‘দেশে বড় কিছু ঘটলে কূটনীতিকদের জানানো নতুন কিছু নয়’

নিজস্ব প্রতিবেদক

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম
ফাইল ছবি

কূটনীতিকদের সরকারের পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়ার বিষয় নতুন কিছু নয় বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে বা রাজধানীতে বড় কিছু ঘটলে আমরা সবাইকে জানিয়ে রাখি। এটা কূটনৈতিক প্র্যাকটিসের মধ্যে পড়ে। অতীতেও এটা হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৩;ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেসক্লাবে বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত নারী সাংবাদিকদের সংগঠন উইমেন জার্নালিস্ট নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে`ঘৃণাত্মক বক্তব্য এবং ভুল তথ্যের বিরুদ্ধে লড়াই করতে ডিজিটাল সাক্ষরতার গুরুত্ব’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

কূটনীতিকদের চিঠি দেওয়া প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবেশাহরিয়ার আলম বলেন, ‘বিএনপি যে প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে দেশে এবং বিদেশে এটা নিয়ে একাধিকবার বলেছি, তারা গত ১০ ডিসেম্বরকে বেছে নিয়েছে। কারণ ৯ ডিসেম্বর মেজর কিছু দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দেয়। তারা সেই তালিকা প্রকাশ করে। তাদের যে বিলিয়ন অব পাউন্ডের ইনভেস্টমেন্ট, লবিস্টরা তাদের নিশ্চিত করেছিল নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আসছে। এটাকে মিলিয়ে তারা সেলিব্রেটিং মুডে ১০ ডিসেম্বর বড় সমাবেশ করবে। দেশবাসী মনে করবে সরকারের সঙ্গে কোনো বন্ধু নেই। আপনারা দেখেছেন রাজশাহীর সমাবেশে দেখেছেন মাঠের চার ভাগের একভাগও ভরেনি।’

প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা যেটা গতকাল (সোমবার) করেছি আমাদের দেশের যেসব কূটনীতিক বাইরে আছেন তাদের চিঠি পাঠিয়েছি। এর কপি এখানেও দিয়েছি। কারণ তারা জানলেন।

শাহরিয়ার বলেন, ‘আমাদের কাছে তথ্য আছে, বিএনপি নেতারা ১০ তারিখ থেকে সকাল-বিকেল একেক একেক দূতাবাসে যাচ্ছে। তারা বিভিন্ন পর্যায়ের কূটনৈতিক বা কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেনদরবার করছে। আমরা কোনো ব্রিফিং বা অন্য কিছু করতে চাইনি। তাই আমরা ১০ তারিখ ও ৭ তারিখ কী ঘটেছিল সেটা জানিয়েছি।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘কোনোভাবেই বিএনপির সমাবেশ যাতে বিশৃঙ্খলা না হয় সেটা সরকার নিশ্চয়তা দেবে। যেটা অন্যান্য বিভাগের সমাবেশগুলোতে দেখেছেন। এই নিশ্চয়তা তাদের দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা সেটা না মেনে অতিউৎসাহী হয়ে ৭ ডিসেম্বর থেকে ব্যারিকেড দিয়ে রাস্তাঘাট দখল করার চেষ্টা করেছে। আপনারা দেখেছেন, বিএনপির অফিসে ১৬০ বস্তা চাল উদ্ধার করা হয়েছে। রাজনীতি তো আসলে পিকনিক নয়। বিএনপি অফিস থেকে খিচুড়ি রান্না হবে, সেটার জন্য জনগণের চলার পথ রোধ করা হবে, এটা রাজনীতি না। আর ১০ তারিখের সমাবেশের জন্য নয়াপল্টন অনুমোদন দেওয়ার আগে থেকেই তারা দখল করার পাঁয়তারা করেছে। দেখেছেন তাদের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তারা অনুমতি দিলেও যেতে চায়নি, কারণ এটা ডিসেম্বর মাস, তাই তাদের যে নৈতিক স্খলন আছে শুরু থেকে, সেটার সঙ্গে স্প্রিটটা মেলে না। এখানে এত মানুষের সমাগমও তারা করতে পারে না। তাদের সাধুবাদ জানাই, তারা গোলাপবাগ মাঠে গিয়ে সমাবেশ করেছে। এই বিষয়গুলো জানিয়েছি।’

শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও মির্জা আব্বাসের বিষয়ে চিঠিতে যেটা জানিয়েছি তা হলো- তাদের বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছে তার প্রাথমিক তদন্তের জন্য ডিবি অফিসে নেওয়া হয়েছে। পরে জিজ্ঞাসাবাদে যে তথ্য-উপাত্ত পাওয়া গেছে তার ভিত্তিতে মামলা হয়েছে, এদের গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। তারা আদালতে জামিনের জন্য আবেদন করেছেন। আদালত জামিনযোগ্য মনে করেননি। তাদের জামিন দেয়নি। এই স্বাভাবিক তথ্য আমরা জানিয়েছি।’

বিএনপির দেনদরবার ঠেকাতেই সরকার কূটনীতিকদের চিঠি লিখতে বাধ্য হয়েছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘না এখানে বাধ্য হওয়ার বিষয় নয়। বাংলাদেশ ও ঢাকায় নির্বাচনের আগে এমন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে কূটনীতিকদের কনফিউশন বা ভুল তথ্য থাকলে এটা করা হয়। কারণ আমরা আশঙ্কা করছি, বিএনপি গত সাত দিন ধরে যে পরিমাণ বৈঠক করেছে আমাদের উচিত তাদের তথ্যটা জানিয়ে দেওয়া। আমাদের জিজ্ঞেস করার আগেই। আমরা শুধু ফর ইউর ইনফরমেশন লিখে জানিয়ে দিয়েছি।’

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সামাজিক মাধ্যমগুলোতে ছড়ানো গুজব ও ঘৃণা থেকে আমরা মুক্ত নই। এসব প্রতিরোধে সরকার কয়েক বছর আগেই ডিজিটাল সিকিউরিটি প্রণয়ন করেছিল, তবে এই আইনের কিছু অপব্যবহারও হয়েছে। সরকার আইনটির অপব্যবহার রোধে সচেষ্ট, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে যাতে এই আইনের সঠিক ব্যবহার হয়।’

শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আমাদের জীবন নিয়ন্ত্রণ করছে, বিশ বছর আগে এটা কেউ বিশ্বাস করতে চাইত না। সামাজিক মাধ্যমে গুজব ও ঘৃণা প্রতিরোধের আইন নিয়ে অনেক বিতর্ক তৈরি হচ্ছে। অনেক সময়ই গণমাধ্যম ও মানবাধিকার কর্মীরা এ আইনের অপব্যবহারের শিকার হয়েছেন।’

সামাজিক মাধ্যমে গুজব ও ঘৃণা ছড়ানোর বিষয়টি বৈশ্বিক সমস্যায় পরিণত হয়েছে উল্লেখ করে বলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘শুধুমাত্র রাজশাহী-চট্টগ্রাম নয় নিউইয়র্ক-লন্ডনেও নারীরা সাইবার বুলিংয়ের অভিযোগ করছেন। ফলে গুজব-ঘৃণা প্রতিরোধে বিশ্বের প্রতিটি শহরেই আলোচনা হওয়া উচিত। এটি মোকাবিলায় আমাদের বৃহৎ বৈশ্বিক সহায়তা দরকার।’

তিনি আরও বলেন, ‘সংবাদ প্রকাশের আগে তা যাচাইয়ে গণমাধ্যমের কর্তাব্যক্তিদেরও সচেতন হতে হবে। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে যাওয়া কোন ঘটনা থেকে সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে তাদের দায়িত্বশীল হতে হবে। গুজব নিমূর্লের জন্য তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশে নিযুক্ত কানাডার রাষ্ট্রদূত লিলি নিকোলাস বলেন, ‘বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য সাইবার ব্যুলিং একটি সমস্যা। বাংলাদেশের মতো কানাডেতেও মহিলা রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিকরা অনলাইনে ঘৃণার সম্মুখীন হয়েছেন। সুতরাং বৈশ্বিকভাবেই এটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কানাডা-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন করেছি। কানাডায় আমরা ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র‍্যাটেজি চালু করেছি। এটি বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয় অঞ্চলের দেশগুলোর বাক-স্বাধীনতা বিকাশে ভূমিকা রাখবে। ‘

সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল। এছাড়াও বক্তব্য দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত কানাডার হাইকমিশনার লিলি নিকোলস, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমীন, ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত প্রমুখ।

শেয়ার করুন