খালেদা জিয়ার মুক্তি, বিদেশে তাঁর চিকিৎসার দাবিতে এ পর্যন্ত কয়েকবার বিএনপির সংসদ সদস্যরা একাদশ জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগের ‘হুমকি’ দেন। দলটির নেতাদের এ অসাংবিধানিক রাজনৈতিক কৌশল এতোদিন পর্যন্ত ‘হুমকিতেই’ আটকে ছিল। আজ শনিবার ঢাকার গোলাপবাগ মাঠে দলটির আয়োজিত ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশে সংসদ সদস্যরা ‘আনুষ্ঠানিক পদত্যাগের ঘোষণা’ দেন। আগামীকাল তাদের জাতীয় সংসদের স্পিকারের কাছে সই করা আনুষ্ঠানিক পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার কথা রয়েছে বলে মত ও পথসহ সহযোগী সংবাদমাধ্যমগুলোতে সংবাদ প্রচারিত হয়েছে।
দলীয় সভা-সমাবেশে ‘হুমকি, ঘোষণা’ দিলে সংসদ থেকে পদত্যাগের বিষয়টি কার্যকর হয় না, এটা যে কোনো সংসদ সদস্য জানেন। বিএনপির ‘হুমকি, ঘোষণাকে’ আওয়ামী লীগ ‘রাজনৈতিক স্ট্যান্টবাজি’ বলছে। কারণ, জাতীয় সংসদ থেকে কোনো সদস্য পদত্যাগ করতে চাইলে তাকে সংসদীয় কার্যপ্রণালী বিধি ও সংবিধানের ধারা অনুসরণ করতে হয়। সংবিধানে বিষয়টি স্পষ্ট, এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ কারো বেলায়ই নেই। দলীয় পদ থেকে পদত্যাগ আর জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ- দুটির প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়।
ব্যক্তিস্বার্থে দলীয় জনসভায় সংসদ থেকে পদত্যাগের ‘হুমকি’ দেওয়ার জন্য জনগণ কাউকে প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত করেন না। ভোট দিয়ে জনগণ নির্বাচিত করেন তাদের সুখ-দুঃখের কথা সংসদে বলার জন্য। জনগণের ভোটে নির্বাচিত কোনো জনপ্রতিনিধির সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তার এলাকার জনগণের কথা অবশ্যই ভাবতে হবে। না হলে জনগণ বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে মেনে নেবেন না।
বিএনপির সংসদ সদস্য আছেন মাত্র সাতজন। তাদের মধ্যে ছয়জন নির্বাচিত, একজন সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য। মোট সাড়ে তিনশত সদস্যের মধ্যে এতো স্বল্পসংখ্যক সদস্য পদত্যাগ করলে দেশে কোনো ধরনের সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি হবে না। সংসদীয় ও জাতীয় রাজনীতিতে এ পদত্যাগ কোনো প্রভাব ফেলবে না। জাতীয় সংসদের কার্যক্রমে কোনো ব্যত্যয় ঘটবে না।
বিএনপির এ কৌশলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ কোনো চাপে পড়বে না। তারা সত্যি পদত্যাগ করলে সংসদীয় আসনগুলো ‘শূন্য’ হিসেবে ঘোষণা হবে। সাংবিধানিক নির্দেশনা অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন (ইসি) শূন্য আসনগুলোতে উপনির্বাচনের আয়োজন করবে। জনগণ যাদেরকে যোগ্য মনে করবে, তারা নির্বাচিত হয়ে সংসদে আসবেন। শূন্যতা কেটে যাবে। পদত্যাগের কৌশলের মধ্য দিয়ে বিএনপির নেতা ও সার্বিকভাবে দলটির ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা বেশি।
বিএনপির যে কয়েকজনই সংসদে আছেন, তারা কথা বলছেন। সংসদ অধিবেশন চলাকালে বিটিভি ও সংসদ টিভিতে লাইভ দেখানো হয়। বেসরকারি সংবাদমাধ্যমেও তাদের বক্তব্য তুলে ধরা হয়। ফলে তাদের বক্তব্য সারাদেশের মানুষ দেখতে ও জানতে পারেন। সংসদ থেকে তারা পদত্যাগ করলে জনগণের কাছে তাদের বক্তব্য আর যাবে না। বক্তব্য তুলে ধরতে সংসদের মতো প্লাটফর্ম বিএনপি হারাবে। এতে তাদেরই ক্ষতি হবে। মূল ক্ষতিটা হবে সেই জনগণের, যারা ভোট দিয়ে তাদেরকে সংসদে পাঠিয়েছিলেন। তাদেরকে বঞ্চিত করবে বিএনপি।