সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে পরাভূত করাই হোক বিজয়ের মাসের অঙ্গীকার

বিশেষ কলাম

বিজয়ের মাস

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ- বাংলাদেশের সুদীর্ঘ রাজনৈতিক ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ ঘটনা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রামের এক ঐতিহাসিক ঘটনার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতির হাজার বছরের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বপ্নসাধ পূরণ হয় ডিসেম্বর মাসে। আমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন মুক্তিযুদ্ধের অবিস্মরণীয় গৌরবদীপ্ত চূড়ান্ত বিজয় আসে ১৬ ডিসেম্বর। বিশ্বের মানচিত্রে জন্ম নেয় স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। শোষক রাষ্ট্র পাকিস্তানকে পর্যুদস্ত করে অর্জিত এ বিজয় আনন্দ ও গৌরবের। একই সঙ্গে প্রিয়জন হারানো শোকের।

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ডাক দিয়েছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ ঐতিহাসিক সেই ভাষণে উদ্দীপ্ত বাঙালি জাতি সেদিন দৃঢ় শপথ নিয়েছিলেন স্বাধীনতা অর্জনের। ২৫ মার্চের নির্মম নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর শোষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল নির্ভীক বাঙালি এবং এক সাগর রক্ত, ৩০ লাখ প্রাণ আর দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে তারা ১৬ ডিসেম্বর ছিনিয়ে এনেছিল চূড়ান্ত বিজয়। তবে এ মাসের প্রতিটি দিনই ছিল ঘটনাবহুল। স্বাধীনতাকামী বাঙালির হৃদয়ে সেই সোনাঝরা গৌরবের দিনগুলো এসেছিল বৈজয়ন্তী উড়িয়ে।

universel cardiac hospital

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আমরা যারা সেদিন মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলাম কেউই বাংলাদেশ এখন যে পর্যায়ে আছে, এমন একটি দেশ চাইনি। সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর উত্থান, দুর্নীতি, দুরাচারী কর্মকাণ্ড এবং দুষ্কর্ম যেভাবে আমাদের সকলের উপর চেপে বসেছে এমন একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রত্যাশা নিয়ে আমরা যুদ্ধ করিনি। আমরা একটি সুন্দর, স্বাধীন, গণতান্ত্রিক, পরিচ্ছন্ন, বৈষম্যহীন এবং বিজ্ঞানমনস্ক রাষ্ট্রের জন্য যুদ্ধ করেছিলাম। একথা অনস্বীকার্য যে দেশ স্বাধীনের পর বিগত ৫১ বছরে সমগ্র দেশে অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবেও আমাদের বিশাল অর্জন এসেছে। তবে এই সময়ের মধ্যে আমাদের যে মূল দর্শন তথা মুক্তিযুদ্ধের যে চেতনা সেই প্রশ্নে আজ আমরা একটি কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি। কেননা দেশে ক্রিয়াশীল অন্ধকারের শক্তিগুলো ( রাজাকার, আলবদর, আলশামসের সদস্যরা এবং তথাকথিত নিরপেক্ষতার নামে সেদিন যে গ্রুপটা দেশের বিভিন্ন মাদ্রাসা পরিচালনা করত) যারা ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের পক্ষে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ভূমিকা রেখেছিল তারা আজ আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। দেশবিরোধী এই শক্তিগুলো আইসিস, তালেবান, পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর আর্থিক সহয়তায় অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার লক্ষে মাঠে-ময়দানে ধর্মের নামে উগ্র মতবাদ প্রচার ও বিভিন্ন ধরনের উস্কানিমূল বক্তব্য দিয়ে জাতিতে বিভক্তি সৃষ্টির ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।

আমরা আজ তাদের সতর্ক করে দিতে চাই, ত্রিশ লাখ শহীদের রক্ত ও দুই লাখ মা-বোনের ইজ্জত-সম্ভ্রমের বিনিময়ে ১৯৭১ সালে আমরা যে বিজয় অর্জন করেছি সেই বিজয়কে সাম্প্রদায়িক অপশক্তির কাছে কখনোই নস্যাৎ হতে দিতে পারি না। সুতরাং যারা বাংলাদেশ ও দেশের অগ্রযাত্রাকে ভালোবাসেন, এদেশের সার্বভৌমত্বকে অক্ষুণ্ণ রাখতে চান এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি যাদের শতভাগ আনুগত্য আছে আসুন আমরা এই অপশক্তিকে পরাভূত করতে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একাত্তরের মতো আবারও ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলি।

শেয়ার করুন