এক এক করে ইউক্রেন যুদ্ধ গড়িয়েছে নয় মাসে। দীর্ঘ সময় ধরে হামলা ও পাল্টা হামলা চলার পরও চলমান এই যুদ্ধ বন্ধ হওয়ার কোনও আভাস নেই। একইসঙ্গে নেই শান্তি প্রতিষ্ঠায় সংলাপে বসার পরিকল্পনাও। আর তাই সামরিক-বেসামরিক প্রাণহানি অব্যাহত থাকার আশঙ্কাও রয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি থাকার কথা জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তবে সেখানে একটি শর্ত রেখেছেন তিনি। শুক্রবার (২ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বৃহস্পতিবার বলেছেন, রাশিয়ান নেতা সত্যিকার অর্থে যুদ্ধের অবসান ঘটাতে চাইলে তিনি প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে কথা বলতে রাজি হবেন। আর সেটি হলে ইউক্রেন আক্রমণের পর প্রথমবারের মতো পুতিনের সঙ্গে কথা বলবেন মার্কিন এই প্রেসিডেন্ট।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর রাষ্ট্রীয় সফরের সময় কথা জো বাইডেন একথা বলেন। ম্যাক্রোঁ এর আগে বলেছিলেন, তিনি ওয়াশিংটন সফরের পরে পুতিনের সাথে আবার কথা বলবেন।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সাথে কয়েক ঘণ্টা ব্যক্তিগত আলোচনার পর হোয়াইট হাউসে একটি যৌথ সংবাদ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, পুতিনের সাথে এখনই যোগাযোগ করার তার তাৎক্ষণিক কোনও পরিকল্পনা নেই। তবে সেই (পুতিনের সঙ্গে আলোচনার) সম্ভাবনা উন্মুক্ত আছে।
সংবাদ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, ‘আমি প্রেসিডেন্ট পুতিনের সাথে কথা বলার জন্য প্রস্তুত আছি যদি বাস্তবে তার মধ্যে এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগ্রহ থাকে যে তিনি যুদ্ধ শেষ করার উপায় খুঁজছেন। কিন্তু তিনি এখনও তা করেননি।’
তিনি আরও বলেন, ‘যদি তা হয়, তাহলে আমার ফরাসি এবং আমার ন্যাটো বন্ধুদের সাথে পরামর্শ করে, আমি পুতিনের সাথে বসে তার মনে কী আছে তা দেখতে পেরে খুশি হব। তবে তিনি এখনও এটি করেননি।’
অবশ্য ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন শুরুর পর থেকে প্রেসিডেন্ট বাইডেন এবং ম্যাক্রোঁ উভয়েই ইউক্রেনকে দীর্ঘমেয়াদী সহায়তা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কারণ রাশিয়ান আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করছে পূর্ব ইউরোপের এই দেশটি।
এদিন যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাটিক এই প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ‘এই যুদ্ধ শেষ করার একটা উপায় আছে – বেশ যুক্তিসঙ্গত উপায়। আর তা হচ্ছে- পুতিন ইউক্রেন থেকে বের হয়ে যাবেন। কিন্তু মনে হচ্ছে না তিনি সেটি করবেন।’
বাইডেনের ভাষায়, ‘নার্সারি, হাসপাতাল, শিশুদের বাড়িতে বোমা হামলা করা হচ্ছে। পুতিন যা করছেন তা অসুস্থ কাজ। ইউক্রেনকে পরাজিত করতে চাওয়ার বিষয়ে এই পরিকল্পনা পুতিনের বোধশক্তির বাইরে। তিনি প্রাথমিকভাবে যা কিছু হিসাব করেছেন তার পুরোটাই ভুল।’
অন্যদিকে সংবাদ সম্মেলনে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আরও সামরিক ও মানবিক সহায়তা দিয়ে ইউক্রেনের প্রতি সহায়তা অব্যাহত রাখবে বলে ওয়াশিংটনের প্রতি তার আস্থা রয়েছে।
হোয়াইট হাউসে উভয় নেতার ব্যক্তিগত আলোচনার আগে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান জো বাইডেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর ফরাসি নেতার যুক্তরাষ্ট্রে এটিই প্রথম রাষ্ট্রীয় সফর। বাইডেন বলেন, ‘ফ্রান্স এবং যুক্তরাষ্ট্র ভ্লাদিমির পুতিনের উচ্চাকাঙ্ক্ষার মুখোমুখি হচ্ছে।’
বাইডেন আরও বলেন, ‘আমাদের প্রতিরক্ষার জন্য আমাদের দুই দেশের মধ্যে জোট অপরিহার্য। যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ফ্রান্সের চেয়ে ভালো অংশীদার আর কেউ হতে পারে না।’
এমনকি ফ্রান্সকে ‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রাচীনতম মিত্র এবং স্বাধীনতার অটল অংশীদার’ হিসাবেও বর্ণনা করেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন।