ফুটবল নিয়ে মারামারি, খুনোখুনি কেন?

সম্পাদকীয়

নেইমার-মেসি
নেইমার-মেসি। সংগৃহীত ছবি

অলিম্পিককে একসময় ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ বলা হতো। সেই উপমা আপন সৌন্দর্যে কবেই গায়ে জড়িয়েছে ফুটবল বিশ্বকাপ। গোটা পৃথিবীর ক্রীড়াপ্রেমী চলমান বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজনে আলোড়িত। বিশ্ব ফুটবলের তারকাদের পায়ের জাদু দেখতে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অসংখ্য চোখ নির্দিষ্ট সময়ে থাকে ফুটবল মাঠের দিকে, সেটা হয় সরাসরি, নয়তো টিভিতে, ল্যাপটপে, মুঠোফোন সেটে। আমাদের দেশের ক্রীড়াপ্রেমীরাও এর বাইরে নন।

মত ও পথ যখন মঙ্গলবার রাতে এ সম্পাদকীয় প্রচার করে, এরপর ঘণ্টাখানেকের কম সময়ের মধ্যে এবারের বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ডে পর্তুগাল ও সুইজারল্যান্ডের খেলা শুরু হওয়ার কথা। দেশের অসংখ্য দর্শক অপেক্ষা করছিলেন খেলা দেখার। যে কোনো খেলায় নিজের পছন্দের দলকে এগিয়ে রাখা, বিজয়ী দেখতে চাওয়া ক্রীড়াপ্রেমীদের চিরন্তন প্রবণতা। পছন্দের দলের প্রতি সমর্থন সবসময় গভীর আবেগের বিষয়।

universel cardiac hospital

আবেগের প্রাবল্যে অনেকে নিজের দলকে নিয়ে তর্কে জড়াতে পারেন। অন্যদলের সমর্থকদের সঙ্গে তার বুদ্ধিদীপ্ত তর্কযুদ্ধও হতে পারে। এগুলো ঠেকিয়ে রাখা বেশ কঠিন। এ বাস্তবতা আমরা অস্বীকার করতে পারি না। তাছাড়া খেলা নিয়ে সমর্থন ও আনন্দজাত উত্তেজনা দোষের কিছু নয়। সেটা অশালীন আক্রমণ, মারামারি, খুনোখুনির দিকে ধাবিত হলে তা নি:সন্দেহে উদ্বেগের।

পছন্দের দলকে সমর্থন জানিয়ে ও প্রতিপক্ষ দলকে খোঁচা দিয়ে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগের অন্যান্য মাধ্যমে মজাদার লেখা নানা বয়সের মানুষ যেমন লিখছেন, তেমনই কেউ কেউ চরম আক্রমণাত্মক কথাবার্তাও লিখছেন। ফেসবুকে জ্যেষ্ঠ কোনো নাগরিককে অসম্মানজনক মন্তব্য করছেন অনেকে। বিশেষ করে, ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার সমর্থকদের মধ্যে এ ধরনের প্রতিযোগিতা যেন বেশি। খেলাধুলার মতো নিরেট বিনোদনের একটি বিষয় কেন্দ্র করে এমন আক্রমণাত্মক আচরণ অন্যকে আহত করছে, মারামারির জন্ম দিচ্ছে, এমনকি তা কখনো কখনো খুনোখুনিতে গড়াচ্ছে।

ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা নিয়ে বাকবিতণ্ডার জেরে গত ২৮ নভেম্বর চাঁদপুরে এক কিশোরকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। আগেও এমন ঘটনা ঘটে। গত নভেম্বর মাসের তৃতীয় সপ্তাহে আর্ন্তজাতিক প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’ এ দেশে বিশ্বকাপ ফুটবল ঘিরে অতীতে দুইপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা, খুনোখুনি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

খেলার মধ্য দিয়ে খেলোয়াড়রা যেমন বিনোদিত হন, তেমনই উপভোগকারীরাও বিনোদিত হন। তাদের দলকে সমর্থন করে প্রতিপক্ষ দলের সমর্থকদের সঙ্গে ঝগড়া-বিবাদে কেউ জড়াবেন, বা কারো প্রাণ ঝরে যাবে- এমন প্রত্যাশা নিয়ে কোনো খেলোয়াড় মাঠে নামেন না। আয়োজকদের কাছেও তা কিছুতেই কাম্য নয়। কোনো ফুটবল দলকে সমর্থন করার চেয়ে মানুষের জীবনের দাম অনেক বেশি, একটার সঙ্গে আরেকটার তুলনাও হয় না।

সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার লক্ষ্য নিয়ে দুইপক্ষই খেলতে মাঠে নামে। দলকে সমর্থনের নামে প্রতিপক্ষের সমর্থকদেরকে অশ্লীল আক্রমণ, ঝগড়া-ফ্যাসাদ করার কোনো যুক্তি নেই। সমাজবিজ্ঞানীরা এটাকে বলছেন মূল্যবোধের অবক্ষয়। খেলাধুলা কিশোর, তরুণ, যুবকদেরকে মাদকাসক্ত হয়ে পড়া থেকে ঠেকাতে পারে, জঙ্গিবাদসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে দূরে রাখতে পারে। আমরা অবশ্যই নানা বয়সের নারী পুরুষকে খেলাধুলা চর্চায় উৎসাহিত করতে আগ্রহী। তবে অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো ঘটনা কাম্য নয়।

শেয়ার করুন