১৯৭১ সালের এ দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তার দোসর রাজাকার আল-বদর, আল-শামস মিলিতভাবে পরিকল্পনা করে বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। বাঙালির চূড়ান্ত বিজয়ের মাত্র দুইদিন আগে ঘটে এক মর্মান্তিক হত্যাযজ্ঞ। তারা বেছে বেছে অসংখ্য শিক্ষাবিদ, গবেষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সাংবাদিক, কবি ও সাহিত্যিকদের হত্যা করে।
পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর নির্দেশনা ও মদদে এক শ্রেণির দালাল এ হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত করে। বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের নিশ্চিহ্ন করার এ নীলনকশা প্রণয়ন করে পূর্বপাকিস্তানের গভর্নরের সামরিক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী। পাকিস্তানি বাহিনীর অস্ত্র সহায়তা নিয়ে তাদের ছত্রচ্ছায়ায় আধাসামরিক বাহিনী আলবদরের ক্যাডাররা এ বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত করে। পরাজয় আসন্ন জেনে বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার লক্ষ্যে বুদ্ধিজীবী নিধনের এ পরিকল্পনা করে হানাদার বাহিনী।
তাই এ শোকের দিন স্মরণে প্রতি বছরের ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করে আসছে বাঙালি জাতি। এ দিনে স্মৃতিসৌধের রক্তে রাঙা লাল বেদিতে ফুল দিয়ে জাতির সূর্যসন্তানদের সম্মান জানানো হয়। যথাযোগ্য মর্যাদায় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস-২০২২ পালনের লক্ষ্যে প্রস্তুত রাজধানীর মোহাম্মদপুরের রায়েরবাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধ। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ একেবারে শেষপর্যায়ে।
সারাবছর অনেকটা অবহেলায় পড়ে থাকলেও ১৪ ডিসেম্বরের আগে সাজানো-গোছানো হয় শহীদ বুদ্ধিজীবী বধ্যভূমি। আগামীকাল ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ঘিরে এখন চলছে যাবতীয় সাজগোজ।
সরেজমিনে দেখা গেছে— রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে প্রবেশপথ ধুয়ে-মুছে সাফ করা হচ্ছে। কয়েকজন নারী-পুরুষ একসঙ্গে কাজ করছে। পরিষ্কার করছেন মূল বেদি ও বেদির আশপাশ। মঙ্গলবার (১৩ ডিসেম্বর) দিনগত রাত ১২টার দিকে বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে মোমবাতি প্রজ্বলন করা হবে।
দিবসটি ঘিরে এরই মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পুরো এলাকার নিরাপত্তায় ব্যবস্থা নিয়েছে। এলাকায় সীমিত করা হয়েছে চলাচল। স্মৃতিসৌধের ভেতরে শুধু নিয়োজিত শ্রমিক, সিটি করপোরেশনকর্মী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা থাকতে পারছেন।
গত তিন দিন ধরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করছেন শকিফুল ইসলাম। তিনি জানান, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসকে সামনে রেখে আমরা ৫০-৬০ জন শ্রমিক তিন দিন ধরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করছি। কাজ প্রায় শেষের দিকে।
নিরাপত্তার ব্যবস্থার বিষয়ে জানতে চাইলে মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ বলেন, ১৪ ডিসেম্বর ঘিরে রাজধানীর রায়েরবাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী বধ্যভূমিতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এখানে থানা পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশসহ বাহিনীর একাধিক ইউনিট কাজ করছে। রয়েছে বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থা।
ঢাকা উত্তর সিটির ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আসিফ আহমেদ বলেন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নসহ প্রায় সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। স্মৃতিসৌধের ভেতরে টেন্ডারের মাধ্যমে কাজ দিয়ে প্রতি বছর পরিষ্কার ও সাজ-সজ্জার কাজ করা হয়। স্মৃতিসৌধের বাইরে সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে পড়েছে। আমরা সবকাজ শেষ করেছি।