বাংলাদেশে যেহেতু একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচিত সরকার ও শাসনব্যবস্থা বিদ্যমান আছে, সেখানে সবারই গ্রহণযোগ্য ও বাস্তবসম্মত সমালোচনার এবং অবাধ ও স্বাধীন মতামত প্রকাশ করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। সেই সব সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করেই বিএনপিসহ সব বিরোধী দল, উপদল সরকারের বিরুদ্ধে যেকোনো বিষয় বা লক্ষ্য-উদ্দেশ্য নিয়ে টেলিভিশনের টকশো, পত্রপত্রিকা, রাস্তা ও ময়দানে সরকারকে হুমকি-ধমকি, অশ্লীল ভাষায় বিভিন্ন ভঙ্গিমায় অশিষ্টাচার করে দেশের জনগণকে বিভ্রান্ত করছে। একটি স্থিতিশীল, উন্নয়নমুখী বাংলাদেশকে আবারও এক চরম ও ভয়ংকর অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার নীলনকশা চলছে।
২০১৪-১৫ সালে আমরা দেখেছি, পেট্রল ও গানপাউডার ব্যবহার করে দেশে নিরীহ জনগণ, পথচারী, বাস, ট্রেন, বিমানযাত্রী, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের কিংবা কর্তব্যরত পুলিশ, পুলিশ বক্স, বাস, ট্রেনে সরকারি-বেসরকারি সম্পদ ধ্বংস ও আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করা হয়েছিল। কারা করেছিল তা সবাই জানেন। এসব অস্থিতিশীলতার অপচেষ্টার বিপরীতে বঙ্গবন্ধুর যোগ্য উত্তরসূরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৃঢ়চিত্তে দেশ পরিচালনা করেছেন, দেশকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন এক বিস্ময়কর উচ্চতায়। বিশ্ব মিডিয়ার কোথাও প্রধানমন্ত্রীর বা তার পরিবার অথবা সরকারের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের বিরূপ মন্তব্য বা ক্ষতিকর প্রচারণার চিহ্ন পাওয়া যায়নি। বিশ্বের কোনো সংবাদমাধ্যমই বাংলাদেশকে এখন আর একটি গরিব, দুর্ভিক্ষের দেশ হিসেবে আখ্যায়িত করে না, বরং বাংলাদেশ আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অর্জিত অর্থনৈতিক, সামাজিক অগ্রগতি ও উন্নয়নকে জাতিসংঘসহ অনেক রাষ্ট্রই একটি মডেল বা আদর্শ হিসেবে অনুসরণ করছে। জাতিসংঘ বিভিন্ন দেশকে পরামর্শ প্রদান করে থাকে মর্মে বাংলাদেশের চলমান ও অর্জিত অর্থনৈতিক উন্নয়ন-অগ্রগতি, সামাজিক অগ্রসরতাকে একটি মডেল বা আদর্শ হিসেবে অনুকরণ অথবা অনুসরণ করতে। পিতামাতা, ভাই, ছোট আদরের শিশু শেখ রাসেলসহ দুই ভাবি তথা গোটা পবিরারের বর্বর ও মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডে স্বজন হারানো ব্যথা-বেদনা নিয়ে বিশ্বের কোনো দেশের সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধানের কন্যা দেশ ও জাতির ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য নিজ জীবন উৎসর্গ করে দেওয়ার কোনো নজির বা উদাহরণ নেই।
বর্তমান সরকার কর্তৃক গৃহীত দেশ ও জাতির ভাগ্যোন্নয়নে সামাজিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান নির্মাণ করে গরিব ভূমিহীনদের স্থায়ী আবাসস্থল তৈরি করে দেওয়াসহ অর্থহীন জনগণকে বিভিন্ন ধরনের ভাতা প্রদান করে তাদের সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় আনা হয়েছে, যা বিশ্বদরবারে আজ অত্যন্ত গর্বের সঙ্গে প্রচারণা পাচ্ছে। শুধু দুটি উদাহরণ দিয়েই বোঝানো যায় বিশ্বমিডিয়া বাংলাদশকে এখন কোন নজরে দেখছে। ‘দি ইকনমিক টাইমস্’-এর ১ জুন, ২০২১ তারিখের সংখ্যায় বলা হয়েছে, ‘পাকিস্তান ও ভারত এখন বাংলাদেশের চেয়েও গরিব।’ পাকিস্তানের সাবেক এক বিশ্বব্যাংক কর্মকর্তা আবিদ হাছান বাংলাদেশের চমকপ্রদ অর্থনৈতিক উন্নতি ও অগ্রগতির উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে ২০২১ সালে এক সংবাদে মন্তব্য করেছেন—‘পাকিস্তান যেভাবে অর্থনৈতিক সাহায্যের জন্য ভিক্ষার থলি বহন করে বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের দ্বারস্থ হচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে দেশটিকে ২০৩০ সালের মধ্যেই বাংলাদেশের কাছে সাহায্য চাইতে হবে।’
