প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমি বাবা-মা ও ভাই সবাইকে হারিয়েছি। নতুন করে হারানোর কিছু নেই। হারানোর কষ্ট কী আমার চেয়ে কেউ ভালো বুঝবে না। আপনাদের মাঝে বাবা-মায়ের স্নেহ, ভাইবোনের ভালোবাসা পাওয়ার আশা করি। আপনারা আমার পরিবার। আপনারা আমাকে আগলে রেখেছেন। আমার একমাত্র চাওয়া আমি যতক্ষণ ক্ষমতায় থাকবো দেশের মানুষের আহার সংস্থান করা আমার কাজ।
আজ বুধবার কক্সবাজারে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
স্বাধীনতা-পরবর্তী বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর কক্সবাজার তথা বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতের প্রতি কেউ মুখ ফিরে থাকায়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, দীর্ঘ ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে কক্সবাজারকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছিল। ২০০১ সালে আবার বিএনপি ক্ষমতায় এলে সেসব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড থমকে দেয়। কিন্তু ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় এলে কক্সবাজারে ১২টি মেগা প্রকল্পসহ ৭৩টি উন্নয়ন প্রকল্প শুরু করা হয়। এরই মধ্যে আমরা ২৯টি প্রকল্প শেষ করতে পেরেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, রেললাইন, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্প হলে এর সুফল কক্সবাজারবাসীসহ পুরোদেশ ভোগ করতে পারবে।
মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, মানবিক কারণে আমরা বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছিলাম। যতদ্রুত সম্ভব তাদের স্বদেশে প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা চলমান রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আমরা শান্তির র্যালি করছিলাম। সেখানে গ্রেনেড হামলা করেছিল খালেদা জিয়ার চক্র। এতে আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভি রহমানসহ ২২ নেতাকর্মীর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মারা খালেদা জিয়াদের কাজ। পেট্রল সন্ত্রাসে অসংখ্য মানুষকে হত্যা করেছে। জামায়াত-বিএনপি হত্যা, গুম, খুনসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত। অস্ত্র চোরাকারবারের মামলায় অভিযুক্ত তারেক রহমান চক্র জঙ্গিবাদের মদদদাতা। তারা ধ্বংস ছাড়া কিছুই পারে না।’
টিসিবির মাধ্যমে সস্তায় চাল, ডাল, তেল, চিনি পাওয়ার সুব্যবস্থা করা হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এদেশের একজন মানুষও অভুক্ত থাকবে না। বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধশীল দেশে রূপান্তরের কাজ চলছে। ২০৪১ সালে আমরা সে লক্ষ্যে পৌঁছাবো ইনশাল্লাহ। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশে কোনো মানুষ ঠিকানাহীন, গৃহহীন থাকবে না।’
কক্সবাজারের পর্যটনকে ঢেলে সাজানোর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘টেকনাফের সাবরাংয়ে বিদেশিদের জন্য এক্সক্লুসিভ জোন করা হচ্ছে। দীর্ঘ সৈকতের সবখানেই পর্যটন বিস্তৃত করার কাজ চলছে। গড়ে তোলা হচ্ছে নতুন নতুন পর্যটন স্পট। কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (কউক) দিয়ে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা হচ্ছে কক্সবাজার।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের যথাসাধ্য কক্সবাজারে দেওয়া হয়েছে। ২০২৩ সালে জাতীয় নির্বাচন। চলমান উন্নয়ন বিবেচনা করে নৌকায় ভোট চাই। আমার জন্য দোয়া করবেন।
সবশেষে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আবার আসিব ফিরে, এই সৈকতের তীরে। খোদা হাফেজ।’
এরআগে, সকাল থেকে প্রধানমন্ত্রীর জনসভাস্থলে নেতাকর্মীরা দলে দলে আসতে শুরু করেন। অনেকই বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে স্লোগানে স্লোগানে জনসভাস্থলে প্রবেশ করেন। বিশেষ রঙের টি-শার্ট ক্যাপ পরিধানের পাশাপাশি বিভিন্ন নেতার ছবিসহ প্ল্যাকার্ড ও নৌকার নানা কারুকাজ তাদের হাতে দেখা যায়।
জনসভাস্থল শেখ কামাল স্টেডিয়ামে তিনটি প্রবেশপথ রাখা হয়। যার একটি ভিআইপি গেট। এর মধ্যে একটি সিনিয়র নেতা ও বিশেষপ্রাপ্ত। অপরটি সাধারণ জনগণের জন্য। নেতাকর্মীদের দাবি, জনসভায় কয়েক লাখ মানুষের সমাগম হয়।
জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ফরিদুল ইসলাম চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ড. হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, দপ্তর সম্পাদক ব্যরিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, উপপ্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন প্রমুখ।