জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস জীববৈচিত্র্য নিয়ে সম্মেলন (কপ-১৫) আয়োজনের জন্য কানাডা সরকারের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেছেন, এই সম্মেলন প্রকৃতির সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক গড়তে সহায়তা করবে। আমরা প্রকৃতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছি। প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ নয়, মানিয়েই চলতে হবে। এক সময়ের সমৃদ্ধ বন, জঙ্গল, কৃষিজমি, মহাসাগর, নদী, সমুদ্র এবং হ্রদ মানুষের কর্মকাণ্ডে ধ্বংস হচ্ছে। আমরা বস্তুগত লাভের খেলায় পরিণত হয়েছি।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (৬ ডিসেম্বর) বিকেলে সাড়ে ৩টায় কানাডার মন্ট্রিয়ালে বিশ্বব্যাপী জীববৈচিত্র্য নিয়ে সম্মেলনের (কপ-১৫) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
এসময় আরও বক্তব্য রাখেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, মন্ট্রিয়ালের সিটি মেয়র ভেলেরি প্ল্যান্টি, চীনের পরিবেশ বিষয়কমন্ত্রী হুয়াং রুনকুই এবং চীনের কুনমিং সিটি মেয়র লিও জিয়াচেন প্রমুখ। সম্মেলনে ১৯৬টি দেশের প্রতিনিধি অংশ নিচ্ছেন।
জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, আমাদের জমিতে ব্যবহৃত রাসায়নিক, কীটনাশক এবং প্লাস্টিকের কারণে বিষাক্ত ও দমবন্ধকর অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। জীবাশ্ম জ্বালানির আসক্তি আমাদের জলবায়ুকে বিশৃঙ্খলার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। টেকসই উৎপাদন এবং দানবীয় ভোগের অভ্যাস আমাদের বিশ্বের অধঃপতন ঘটিয়েছে।
‘এর ফলে মানবতা গণবিলুপ্তির একটি অস্ত্রে পরিণত হয়েছে, এক মিলিয়ন প্রজাতি ঝুঁকিতে রয়েছে আর চিরতরে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে। এই ধ্বংসের জন্য আমাদের কড়া মূল্য দিতে হবে। চাকরি হারানো, অর্থনৈতিক বিপর্যয়, ক্রমবর্ধমান ক্ষুধা, খাদ্য, পানি এবং শক্তির জন্য উচ্চ খরচ, রোগসহ বিশ্ব নানা সমস্যায় পতিত হচ্ছে।’
তিনি বলেন, প্রকৃতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ শেষ পর্যন্ত নিজেদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। মানবতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ। আমাদের উচ্চাভিলাষী জাতীয় কর্মপরিকল্পনা তৈরির আগে বিভিন্ন দেশের সরকারকে জীববৈচিত্র্যের কথা ভাবতে হবে।
আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা এবং সংরক্ষণ করে আমাদের প্রাকৃতিক উপহার এবং আমাদের গ্রহকে নিরাময়ের পথে রাখুন। এ কথা চিন্তা করেই আমাদের ব্যবসা এবং বিনিয়োগকারীদের ব্যবসায়িক পরিকল্পনা নিতে হবে। প্রথমেই সুরক্ষার বিষয়টি মনে রাখতে হবে এবং বিনিয়োগ করতে হবে।
তিনি বলেন, মিশরে সাম্প্রতিক জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন-সম্মতিকৃত ক্ষতি এবং ক্ষয়ক্ষতিসহ তহবিল, নবায়নযোগ্য উপায়ে স্থানান্তরকে ত্বরান্বিত করতে হবে। জলবায়ু বিষয়ক কার্যক্রম এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষা একই মুদ্রার দুটি দিক। আমাদের নিশ্চিত করতে হবে কীভাবে উন্নয়নশীল দেশগুলো সরাসরি, সহজ এবং দ্রুত প্রয়োজনীয় অর্থ পাবে।
তিনি বলেন, দুঃখজনক সত্য হলো আমরা আমাদের পৃথিবীকে জগাখিচুড়ি করে ফেলেছি। শুধুমাত্র প্ল্যানেট আর্থ-এ বিনিয়োগ করেই আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ রক্ষা করতে পারি।
এর আগে এই সম্মেলনর প্রথম অংশ চীনে অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু মহামারি করোনার কারণে এটি ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত হয়। আর সম্মেলনের দ্বিতীয় অংশে সশরীরে ছাড়াও ভার্চুয়ালিও অনেকে যুক্ত হয়েছেন।