সারা বিশ্বে আজ রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধে অবরোধের-সংকটের প্রতিক্রিয়ায় জ্বালানি তেল, গ্যাসের দাম তিন-চার গুণ বেড়েছে। খাদ্য উৎপাদন, সরবরাহ, পরিবহনসহ খাদ্যসংকটে ও প্রয়োজনীয় দৈনন্দিন ব্যবহার্য জিনিসের চরম মূল্যবৃদ্ধিতে বিশ্বের মানুষ আজ দিশেহারা। বিশ্বের কোনো দেশই আজ আর্থিক সংকট, মুদ্রাস্ফীতি, দ্রব্যমূল্যের দিনদিন ঊর্ধ্বগতি ও জনগণের সর্বাত্মক ক্রয়ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণহীনতার বাইরে নয়। জাতিসংঘের অঙ্গ সংস্থা ইউএনডিপির প্রধান কর্মকর্তা সম্প্রতি এক হুঁশিয়ারি বার্তায় বলেছেন, ‘৫০টিরও অধিক সবচেয়ে গরিব দেশ দেউলিয়ায় পরিণত হওয়ার দিকে যাচ্ছে বা যাবে, যদি না বিশ্বের ধনী রাষ্ট্রসমূহ জরুরি ভিত্তিতে সাহায্য প্রদান না করে। ইউএনডিপির সদ্য প্রকাশিত একটি রিপোর্টে (১১ অক্টোবর ২০২২) ৫০টিরও অধিক দেশের, অর্থাৎ বিশ্বের অর্ধেক দেশের গরিব জনগণের জরুরি ভিত্তিতে নিজ নিজ দেশে বৈদেশিক ঋণের দায়মুক্তি প্রয়োজন।
কিন্তু স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি বিশ্বের বর্তমান অর্থনৈতিক বেহাল অবস্থা সম্পর্কে ভালোভাবেই অনুধাবন ও বুঝেশুনেই মতলববাজি একটি রাজনৈতিক অসৎ উদ্দেশ্য সাধনের কুমতলব সংবলিত কর্মসূচি দিচ্ছে। দেশের জনগণকে ভুল তথ্য, ফেসবুক, ইউটিউবে দেশে-বিদেশে অবস্থানকারী ওদের নিয়োজিত তথ্যসন্ত্রাসীর দল ভুয়া, বানোয়াট ও গুজব প্রচারণায় বাংলাদেশের জনগণকে বর্তমান সরকারপ্রধান ও সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ ও হেয় প্রতিপন্ন করার অমার্জনীয় গণবিরোধী অপরাধে লিপ্ত হয়েছে।
বিশ্বের চলমান অর্থনৈতিক সংকটের মূল কারণসমূহ সম্পূর্ণভাবে ওয়াকিবহাল হওয়া সত্ত্বেও স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি একটি মতলববাজি অসত্ উদ্দেশ্য নিয়ে দেশে আবারও অগ্নিসন্ত্রাসী, হত্যাকাণ্ড ও ধ্বংসের কর্মপরিকল্পনা নিয়ে দেশের বিরাজমান স্থিতিশীলতা, দেশের সার্বিক অর্জন, অগ্রগতি, উন্নয়নের চলমান ধারাকে চরমভাবে বিঘ্নিত করে আবারও বাংলাদেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে পরিণত করার পরিকল্পনায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। মুক্তিযোদ্ধা, শহিদ পরিবার, সর্বস্তরের জনগণ, রাজনৈতিক দলসমূহ, অবসরপ্রাপ্ত সামরিক-বেসামরিক, সরকারি-আধাসরকারি, অবসরপ্রাপ্ত এবং সরকারের বিভিন্ন সুবিধাপ্রাপ্ত, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী, কৃষক, শ্রমিক, সাংবাদিকদের রাস্তায় নামতে হবে। সমগ্র ডিসেম্বর মাসে, বিশেষ করে ‘১৬ ডিসেম্বর’ গোটা দেশের জাগ্রত মুক্তিযোদ্ধা ও জনগণের উচ্চারিত ‘জয় বাংলা’ ও ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগানে গোটা দেশকে প্রকম্পিত করে স্বাধীনতাবিরোধীদের চূড়ান্তভাবে স্তব্ধ করে দিতে হবে। এজন্য ঐক্যবদ্ধভাবে গোটা দেশকে ’৭১-এর সংগ্রামী চেতনা ও আদর্শ নিয়ে রাজপথে থাকতে হবে।
লক্ষ-কোটি জনতা ’৭১-এর মুক্তিসংগ্রামের চেতনা ও আদর্শে বলীয়ান হয়ে ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১-এর ঐতিহাসিক আত্মসমর্পণের সময়টিতেই টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত গগনবিদারি ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে প্রকম্পিত করতে হবে।
লেখক : বীর মুক্তিযোদ্ধা