বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলছে, এ বছর জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ৭১ লাখেরও বেশি বাংলাদেশি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। যা ২০৫০ সালের মধ্যে এক কোটি ৩৩ লাখে পৌঁছাতে পারে। সংস্থাটি বলছে, এখন বিশ্বব্যাপী ২৮ কোটি ১০ লাখ আন্তর্জাতিক অভিবাসী এবং কয়েক মিলিয়ন ব্যক্তি রাষ্ট্রহীন। এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
সোমবার ঢাকায় শরণার্থী এবং অভিবাসী স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বার্ষিক গ্লোবাল স্কুল শুরু করেছে ডব্লিউএইচও। তৃতীয় বারের মতো ঢাকায় এই আয়োজন করল সংস্থাটি। শরণার্থী এবং অভিবাসী স্বাস্থ্য সমস্যাকে যথেষ্ট ভাবে মোকাবেলা করার জন্য, দক্ষতা এবং সক্ষমতা তৈরিতে দেশ এবং অঞ্চলগুলোকে সমর্থনের লক্ষ্যে এই স্কুল অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গ্লোবাল স্কুল চলবে ২৮ নভেম্বর থেকে ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
পাঁচ দিনের এই আয়োজনে, নীতিনির্ধারক, জাতিসংঘের অংশীদার সংস্থা, একাডেমিয়া, সুশীল সমাজের সদস্য এবং গ্লোবাল স্কুলের স্টেকহোল্ডাররা সক্ষমতা-নির্মাণের মূল উপাদানগুলোকে তুলে ধরার জন্য জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা বিনিময় করবে। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আয়োজিত ই-লার্নিং হাইব্রিড ইভেন্টটি বিশ্বব্যাপী প্রচারিত হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, জলবায়ু পরিবর্তন, ক্রমবর্ধমান বৈষম্য, দ্বন্দ্ব, বাণিজ্য এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধি এই প্রবণতাকে ত্বরান্বিত করছে। শরণার্থী ও অভিবাসীদের স্বাস্থ্য অধিকার এবং চাহিদা পূরণে স্বাস্থ্যকর্মীর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
সোমবার ডব্লিউএইচওর মহাপরিচালক ড. টেডরস আধানম ঘেব্রেইয়েসুস বলেছেন, অভিবাসন ও বাস্তুচ্যুতি, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুস্থতার ওপর গভীর ও দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে। সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত পার্থক্য, আর্থিক প্রতিবন্ধকতা, কলঙ্ক এবং বৈষম্য সবই উদ্বাস্তু এবং অভিবাসীদের জন্য স্বাস্থ্য পরিষেবার সুযোগকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
তিনি বলেন, স্বাস্থ্য কর্মীদের এই বাধাগুলো অতিক্রম করতে সহায়তা করতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গ্লোবাল স্কুল অন রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্র্যান্ট হেলথ হলো শরণার্থী ও অভিবাসীদের আরও ভালোভাবে সেবা দেওয়ার জন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের সক্ষমতা তৈরির জন্য একটি মূল্যবান সম্পদ।
অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে বক্তব্য দেন ডব্লিউএইচওর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ডা. পুনম ক্ষেত্রপাল সিং। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যের জন্য মানবাধিকার এমন একটি অধিকার, যা সর্বত্র সকল মানুষের, বিশেষ করে উদ্বাস্তু এবং অভিবাসীদের জন্য প্রযোজ্য। কারণ, সত্যিকার অর্থে সম্মানিত, সুরক্ষিত এবং পরিপূর্ণ হওয়ার জন্য, এই অধিকার অবশ্যই সর্বাধিক প্রান্তিক এবং দুর্বলদের দ্বারা সম্পূর্ণরূপে উপভোগ করতে হবে।
১৯৭৮ সাল থেকে বাংলাদেশ জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের তিনটি বড় জনস্রোত প্রত্যক্ষ করেছে। যাদের প্রত্যেকের অনন্য চিকিৎসা চাহিদা রয়েছে এবং কক্সবাজারে বিশ্বের বৃহত্তম এবং সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ শিবিরে রাখা হয়েছে।
আঞ্চলিক পরিচালক বলেন, বাংলাদেশ শুধুমাত্র তাদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবার সুযোগই দেয়নি বরং সম্প্রতি তাদের কোভিড-১৯ টিকা দিয়েছে। আর, গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক, অর্থনৈতিক, পরিবেশগত এবং আইনি দুর্বলতাগুলো মোকাবেলার জন্য সমন্বিত প্রচেষ্টাও করেছে।
স্বাস্থ্য ও অভিবাসন কর্মসূচির পরিচালক ডা. সান্তিনো সেভেরোনি বলেছেন, বার্ষিক গ্লোবাল স্কুল অন রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেন্ট হেলথ হলো ডব্লিউএইচও হেলথ অ্যান্ড মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের একটি ফ্ল্যাগশিপ প্রকল্প। সকলের জন্য উন্মুক্ত গ্লোবাল স্কুলের লক্ষ্য হলো নীতি নির্ধারক, স্বাস্থ্য সেক্টর ম্যানেজার এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যে বিভিন্ন স্তরে কর্মরত কর্মকর্তাদের বিভিন্ন স্তরের মানুষের কাছে পৌঁছানো।
ডা. পুনম ক্ষেত্রপাল সিং বলেন, প্রতিটি প্রেক্ষাপট থেকে পরবর্তী স্তর পর্যন্ত, চ্যালেঞ্জগুলো এক রকম নয়, সমাধানও এক রকম হবে না। তবে সকল দেশ এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য প্রয়োজন হল এমন একটি স্বাস্থ্যকর্মী দল, যা সুপ্রশিক্ষিত, সাংস্কৃতিকভাবে সংবেদনশীল এবং যোগ্য। যা উদ্বাস্তু এবং অভিবাসীদের চাহিদা, তাদের ভাষা এবং অনন্য স্বাস্থ্য সমস্যার প্রতি সংবেদনশীল।
প্রতি বছর ভিন্ন ভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত গ্লোবাল স্কুলের লক্ষ্য হলো, ডব্লিউএইচও এবং সরকারগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতায়, দেশগুলোর শিক্ষা এবং অভিজ্ঞতাগুলোকে কাজে লাগানো।