১৪ ডিসেম্বর; বাঙালির জাতীয় জীবনের একটি শোকাবহ দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে বাংলাদেশের ইতিহাসে সংযোজিত হয়েছিল এক কালো অধ্যায়। মহান মুক্তিযুদ্ধে আমাদের বিজয়ের প্রাক্কালে দখলদার পাকিস্তানি বাহিনী ও তার দোসররা পরাজয় নিশ্চিত জেনে মেতে ওঠে দেশের বুদ্ধিজীবী হত্যার মিশনে। প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে তারা হত্যা করে জাতির অনেক কৃতিসন্তানকে। এ হত্যাযজ্ঞের একটি বড় উদ্দেশ্য ছিল স্বাধীনতা লাভ করতে যাওয়া বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করে ফেলা। আমরা শহীদ বুদ্ধিজীবীসহ সব শহীদ মুক্তিযোদ্ধার আত্মার মাগফেরাত ও শান্তি কামনা করছি এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি জানাই গভীর সমবেদনা।
বর্বর পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দোসররা এ দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের নির্যাতন করেছিল পৈশাচিকভাবে। তাঁদের লাশের ক্ষতচিহ্নের কারণে অনেকেই তাদের প্রিয়জনের মৃতদেহ শনাক্ত পর্যন্ত করতে পারেননি। অনেকের লাশ খুঁজেও পাওয়া যায়নি। মূলতঃ বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড পৃথিবীর ইতিহাসে জঘন্যতম বর্বর একটি ঘটনা, যা বিশ্বব্যাপী শান্তিকামী মানুষকে স্তম্ভিত করেছিল। প্রাণ রক্ষার্থে অথবা প্রতিরোধ গড়ে তোলার প্রত্যয়ে অনেক বুদ্ধিজীবী দেশত্যাগ করায় তারা রেহাই পান ওই হত্যাযজ্ঞ থেকে। নয়তো তাদেরও ভোগ করতে হতো করুণ পরিণতি।
স্বস্তির বিষয়, দেরিতে হলেও যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদের প্রায় সবারই বিচারিক কার্যক্রম শেষ হয়েছে। বিচারের রায় কার্যকর করা হচ্ছে। এসব রায় বাস্তবায়নের মধ্য দিয়েই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মা শান্তি পাবে। দেশ ও জাতি কলঙ্কমুক্ত হবে।
আমরা মনে করি, দেশমাতৃকার জন্য শহিদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগ তখনই সার্থক হবে, যখন আমরা তাদের স্বপ্নের বাস্তবায়ন ঘটাতে পারব। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগ জাতি চিরদিন গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। দেশের জন্য আত্মোৎসর্গকারী শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি রইল আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা।