জো বাইডেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই সৌদি আরবের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের মিত্রতার সম্পর্কে যেন ভাটা পড়েছে। এছাড়া ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন শুরুর পর তেলসহ নানা ইস্যুতে রিয়াদ ও ওয়াশিংটনের মধ্যে আগে থেকে বিদ্যমান দূরত্বও যেন রূপ নিয়েছে উত্তেজনায়।
আর যুত্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের উত্তেজনা তো আছেই। এই পরিস্থিতিতে ওয়াশিংটনের সঙ্গে বেইজিং-রিয়াদের উত্তেজনার মধ্যেই সৌদি আরব সফরে যাচ্ছেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। চলতি সপ্তাহেই এই সফর অনুষ্ঠিত হতে পারে। স্থানীয় সময় শনিবার (৫ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ও দুই দেশের (সৌদি আরব ও চীন) মধ্যকার উত্তেজনার মধ্যে সৌদি আরবে যাচ্ছেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। এমনকি আগামী বৃহস্পতিবার তিনি মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটিতে পৌঁছতে চলেছেন বলেও জানিয়েছে প্রভাবশালী মার্কিন এই সংবাদমাধ্যমটি।
বেশ কয়েকটি সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে সিএনএন জানিয়েছে, সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সফরের সময় সেখানে চীন-আরব শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। ওই সম্মেলনে ১৪টি আরব দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা অংশ নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
এছাড়া দুই দিনের ওই সফরে চীন-জিসিসি সম্মেলন হওয়ার কথাও রয়েছে বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমটি।
মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় মিত্র দেশ সৌদি আরবে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সফরের গুজব বেশ কয়েক মাস ধরেই শোনা যাচ্ছে। তবে এখনও পর্যন্ত সৌদি আরব এবং চীন সরকারের পক্ষ থেকে এই বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়নি।
সিএনএন বলছে, গত সপ্তাহে সৌদি সরকার সঠিক তারিখ নিশ্চিত না করেই শীর্ষ সম্মেলন কভার করার জন্য সাংবাদিকদের নিবন্ধন ফর্ম পাঠিয়েছে। এছাড়া শি জিনপিংয়ের সফর এবং নির্ধারিত শীর্ষ সম্মেলন সম্পর্কে তথ্যের জন্য সিএনএন যোগাযোগ করলেও কোনও মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে সৌদি সরকার।
সংবাদমাধ্যম বলছে, তেল উৎপাদন কমানোকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের মধ্যে সম্পর্ক অনেকটা তলানিতে ঠেকেছে। প্রায় সাড়ে নয় মাস ধরে চলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সঙ্গে তেলের উৎপাদন কমানোর সিদ্ধান্তকে সংশ্লিষ্ট করা হচ্ছে এবং রাশিয়ার স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলেও পশ্চিমা দেশগুলো সন্দেহ প্রকাশ করে আসছে।
সম্প্রতি তেল-উৎপাদনকারী শীর্ষ দেশগুলোর জোট ওপেক প্লাস দৈনিক ২০ লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদন কমানোর ব্যাপারে একটি ঐকমত্যে পৌঁছায়। যা ২০২০ সালের পর থেকে সর্বোচ্চ। এছাড়া ওপেক প্লাসের তেল উৎপাদান কমানোর এই হার বৈশ্বিক সরবরাহের প্রায় ২ শতাংশের সমান।
মূলত ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের কারণে মস্কোর বিরুদ্ধে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো। এরই পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র তেল উৎপাদন বাড়ানোর চাহিদা জানালেও সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন তেল-উৎপাদনকারী দেশগুলোর জোট তেলের উৎপাদন কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়।
মার্কিন মিত্র হলেও রিয়াদের এই সিদ্ধান্ত কার্যত রাশিয়ার পাশে থাকার সমান। এতে করে বাইডেন প্রশাসনে ক্ষোভের সঞ্চার হয় এবং যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের মধ্যে এখনও তেল উৎপাদন নিয়ে উত্তপ্ত বিবাদ চলছে। সিএনএন জানিয়েছে, তেল উৎপাদন কমানোর বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপক প্রচারণা সত্ত্বেও এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
এর আগে চলতি বছরের জুলাই মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সৌদি আরব সফর করেন। সেখানে সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সাথে বৈঠকের সময় সাংবাদিক জামাল খাশোগির ২০১৮ সালের হত্যাকাণ্ডের কথা তুলে ধরেন তিনি।
বাইডেন বলেছিলেন, সৌদি আরবের এই নেতা মার্কিনভিত্তিক সাংবাদিকের মৃত্যুর জন্য দায়ী বলে তিনি বিশ্বাস করেন।
অবশ্য শুধু সৌদি আররই নয় চীনের সঙ্গেও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছে। এছাড়া চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে পশ্চিমাদের চেয়ে ভিন্ন অবস্থান নিয়েছে চীন ও সৌদি আরব।
উভয়ই রাশিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞাগুলোকে সমর্থন করা থেকে বিরত রয়েছে এবং রিয়াদ বারবার বলেছে, মস্কো বর্তমান বিশ্বের প্রধান জ্বালানি-উৎপাদনকারী অংশীদার যার সঙ্গে ওপেক প্লাসের সিদ্ধান্তের বিষয়ে পরামর্শ করতেই হবে।
এছাড়া গত মাসে তেল উৎপাদন ব্যাপক হারে কমানোর পর কিছু মার্কিন কর্মকর্তা সৌদি আরবকে রাশিয়ার পাশে থাকার এবং ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে সহায়তা করার অভিযোগ করেছেন।
অবশ্য সৌদি কর্মকর্তারা তেল সরবরাহ কমিয়ে রাশিয়ার পাশে থাকার কথা অস্বীকার করেছেন।