রতি ইউক্রেনে সবচেয়ে ভারী বিমান হামলা চালায় রাশিয়া। ওই হামলায়ও ইউক্রেনীয় জ্বালানি অবকাঠামো এবং বেসামরিক ভবনগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল।
মূলত সম্মুখসারির যুদ্ধে ব্যর্থতার পর রাশিয়ার সাম্প্রতিক এসব হামলা একটি বিস্তৃত কৌশলের অংশ এবং শীত শুরু হওয়ার সাথে সাথে ইউক্রেনে রুশ এই কৌশলের প্রভাব আরও তীব্রভাবে অনুভূত হতে শুরু করেছে।